এখন ক্যানিয়নের উপর চলে এসেছে মেঘ। ভিতরে কেউ একটা তেলের বাতি জ্বালাল। দেয়ালের দিকে এগোতে যাচ্ছে, দেখল সব ক’টা ঘোড়া কান খাড়া করে সদর দরজার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওত পেতে চিলের বাঁটে হাত রেখে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে রনি।
একটু নড়াচড়া দেখা গেল। পরক্ষণেই অদৃশ্য হলো। বুঝল আউটার ক্যানিয়ন থেকে কেউ এসে সন্তর্পণে লুকাল। সে জানে এখানে তার কোন বন্ধু নেই। তবে কি ফিনলে হার্ট এই গোপন আজ্ঞা খুঁজে পেয়েছে? সেটার সম্ভাবনা খুব কম। অর্থাৎ লোকটা তার শত্রু। সে জানে রনি এখানে আছে।
দেয়াল ঘুরে পিস্তল হাতে এগিয়ে আসছে ডাক বেইলি। এখনও বেশ দূরে থাকলেও লোকটা রনির দিকেই আসছে। করালের কোনায় ওত পেতে বসে পরিস্থিতিটা নতুন করে বিচার করে দেখল সে। সম্ভবত গোলাগুলি করে এখান থেকে ও নিরাপদেই সরে পড়তে পারবে। কিন্তু একবার যা প্ল্যান করেছে সেটা থেকে সহজে সরে যাওয়া ওর স্বভাব নয়।
ক্লিফের ওপর কিছুটা বেয়ে উঠে লাফিয়ে দালানের ভাঙা কোনাটা ধরে ফেলল রনি। নিজেকে টেনে তুলে একতালার ছাদে সটান শুয়ে পড়ল। বেইলি বা লারামি কেউই ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে ওকে দেখতে পায়নি। ওরা দুজন দু’দিক থেকে আসছিল।
লোকটা গেল কোথায়?
অবাক কাণ্ড! সত্যি বলছি, এখানেই আমি ওকে দেখেছি! কোথায় যেতে পারে সে?
কিছুক্ষণ কান পেতে শুনে বুঝল, বাইরে দু’জন লোক কথা বলছে। দেয়াল হাতড়ে এগোল রনি। নিচে থেকে একচিলতে আলো উপরে আসছে। ওদিকে গিয়ে দেখল এvা চোরা দরজার ফাঁক দিয়েই আলোটা আসছে। ফাঁক দিয়ে চেয়ে বুঝ ওনি থেকে কোন সিঁড়ি নিচে নামেনি। অদূরেই একটা গর্ত হয়েছে দেয়ালে। ওখান দিয়ে আলো আসছে। সেইসাথে নিচে থেকে মৃদু কথাবার্তার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জেরি সমার্স কথা বলছিল। ওখানে নেই? মনে হচ্ছে ডাক নার্ভাস হয়ে উল্টো-পাল্টা দেখছে।
যাক, সে এই জায়গাটা চেনে। সন্দেহ নেই আমার খোঁজে ও আসবে। ওটা কি?
কোনটা?
মনে হলো কি যেন একটা শুনলাম।
লারামি উঠে দাঁড়াল। ওই দরজা ছাড়া এখানে ঢোকার আর কোন পথ আছে?
