ওয়াটসন খেপার মত চিৎকার করছে, কিন্তু হেনরি তার সিগারেট ধরাল। উত্তেজিত হয়ে কোন লাভ নেই, বলল সে। সে চলে গেছে। আর ওকে যদি চেনো, তাহলে জানবে, এখন সারারাত ঘুরলেও ওকে খুঁজে পাবে না তুমি!
যখন হেনরি ওখানে ওয়াটসনের সাথে কথা বলছিল ততক্ষণে ঘোড়াটাকে ক্যানিয়ন ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ল রনি। কিন্তু সে রকিঙ কে-এর পথ না ধরে, দক্ষিণে স্টেজ কোচ পথের দিকে এগোল। স্টেজ হোল্ড আপের জায়গাটা আরেকটু ভাল করে দেখার এটাই ভাল সময়। কর্ন প্যাচে যাওয়ায়, জুয়ায় জেতা ছাড়াও ওর আরও কিছু লাভ হয়েছে। সে জেনেছে ওখানকার কে কেমন।
বিল ওয়াটসন চতুর, সক্ষম, এবং ভয়ানক রকম বিপজ্জনক। ট্রয় সাইড ওয়াইণ্ডার সাপের মতই বিষাক্ত। ওকে কোন মতেই বিশ্বাস করা যায় না। হ্যানকিনস হচ্ছে ওয়াটসনের পর সবথেকে শক্ত লোক। আর ড্রেনান-ড্রেনান অনিশ্চিত মানুষ।
হিউবার্টরা চায় রকিঙ কে, কর্ন প্যাচের ওরা চায় গরু, আর স্টেজ ডাকাতরা নিয়েছে সোনা। এই তিনটের মধ্যে কোন যোগাযোগ আছে। বলে মনে হচ্ছে না।
অন্ধকার হয়ে এল, কিন্তু আকাশের একটা-দুটো তারা দেখে দিক চিনতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না ওর। দক্ষিণে এগোলে একসময়ে স্টেজ ট্রেইলে সে নিশ্চয় পৌঁছবে। পোকার গ্যাপের কাছে একটা ছোট্ট গর্তে রাত কাটাবার জন্যে ক্যাম্প করল। আগুন জ্বেলে কিছু খাবার আর কফি তৈরি করে, খেয়ে, আগুন নিভিয়ে শুয়ে পড়ল সে।
সম্পূর্ণ নীরবতা হঠাৎ রনিকে জাগিয়ে দিল। এমনকি ঝিঝি পোকাগুলোও স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাতাস বইছে না। ঝোঁপের ভিতর কোন জীবজন্তুর নড়াচড়ার আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে পুরো এলাকাটাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ডান হাতে পিস্তলের হাতলটা ধরে টপারের দিকে তাকাল সে। আবছা দেখা যাচ্ছে ওকে। ঘোড়াটা কান খাড়া করে দূরে কোন কিছুর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আকাশের দিকে চেয়ে সে বুঝল রাত তিনটে হবে।
পিস্তল বের করে, হাতলটাকে আঁকড়ে ধরে গড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে এল। কিছুই নড়ছে না, রাত স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন কোন ভয়ানক ঘটনার আশঙ্কায়। কোল্টটাকে খাপে ভরে বুট পরার কথা ভাবছে, এই সময়ে দূর থেকে একটা গুড়গুড় আওয়াজ এল। কেউ যেন মাইনে ডাইনামাইট ফাটাচ্ছে। শব্দটা কাছে, আরও কাছে আসছে।
রনির পায়ের তলায় মাটি কাঁপছে। তারপর ধাক্কা দিল। টপার নাক ঝাড়া দিয়ে একটু পিছিয়ে গেল। ওর ডান দিকে শব্দ তুলে একটা পাথর গড়িয়ে পড়ল। তারপর সব চুপ। অস্থির হয়ে উঠেছে টপার। কাছে গিয়ে ঘোড়াটাকে শান্ত করল রনি। আদর করে কাধ চাপড়ে বলল, ওটা একটা ভূমিকম্প, বাছা, ভয়ের কিছু নেই, ওটা শেষ হয়েছে। এখন দেখি আমরা আরও দু’ঘণ্টা ঘুমাতে পারি কি না।
