সব সময়ে?
তিন মাসে এটা চতুর্থবার…এটা ছিল আমার প্রথম ট্রিপ। আগের গার্ডগুলো সবাই মারা পড়েছে। একটু ক্ষীণ হাসি দেখা দিল আহত লোকটার মুখে। যারা এই কাজ করছে তারা শটগান মেসেঞ্জারদের মোটেও পছন্দ করে না।
শুকনো মাংস আর ময়দা দিয়ে ব্রথ তৈরি করছিল রনি। এখন সেটা গরম হয়েছে। আহত লোকটাকে একটু একটু করে খাওয়াল সে। আশা করছে এতে লোকটা একটু বাড়তি শক্তি পাবে। অনেক রক্ত হারিয়েছে
তোমার নামটা কি, বন্ধু? আমার জানা দরকার।
যুবক রনির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। অবস্থা তাহলে এত খারাপ? ভাল, আমার নাম জেমস হার্ট। আমার জন্যে কেউ দুঃখ করবে বলে মনে হয় না। তবে তুমি আমার ভাইকে একটা খবর দিতে পারো। সে রবার্টস মাউনটিনসে থাকে। ওর নাম ফিনলে হার্ট।
বৃষ্টি কমতে কমতে, এখন শুধু সরু ধারায় পানি বয়ে যাওয়ার শব্দ, আর গাছ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। আহত লোকটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওর টেনে-টেনে শ্বাস নেয়া দেখে রনির দুশ্চিন্তা হচ্ছে। স্টেজটা সেভেন পাইনসে পৌঁছে থাকলে ওখান থেকে লোকজন ডাকাতিতে যারা চোট পেয়েছে তাদের খুঁজতে আসবে। কিন্তু ওরা হয়তো দুজনই মারা পড়েছে বলে ধরে নিতে পারে। টপারের পিঠে জিন চাপিয়ে শক্ত করে পেটি এটে দিল রনি। সাহায্য আসার অপেক্ষায় বসে থেকে, জেমসকে একা রেখে, তাকেই যেতে হবে।
জেমস যখন আবার চোখ খুলল তখন আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। প্রথমেই সে খেয়াল করল সাদা ঘোড়াটার ওপর জিন আঁটা হয়েছে। রনির দিকে চেয়ে সে ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলল, আমার অবস্থা খুব সুবিধের মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে খারাপের দিকেই যাচ্ছি।
হ্যাঁ। আহত লোকটাকে তুলে একটু আরামদায়ক ভাবে বসাল সে। সেভেন পাইনসটা কত দূরে? তোমার একজন ডাক্তার দরকার।
বারো মাইল। ডাক্তার হ্যাডলের খোঁজ কোরো লোকটা ভাল।
ক্ষতগুলো আবার ধুয়ে দিল রনি। তারপর প্রিকলি-পেয়ারের পাতা দিয়ে বেঁধে দিল। ক্ষতগুলো এখন আর ততটা খারাপ দেখাচ্ছে না।
আমি ডাক্তারকে আনতে যাচ্ছি। তুমি ঠিক থাকবে তো? জেমসের চোখে হাসিমাখা বিদ্রুপের ছায়া পড়ল। মনে হয় না এই অবস্থায় কোথাও গিয়ে আমার হাত-পা ভাঙার সম্ভবনা আছে। আর ডাক্তার ছাড়া আমার ভাল হওয়ার সুযোগ কম। আশাপূর্ণ দৃষ্টিতে রনির দিকে চেয়ে সে বলল, তোমাকে যেতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে, বন্ধু।
আহত লোকটার একটা পিস্তল বের করে ওর হাতে দিয়ে সে বলল, সাবধানের মার নেই। তুমি কিছু জানো মনে করে ওরা হয়তো আবার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা হচ্ছে ওরা আর ফিরবে না। তোমার ভয়ের কিছু নেই।
ট্রেইল ধরে দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রনি। টপার দৌড়াতে ভালবাসে। এখন সে দৌড়াচ্ছে। চার মাইলের বেশি এগোয়নি-ট্রেইলের ওপর দূরে একটা কালো কি যেন ওর চোখে পড়ল। দ্রুত ওটা একটা বাকবোর্ডের রূপ নিল। পিছনে ছয়জন আরোহী। বাকবোর্ডে দুজন আরোহী, শক্ত গড়নের একজন কালো চুল আর কালো গোঁফের অধিকারী; অন্যজন লম্বা গড়নের যুবক, ওর সোনালি গোফ ছোট করে ছাটা। নীল চোখ দুটো ঠাণ্ডা কিন্তু বন্ধুসুলভ। রনি হাত তুলে ইশারা করায় ওরা থেমে দাঁড়াল।
সামনে একজন আহত মানুষ রয়েছে, বলল সে। তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। ডাক্তার হ্যাডলে কি এখানে আছে?