আমার জানামতে নেই। তবে ওই চোরা দরজার পাশে দেয়ালে একটা গর্ত আছে। কেউ যদি ছাদে ওঠে-
দুজনেই একসাথ ওদিকে ফিরল। অন্ধকারে চৌকাঠের আড়ালে রনি দাঁড়িয়ে আছে ডান হাতটা কনুইয়ের কাছে একটু বাঁকা হয়ে তৈরি।
সাহস হারিয়ে আতঙ্কিত বোধ করছে জেরি। এই লোকটা তাকে হত্যা করার জন্যেই এখানে এসেছে। তার জটিল আর সুষ্ঠু প্ল্যান এড়িয়ে সে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। নিচু স্বরে একটা চিৎকার করে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল জেরি।
রনির বাঁকা হাতটা বিদ্যুৎ বেগে সক্রিয় হলো। ওর পিস্তলের মুখে আগুন দেখা গেল। সমার্স পিস্তল উঁচানোর পথেই মাথার পাশে একটা প্রচণ্ড আঘাতে সে মেঝের ওপর পড়ল। ওর বুলেটটা ছাদে লাগল।
লারামির পিস্তলটা লাফিয়ে হাতে উঠে এসেছে। ওর গুলিটা চৌকাঠে বিধল। পাল্টা গুলি করল ড্যাশার।
তারপর দোতালার মেঝেটা দুলে উঠল। একটা দেয়ালে ফাটল ধরল। পরক্ষণেই মেঝেটা ধসে পড়ল। বাইরে থেকে ভয়ের একটা বুনো চিৎকার শোনা গেল। রনি লাফিয়ে দরজার দিকে এগোল। বাইরে বেরিয়ে লম্বা একটা বিজলির আলোয় দেখল করাতের দাঁতের মত পাহাড়গুলো পরস্পারের দিকে সরে আসছে। পাথরের সাথে পাথর ঘষা খেয়ে ভয়ঙ্কর আওয়াজ করছে। পরিচিত বেরোবার পথের দিকে ছুটল সে।
পর মুহূর্তে একজন আরোহী ঘোড়া ছুটিয়ে এসে রনির সামনে আড়াআড়ি ভাবে থেমে দাড়াল। পিস্তল উঁচাল। বিজলি চমকাল, ড্যাশার দেখল লোকটা হার্ট।
ফিনলে! সে চিৎকার করল। আমি ড্যাশার! জলদি এখান থেকে বেরিয়ে পড়ো! পথটা যেকোন সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে!
ঘোড়াটাকে কাছে নিয়ে এল হার্ট। ওঠো! চেঁচিয়ে বলল সে। আমার পিছনে!
বিধ্বস্ত দালান থেকে ছুটে খোলা জায়গায় বেরিয়ে এল লারামি। রনিকে ঘোড়ার পিঠে উঠতে দেখে পিছলে থেমে দাঁড়িয়ে পিস্তল তুলল। ফিনলে হার্টের লম্বা ব্যারেলের পিস্তলটা উঠে এসেছে ওর হাতে। প্রায় একই সাথে গর্জে উঠল দুটোই। লারামি এক-পা পিছিয়ে আধ-পাক ঘুরে শক্ত মাটির ওপর আছড়ে পড়ল।
পরক্ষণেই বেরোবার মুখটার দিকে ঘোড়া ছুটাল হার্ট। সামনে একজন আরোহীকে আসতে দেখা গেল। রনি? শটি মাইক হাঁকল।
বেরিয়ে পড়ো! চিৎকার করে নির্দেশ দিল ড্যাশার। জলদি!
জোর বৃষ্টি নেমেছে। ভূমিকম্প এখনও থামেনি। সাময়িক বিরতির পর এক বন্ধনে পর আবার চারপাশ কেঁপে উঠল। বড় বড় পাথর গড়িয়ে পড়ল নিচে–কিন্তু ততক্ষণে ওরা খোলা জায়গায় বেরিয়ে এসেছে।
ঘোড়া ঘোরাও, সুপারিশ করল রনি। রিজের অন্যপাশে আমার ঘোড়াটা জুনিপারের সাথে বাঁধা আছে।
জেরি কি শেষ? হঠাৎ প্রশ্ন করল হার্ট।
মনে হয়। ভূমিকম্পটা সব ওলটপালট করে দিল। আমার গুলিতে সে আছড়ে মেঝের ওপর পড়ার সাথে সাথে লারামি আমার দিকে গুলি চালাল।
ওকে আমি খতম করেছি-ডেড সেন্টার। তোমার ভাইকে সমার্সই খুন করেছিল। আঁচ করেছিলাম। সে অথবা অ্যাডাম। অ্যাডামও এর সাথে জড়িত আছে।
আমার ধারণা, জবাব দিল ফিনলে, সোনার চালান কখন যাচ্ছে, খবরটা অ্যাডামই ওদের জানাত। তবে এব্যাপারে আমি নিশ্চিত না।
তোমার সাহায্য ছাড়া ওই জায়গা খুঁজে পাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল, হঠাৎ বলে উঠল হার্ট। পোকার গ্যাপ থেকে জেরিকে ট্র্যাক করছিলাম আমি, কিন্তু ওর ট্রেইল হারালাম। পরে তোমার ট্র্যাক দেখতে পেয়ে অনুসরণ করলাম। সেটাও হারালাম। নিরুপায় হয়ে তুমি যেদিকে গেছ মনে হলো, অনুমান করে সেদিকে এগিয়ে আবার জেরির ট্র্যাক দেখতে পেলাম।