ওটাই কি যথেষ্ট? নিশ্চয় তাই। পুরো সোনাই অ্যাডাম চায়। সবটাই।
কাঁধ উঁচাল লারামি। ওকে কখনও আমি বিশ্বাস করিনি।
অল্পক্ষণের মধ্যেই ড্যাশারের ব্যাপারটা মিটবে। এরপর অ্যাডামের সাথে আমি বোঝাপড়া করব। এভাবে সব ফাস না হলে হয়তো ওকে আমরা কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু এখন আর তা হয় না। সোনা নিয়ে এখান থেকে আমরা সরে পড়ব। তারপর সোনা বিক্রি করে অন্য কোথাও রাজার হালে কাটাব।
জনি হিউবার্টের কি হলো?
বলতে পারি না। ওর ঘোড়াটা কর্ন প্যাচে মরে পড়ে আছে। ওদিকে ওয়াটসন আর হেনরি দু’জনেই গান ডুয়েলে মরেছে। কাঁধ উঁচাল জেরি। ভাবিনি হেনরির ভিতর এতও ছিল।
না। লারামি তার চেয়ারে একটু নড়ে বসল। অন্যমনস্ক হয়ে খালি টেবিল আর বোতলটার দিকে চেয়ে আছে সে। এটাই কি এই সবের পরিণতি? লুকিয়ে থাকা, পালিয়ে বেড়ানো, একটা ভাল মানুষকে ফাঁদে ফেলার জন্য অপেক্ষা করা? মানুষকে এসব ভাবতে বাধ্য করে, সে বলে উঠল হঠাৎ। বিল ওয়াটসন শক্ত লোক ছিল। মানুষের জন্যে সে ছিল আতঙ্ক আর বিভীষিকার কারণ। কিন্তু কি হলো? কুপির মত দপ করে নিভে গেল সে। বিল যদি এত সহজে মরতে পারে, যেকেউ পারে।
নীরবে বসে আছে ওরা। দূর থেকে মেঘের গর্জন ভেসে এল। দুজনেই মুখ তুলে তাকাল। বৃষ্টি! ভালই হলো, পৃথিবীটা এবার ঠাণ্ডা হবে।
সিগারেট ধরাল সমার্স। তারপর আগুনের ধারে গিয়ে ওটাকে উস্কে কিছু কাঠ চাপিয়ে কফি বসাল।
ড্যাশারের ডীলটা কি? আমরা ওকে ভিতরে ঢুকতে দেব? প্রশ্ন করল লারামি।
নিশ্চয়। ওকে আমরা সামনে থেকে আক্রমণ করব, আর পিছনে থাকবে ডাক বেইলি। মাঝখানে খোলা জায়গায় ফাঁদে পড়ে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সে।
বেইলি বাইরে পথটার ওপর নজর রেখেছে বটে, কিন্তু রনি সেই আগের পথ ব্যবহার করে ক্যানিয়নে ঢুকে পড়েছে। বিকেল হয়ে আসছে। সেভেন পাইনসের ওপর স্তরে-স্তরে মেঘ জমে আকাশটা কালো হয়ে আসছে। ক্যানিয়নের নিচে পৌঁছে রনি আর কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। এখন ওর উদ্দেশ্য একটাই–জেমস হার্টের খুনের জন্যে যারা দায়ী তাদের শুটিঙের আওতায় পাওয়া। ওরা আর কি করেছে তা সে মোটেও বিবেচনা করছে না। একজন আহত আর অসহায় মানুষকে ওভাবে খুন করার মত জঘন্য অপরাধ আর দুটো নেই।
দেয়ালের কাছঘেঁষে একটা পাথরের আড়াল থেকে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করল ড্যাশার। পাথরের দালানটা থেকে ধোঁয়া উঠছে। বুঝল বাইরের দিকের ক্যানিয়নে, যেখানে ট্রেসারের সাথে ফাইট হয়েছিল, কেবল সেখানেই নয়, এখানেও লোক আছে।