সোনালি চুলের যুবক মাথা ঝাঁকাল। আমি হ্যাডলে।
ঘোড়া ঘুরিয়ে ফিরতি পথে এগোল রনি। ওদের একজনের বুকে স্টার শোভা পাচ্ছে। লোকটা বয়স্ক, লম্বা গড়ন। ওর গোঁফ ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে নিচে নেমেছে। জীবিত লোকটা কে?
হার্ট নামের একজন।
সে কিছু বলেছে?
রনি অনুভব করছে চারপাশ থেকে সবাই ওকে ঘিরে রেখেছে–মনোযোগ দিয়ে ওরা কথা শুনছে। খারাপ ভাবে আহত হয়েছে সে। প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে গেল ও। ওরা কিছু নিতে পেরেছে?
সবই নিয়েছে, বাকবোর্ডের শক্ত গড়নের মানুষটা জবাব দিল। আমাকে প্রায় দেউলে করে দিয়েছে। আমার তিরিশ হাজার ডলারের সোনা নিয়ে গেছে। এমন আর একটা ডাকাতি হলে আমি শেষ হয়ে যাব।
ক্যানিয়নের ভিতর ঢুকে রনির ইশারায় সবাই থামল। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর রনি হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। ওর চেহারাটা ফ্যাকাসে হলো।
মারা গেছে জেমস হার্ট। পিস্তলটা ওর হাতেই ধরা। নলটা কপালের ওপর।
আত্মহত্যা! একজন বলে উঠল। নিজেকে গুলি করেছে সে।
দেখে তাই মনে হচ্ছে, আর একজন বলল। ধীরে মাথা তুলে বক্তার দিকে তাকাল রনি। লোকটার স্বরে যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ পেল।
কিন্তু এমন একটা কাজ সে কেন করল? এই লোকটাই আত্মহত্যার কথা প্রথম উল্লেখ করেছিল। এর কোন মানেই হয় না।
রনি ওদের পাশ থেকে সরে গেল। তার কঠিন নীল চোখ মেঝেটা খুঁটিয়ে দেখছে। ব্যর্থতায় ওর ঠোঁট বাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কি করতে পারত? লোকটার ডাক্তারের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।
নিশ্চয় দারুণ যন্ত্রণার মধ্যে ছিল সে, একজন মন্তব্য করল। মনে হয় সে আর সহ্য করতে পারেনি।
শেরিফ কোন মন্তব্য করেনি। রনি ওর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল। বুড়ো যখন কোন কথা বলল না, রনি শান্ত স্বরে বলল, আত্মহত্যা করেনি সে। ওকে খুন করা হয়েছে।
খুন? সবাই ওর দিকে চোখ ফেরাল।
হ্যাঁ, খুন, পুনরাবৃত্তি করল রনি। আমি যখন ওকে ছেড়ে যাই তখন সে জীবিত আর আশাবাদী ছিল। নিজেকে সে হত্যা করেনি।