তোমার কাছে কি মনে হচ্ছে, রবার্ট? বক্তা একজন পুষ্ট, লম্বা মানুষ, চওড়া লাল মুখ ওর। যদি আত্মহত্যা না হয় তবে এটা কি? পিস্তলটাও ওর হাতেই রয়েছে।
রবার্ট চতুর চোখে রনির দিকে চেয়ে চিন্তিত ভাবে নিজের গোঁফ টানল। তুমি যখন যাও তখন সে জীবিত ছিল? পিস্তলটা কি ওর হাতের কাছে ছিল?
ওটা আমিই ওর হাতে তুলে দিই। আমি যেতে চাইনি, কিন্তু ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল ওর। আমার বিশ্বাস সে বাচত।
ডাক্তার রবার্ট ওর দেহটা পরীক্ষা করে মুখ তুলে চাইলেন। কথাটা সত্যি। ক্ষতগুলো বেশ সুস্থ অবস্থাতেই আছে। ওর জখমের ওপর ওটা কিসের পটি?
প্ৰিকলি-পেয়ার, ইণ্ডিয়ানরা ওটা ক্ষতের উন্নতির জন্যে ব্যবহার করে।
দেখো! লাল মুখের লোকটা পিস্তলের অবস্থান দেখিয়ে বলল, এটা যদি আত্মহত্যা না হয় তবে এটা কি?
রনির রাগ তেতে উঠছে। চোখ তুলে চাইল সে-কঠিন শীতল চোখ। আমি যখন যাই তখন লোকটা জীবিত ছিল, পুনরায় বলল সে। ওর জখম কঠিন হলেও ও সামলে উঠতে শুরু করেছিল। ওর মধ্যে, কঠিন সুরে কথাগুলো বলল সে, বিন্দুমাত্র কাপুরুষতার লক্ষণও ছিল না। সে কিছুতেই আত্মহত্যা করেনি।
নিশ্চয় সে আবার জ্ঞান-হারিয়েছিল, কেউ এখানে সেই সুযোগে ঢুকে ওর পিস্তল দিয়েই ওকে খুন করে পিস্তলটা ওর হাতেই ধরিয়ে দিয়ে গেছে। দেখে ওর পিস্তলটা কোথায় আছে। নিজেকে গুলি করলে পিস্তলটা ওর হাত থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ত!
ডাক্তার হ্যাডলে মাথা ঝাঁকালেন। ভদ্রলোক ঠিকই বলেছে, গুলির পিছু-ধাক্কায় ওটা দূরে ছিটকে পড়ত। তাছাড়া এত কাছ থেকে গুলি করলে কপালে বারুদের পোড়া দাগ থাকত। কিন্তু চামড়ার ওপর আমি তেমন কোন দাগই দেখতে পাচ্ছি না।
লাল মুখো লোকটা রনির ওপর নজর রেখেছিল। ধীরে ওর নজর কালো সমব্রেরো, শার্ট, বুটের ভিতরে ঢুকানো প্যান্ট আর উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা পিস্তল দুটোর উপর পড়ল। এতে তোমার পরিস্থিতি কিছুটা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তুমিই ওকে শেষ জীবিত দেখেছ।
না, বরফ শীতল চোখে ওর দিকে চাইল রনি। খুনীই ওকে শেষ দেখেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে ট্রেইলের পিছন দিকটা দেখাল সে। ওখানে আরও একজন আছে। ফ্রক কোট পরা বিশাল দেহ মানুষ।
রনি মানুষগুলোকে চিনতে শুরু করেছে এখন। যে লোকটা বাকবোর্ড চালাচ্ছিল তার নাম হ্যারিংটন। মাইনের সুপার আর আংশিক মালিক। ক্ষতির ভারটা ওর ঘাড়েই পড়বে। লাল মুখো মানুষটার নাম অ্যাডাম। ঘোড়া বেচা-কেনার ব্যবসা ওর। একটা লিভারি আস্তাবলও আছে। তিরিশ মাইল দূরে মাইনে সে গরুও সরবরাহ করে। আরেকজন হলুদ চোখের গাল বসা লোক, উরুর সাথে বাধা ওর পিস্তল, নাম রেড। ফ্ৰককোট পরা মৃত লোকটার খোঁজে গিয়েছিল সে।
ওর সবকিছু লুটে নিয়েছে কেউ, জানাল রেড।
তবে কি আশা করেছিলে তুমি? শুষ্ক স্বরে প্রশ্ন করল রবার্ট। এটা একটা ডাকাতি।
রনি কোন মন্তব্য করল না। জেমস হার্টের কপালে যা ঘটেছে, এরপর নিরিবিলি কাগজ-পত্রগুলো নিজে পরীক্ষা না করে, ওগুলো কারো কাছে হস্তান্তর করতে সে রাজি নয়।
শহর থেকে আরও একজন লোক এসে হাজির হলো। সুগঠিত গড়ন, প্রিয়দর্শন, চল্লিশ মত বয়স। কি খবর, কেসি? মৃত লোকটার দিকে মাথা হেলিয়ে ইঙ্গিত করল রবার্ট। কেউ ওকে আগে দেখেছ?