এখানে প্রচুর আড়াল রয়েছে। আড়ালকে পুরো কাজে লাগিয়ে ধীরে পাথরের দালানের দিকে এগোল সে। ভিতরের দুজনই দক্ষ পিস্তলবাজ। যেকোনজন হয়তো তার সমকক্ষ হতে পারে। দু’জনে মিলে তারচেয়ে অনেক শক্তিশালী, এতে সন্দেহ নেই। এসব লোকের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নেয়া বোকামি। একটা ভুল করলে সেটাই হবে তার শেষ ভুল।
আবার মেঘের গর্জন শোনা গেল, এবার আরও কাছে। শুনে একটু থামল রনি। এতে তার অভিযানে কতটা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে তা সতর্ক ভাবে যাচাই করে নিয়ে আবার এগোল।
আধ মাইল দূরে প্রবেশ পথের কাছে গার্ড দেয়া ছেড়ে ফিরে আসার জন্যে রওনা হলো বেইলি। ওদিকটা পুরো কালো হয়ে গেছে। কালো মেঘের ভিতর থেকে উজ্জ্বল রেখায় বাজ পড়ছে। ঝোড়ো মেঘ প্রায় তার মাথার উপর পৌঁছে গেছে। বুঝতে পারছে তাকে ভিজতে হবে। এত উঁচুতে যেকোন সময়ে তার ওপর বাজ পড়তে পারে। দ্রুত নামতে নামতে ক্যানিয়নের পাথরের দালানটার দিকে চেয়ে সে চমকে উঠল।
কে যেন ওটার দেয়াল ঘেঁষে সন্তর্পণে এগোচ্ছে!
কি ঘটেছে বুঝতে পেরে ওর বুকের ভিতরটা ধড়াস করে লাফিয়ে উঠল। ড্যাশার ক্যানিয়নে ঢুকে পড়েছে।
বোঝার সঙ্গে সঙ্গে সে নিচে নামার জন্যে ছুটল। হঠাৎ প্রবেশ পথের মুখে একজন আরোহীকে দেখতে পেল ডাক। লোকটা তারই দিকে চেয়ে আছে। আরোহী শর্টি মাইক। রনির ট্রেইল হারিয়ে সেটার খোঁজে সে হেলে-পড়া পাথরের গোলক-ধাঁধায় ঘুরছিল।
বেইলি ক্যানিয়নের নিচে পৌঁছেই পাথরের দালানটার দিকে ছুটল। এবার ওরা ড্যাশারকে বাগে পেয়েছে। ওর বাঁচার কোন পথ নেই।
পাথরের দালানের দরজা ঠেলে খুলে সে চিৎকার করল, ড্যাশার ভিতরে! হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল বেইলি। কি করে ঢুকল জানি না, কিন্তু সে ভিতরে! আমি ওকে দেখেছি!
একটা বাঙ্কে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছিল লারামি। ওটা নামিয়ে রেখে, উঠে পিস্তলের বেল্টটা পরে নিল সে। বুকের ভিতরটা ধড়াস-ধড়াস করছে-মুখের ভিতরটা শুকিয়ে এসেছে।
ক্ষছছ তাদের পক্ষে হলেও, সে জানে কার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছে। স্বস্তি বোধ করছে না ও।
রনি গর্তটার পিছনে করালটার কাছে পৌঁছেছে। কোন ঘোড়ার পিঠেই জিন নেই। জেরি সমার্সের হয় আউফিটে ফেরার ইচ্ছে নেই, কিংবা তার ঘোড়াটা আউটার করালে।
পাথরের দালানটা দোতালা। কিন্তু উপরের তালার পুরো সংস্থা করা হয়নি। ক্লিফের ধারেই ওটার পিছনের দেয়াল। কয়েকটা পাইন আর ফার গাছ দালান ঘেঁষেই উঠেছে। আরও তিন-চারটে করালের কাছে।
দালানের ভিতরে ঢোকার সবথেকে সহজ উপায় দোতালার ভাঙ কোনা দিয়ে। দালানটা স্যাওস্টোনের তৈরি। যদি একতালার ছাদটাও পাথরের তৈরি হয় তবে হয়তো নিঃশব্দে নিচের লোকগুলোর অজান্তে সে ওটা পার হতে পারবে।