টপারের পিঠে চড়ে ট্রেইল ধরল রনি। বাকি দুজনও ওর পাশাপাশি চলল।
ওদের পিছনে পাথরের টুকরো ভরা মেঝের ওপর একজন রক্তাক্ত মানুষ, ককিয়ে উঠে নড়ার চেষ্টা করল। গড়িয়ে টেবিলের তলায় চলে যাওয়ায় ধসে পড়া ছাদের পাথরের নিচে সে থেঁতলে যায়নি। কানের কিছুটা উপরে একটা গভীর রক্তাক্ত খাজ। বিদ্যুৎ চমকাল। লারামির লাশটা বাইরে পড়ে আছে দেখতে পেল সে। যে এসব কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাকে সে খুন করবে।
১১. হ্যারিই প্রথম
হ্যারিই প্রথম জনি হিউবার্টকে দেখতে পেল। কয়েক মাইল দূরে থাকতেই সে একক আরোহীকে দেখতে পেয়েছে। ভেবেছিল ওটা হয়তো মাইক বা ড্যাশার হবে। আরোহীকে চিনতে পেরে টিলার ওপর থেকে ছুটে নামতে গিয়ে প্রায় পা ভাঙার জোগাড় করল। টেরি আর কিড লেকার বাঙ্কহাউসের সামনে অলস ভাবে সময় কাটাচ্ছে। রনির নির্দেশ অনুযায়ী আজ আর রেঞ্জে যায়নি কেউ।
পাহারা ছেড়ে হ্যারিকে টিলা থেকে ছুটে নামতে দেখে বেন কেসি ঘর ছেড়ে বাইরে বিরিয়ে এল। ওর সাথে ডক্টর হ্যাডলে, শেলী আর লিসাও বাইরে বেরোল।
ব্যাপার কি হ্যারি? প্রশ্ন করল বেন।
হিউবার্ট হাঁপাচ্ছে হ্যারি। দু’মিনিটের মধ্যেই এখানে পৌঁছে যাবে।
হয়তো সে আপোষ করতে চায়, বলল বেন। তারপর রাইডারদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে সে আবার বলল, যা বলার, আমি বলব।
বস, আপত্তি জানাল কিড, হয়তো সে আমার খোঁজে এসেছে। ওকে আমার হাতে ছেড়ে দাও।
না। বেন কেসির স্বরে কতৃত্বের ছাপ। আমি নিজেই এটা হ্যাণ্ড করব।
প্রচণ্ড রাগে জনির সারা শরীর জ্বলছে। ওর লোকজনের কি হয়েছে তার কিছুই সে জানে না। রাগের মার্থায় এখন সে কেয়ারও করে না। সূর্যের তাপে চোখের কিনারাগুলো লাল হয়ে উঠেছে। ধুলোর পাতলা পরতের নিচে মুখটা হিংস্র। রকিঙ কের লোকজনই যে তার র্যাঞ্চ থেকে খাবার, গোলা-বারুদ আর ঘোড়া সরিয়েছে, এতে তার মনে কোন সন্দেহ নেই। রাগে ফুসতে-ফুঁসতে রকিঙ কের রাঞ্চে এসে পৌঁছল হিউবার্ট।
আশা করেছিল র্যাঞ্চটা জনশূন্য থাকবে। কিংবা বড়জোর বেন আর তার বোন দুটো থাকতে পারে। ওরা তাকে বাধা দিতে সাহস পাবে না। কিন্তু দেখল উঠানে টেরি, হ্যারি, স্টি লেকার রয়েছে-বাঙ্কহাউসের দরজায় রজারকে দেখা যাচ্ছে। ওদের থেকে অল্প দূরেই রয়েছে দুটো মেয়ে, ডাক্তার আর বেন কেসি। কেসি ওর দিকে এক-পা এগিয়ে এল।
হাওডি, জনি? স্পষ্ট স্বরে বলল সে। ঘোড়া থেকে নামো। নিশ্চয়। সন্ধি করতে এসেছ তুমি?