দিনের আলো ফোঁটার আগেই উঠল রনি। চারপাশ ভাল করে একবার দেখে একটা ছোট্ট আগুন জ্বেলে নিল। জানে সে এখন প্রতিপক্ষের এলাকায় রয়েছে। স্টেজ ডাকাতের গোপন আস্তানা এখানে যেকোন জায়গায় হতে পারে। এখন থেকে ওকে খুব সাবধানে এগোতে হবে। জিনে চেপে রওনা হলো। যতদূর সম্ভব ওয়াশ বা নিচু জমি দিয়ে চলছে। রিজ বা পাহাড়ের চূড়া এড়িয়ে চলছে।
হঠাৎ থেমে দাঁড়াল সে। মাটিতে টাটকা ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা করে বুঝল, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগের ছাপ। ওর মধ্যে হেঁটে সরু করা খুরের ঘোড়াটাও রয়েছে। ওটা স্টেজ ডাকাতির সময়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। একেই বলে কপাল! ওটার সাথে বাকি তিনটে ট্রাকও সে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল। কারণ ভবিষ্যতে হয়তো ওই বিশেষ ঘোড়াটা নাও থাকতে পারে।
হ্যাটের তলা দিয়ে পুরো এলাকাটা খুঁটিয়ে দেখল রনি। ওর অভ্যস্ত নীল চোখ দুটো মরুভূমি বা রেঞ্জে কোথায় কি দেখতে হবে জানে। এবং যেকোন অস্বাভাবিক কিছু সে মুহূর্তেই চিনতে পারে। দেখা শেষ হলে আবার ঘোড়ার পিঠে উঠল। কিন্তু সরাসরি ট্যাক অনুসরণ না করে মোটামুটি ওই দিকেই এগোল। পথে আরও একবার ওই ট্রেইল পার হলো সে।
ট্রেইলটা পাহাড়ের একটা সরু খাজে ঢুকেছে। ওই পথে না এগিয়ে রিজের ধার ধরে বাইরে দিয়ে আধ মাইল গিয়ে সে থামল। জুনিপার গাছের সাথে ঘোড়াটাকে বেঁধে রিজের ওপর উঠল। উপরে উঠে মাথা থেকে হ্যাটটা খুলে ওপাশে উঁকি দিল।
সরু পাথুরে তলায় একটা ক্ষীণ ট্রেইল দেখতে পেল। ওটা এঁকেবেঁকে এগিয়ে একটা সরু উপত্যকায় পৌঁছেচে। ওখানে পাথর, মাটি, আর কাঠ দিয়ে তৈরি কয়েকটা অস্থায়ী কেবিন দেখা যাচ্ছে। পোল দিয়ে আটকানো একটা করালে তিনটে ঘোড়া রয়েছে। ওর চোখের সামনেই একটা কেবিন থেকে একজন লোক বেরিয়ে, বালতি থেকে পানি ফেলে খালি বালতি নিয়ে পিছন দিকে পাথরের আড়ালে অদৃশ্য হলো। কিছুক্ষণ পরেই ওকে পানি ভরা বালতি নিয়ে কেবিনে ঢুকতে দেখা গেল। ট্রেইলটা কেবিন ছাড়িয়ে এঁকেবেঁকে আরও এগিয়ে গেছে।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে পশ্চিমে এগোল রনি। কিছুদূর এগিয়ে যেখানে কেবিনগুলো দেখেছে সেটা ছাড়িয়ে আরও দূরে একটা জায়গায় এসে থামল।
রিজ পার হয়ে ট্রেইলে নামল সে। পিছন দিকে কয়েকটা ছাপরা ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু সামনে পাইন আর ফার গাছের ফাঁকে পাহাড়ের গায়ে একটা পাথরের তৈরি কেবিন দেখা যাচ্ছে। ওটা নিশ্চয় পুরানো ইণ্ডিয়ানদের তৈরি-সংস্কার করা হয়েছে। কাছেই একটা করাল, পঁচটা চমৎকার ঘোড়া রয়েছে ওখানে। ঝর্না বয়ে যাওয়ার শব্দ আসছে ওর কানে। আরও একটু এগিয়েই থমকে দাঁড়াল সে। করালে, যেটার নাকের পাশটা সাদা, সেই ঘোড়াটাও আছে-ওটাকে সে স্টেজ হোল্ড আপের সময়ে দেখেছে।
০৬. ডাক বেইলি পাগল হয়ে উঠেছে
ডাক বেইলি পাগল হয়ে উঠেছে। প্রায় পুরোপুরি পাগল। হোল্ড আপের তিন দিন আগে থেকে আজ পর্যন্ত সে এখানেই আবদ্ধ আছে। অথচ সঙ্গ ছাড়া সে টিকতে পারে না। কথা বলতে না পারলে ওর পেট ফেঁপে ওঠে।