আমি দেখেছি। সিগারেট তৈরি করার জন্যে কাগজের আঠার ওপর জিভ ঠেকাল রেড। লোকটার নাম সায়মন। নামকরা একজন গানফাইটার।
সায়মন! লাশটার দিকে চেয়ে বলল বেন কেসি। মারা গেছে! কে করল এই কাজ?
সেটা জানলে অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলত, মন্তব্য করল রবার্ট। মনে হচ্ছে কাজটা যে করেছে সে তাকে পুরো সুযোগই দিয়েছিল, তারপর ওকে ছাদা করে দিয়েছে।
মাথায় পিস্তলের নল ঠেকিয়ে বাকি কাজটা শেষ করেছে, বলল রনি। মনে হচ্ছে ডাকাতের দলটা কোন সাক্ষীই রাখতে চায় না। ভয় পাচ্ছে হয়তো লোকজন ওদের চিনে ফেলবে।
কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। ডাক্তার হ্যাডলে লাশটাকে পরীক্ষা করে উঠে দাঁড়ালেন। এখানে আমার আর কিছুই করবার নেই, বলল ডাক্তার। তোমার কি মত হ্যারিংটন?
লাশগুলো নিয়ে সেভেন পাইনসের পথে রওনা হয়ে যাওয়াই ভাল, বলল মাইন সুপার।
রনির দিকে ফিরল রবার্ট। তুমি থাকছ তো? আগামীকালের বিচার আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তোমার উপস্থিতি জরুরী।
আমি আছি। ওখানেই যাচ্ছি আমি।
সেভেন পাইনসের পথে আর বিশেষ কোন কথা হলো না। সবাই ওই ডাকাতের দল সম্পর্কে বেশ বিব্রত। গত কয়েকটা স্টেজ ডাকাতিতে ওরা একশো হাজার ডলারেরও বেশি সোনা লুটেছে। সবই ভারি বার। ওগুলো কোথায় খালাস করা যেতে পারে এনিয়ে বেশ কিছু আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিক্রির সম্ভাব্য সব কয়টা জায়গাকেই খবর দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
রনিকে খুঁটিয়ে লক্ষ করছিল হ্যারিংটন। তুমি যেভাবে পিস্তল ঝুলিয়েছ তাতে মনে হয় ওগুলোর ব্যবহার তুমি জানো। জেমসের জায়গায় আমার একজন লোক দরকার।
শব্দ করে হাসল রনি। যা শুনলাম তাতে মনে হয় না ওটা খুব জনপ্রিয় কাজ। শুনেছি শটগান মেসেঞ্জাররা নাকি খুব দ্রুত পটল তোলে।
শান্তভাবে মাথা ঝাঁকাল হ্যারিংটন। তা ঠিক। আমি অস্বীকার করছি না। আমি এমন মানুষ চাই যে সহজে ভয় পায় না। জেমসের গোলাগুলির হাত ভালই ছিল। আমার ধারণা ছিল, এ-সব ডাকাতির পিছনে কারা আছে, তা সে আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু বেশি কথা বলার অভ্যাস ছিল না ওর। এখন তো সে আর কোন কথাই বলবে না।