ওর কথায় ষাঁড়ের সামনে লাল কাপড় নাড়ার মতই প্রতিক্রিয়া হলো। সন্ধি? তোমার হাড়ের সবক’টা সন্ধি আমি ছুটিয়ে দেব ইডিআ্যাট!
স্থির দাঁড়িয়ে আছে বেন। চেহারাটা সংযত, গম্ভীর। কেসি আগে কখনও এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেনি। ঠোঁট চাটল টেরি। সে এখানকার সবথেকে পুরানো কর্মচারী। মনে মনে সে জানে বস্ এটা সামলাতে পারবে না। এগিয়ে গিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফাইটটা নিজের কাঁধে তুলে নিতে তার খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু তাতে কেসির তীক্ষ্ণ অহঙ্কার বোধ ক্ষুণ্ণ হবে-এটা সে মোটেও পছন্দ করবে না। র্যাঞ্চের সবাই একই কথা ভাবছে জেনে সে ফিসফিস করে বলল, এগিও না। এটা ওর ফাইট।
বেন শান্ত স্বরে বলল, হিউবার্ট, বোকামি কোরো না। আমরা আগেও বলেছি আমাদের দুজনের পাশাপাশি থাকার মত যথেষ্ট রেঞ্জ এখানে রয়েছে। কেবল তুমি বুজের ওপারে থাকলেই আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ হবে না। বাবা মারা গেছে বলেই ভেব না তোমরা আমাদের ওপর চড়াও হতে পারবে।
শান্তিপূর্ণ অবস্থায় বাস করা ছাড়া তোমার আর কোন পথ নেই। তোমার লোকজন এখন হেঁটে মরুভূমি পার হচ্ছে। খাবার আর পানির অভাবে ওদের এখন খুব খারাপ অবস্থা। তোমার র্যাঞ্চে কোন ঘোড়া নেই–অন্য স্টেশনগুলোতেও নেই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা কর্ন প্যাচে গিয়ে সব জ্বালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আসব।
এটাই আমার শেষ কথা। তুমি এখনই শান্তিচুক্তি করে পাহাড়ের ওপাশে থাকতে পারো, নইলে আমরা গিয়ে থ্রী এইচ পুড়িয়ে দেব। তারপর তোমার রাইডারদের পায়ে হেঁটেই দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য। করব–সাথে তোমাকেও!
এত দ্রুত ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল হিউবার্ট যে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। বেনের মুখোমুখি হলো সে। তার আগে তোমাকে আমি জাহান্নামে পাঠিয়ে ছাড়ব! গর্জে উঠল জনি।
আমি দুঃখিত, হিউবার্ট। বেন এখনও শান্ত। তুমি যদি ওই পথই বেছে নিতে চাও, তবে তাই হোক।
কোন যুক্তিই হিউবার্ট মানবে না। জীবনে কখনও সে পরাজয় স্বীকার করেনি। ওর চোখে এখন খুনের নেশা। পিস্তল বের করার জন্যে ঝট করে হাত নামাল সে।
টেরির কাছে দৃশ্যটা কচ্ছপ-গতিতে এগোচ্ছে। মানস চোখে বেনের নিশ্চিত মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে সে। দেখল, জনির হাতে পিস্তল উঠে এল–ঠিক ফাস্ট ড্র বলা যায় না, তবে কেসির থেকে অনেক দ্রুত। বেনও পিস্তল বের করেছে। একটা তীক্ষ্ণ গুলির আওয়াজ শুনতে পেল টেরি। আশ্চর্য! যুবক র্যাঞ্চার এখনও দাড়িয়ে!
ধীরে পিস্তল উঁচিয়ে লক্ষ্য স্থির করছে বেন। টারগেট প্র্যাকটিসের ভঙ্গিতে কাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিউবার্ট আবার গুলি করল, এবং আবার। এবার বেন কেসি গুলি করল।
জনির হাঁটু ধীরে ভাঁজ হয়ে মাটি ছুঁলো। তারপর মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ল সে। উপস্থিত সবাই বুঝছে লোকটা মারা গেছে। ফেকাসে মুখে ধীরে পিস্তল নামাল কেসি।