ড্রেনান আর হ্যানকিনস দুজনেই বসে গেছে। ট্রয়, বিল, আর রনি খেলায় রয়েছে। বিল রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে নিজের তাস দেখল। ওয়াটসন অলস ভাবে চোখ তুলে ট্রয়ের দিকে তাকাল। একই সাথে ওর মুঠো করা বাম হাতের বুড়ো আঙুল উপরে উঠল।
রনির চোখের কোনে ইশারাটা ধরা পড়ল। মনে মনে হাসল সে।
তাহলে এই ব্যাপার? ওরা রেইজ করতেই থাকবে? ঠিক আছে, ওদের সাথে সেও থাকবে এবার। নিজের ফুল হাউসের দিকে আর একবার তাকাল সে-তিনটে কুইন আর দুটো ছয়। তিনটে নীল চিপ মাঝখানে রেখে বিল বলল, তিরিশ রেইজ করলাম।
হ্যানকিনস ট্রয়ের দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে রনির দিকে তাকাল। ঠোঁট চাটল ট্রয়। তোমার তিরিশ এবং আরও দশ।
একবার মাঝখানে চিপসের স্তৃপটা দেখল রনি, তারপর চারটে নীল চাকতি কিটিতে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, আছি।
বিলের কাছ থেকে ট্রয়কে দেয়া গোপন সঙ্কেত রনির তীক্ষ্ণ চোখকে ফাঁকি দিতে পারল না। চারটে রাজা, শান্ত স্বরে বলল বিল। তারপর তাসগুলোকে একত্র করে টেবিলের ওপর চিত করে রাখল–কেবল উপরের তাসটা দেখা যাচ্ছে।
ট্রয় তাসগুলো ছড়াবার জন্যে দ্রুত ডান হাত বাড়াল, কিন্তু রনির বাম হাত তার আগেই বিলের তাসের ওপর পৌঁছে গেছে। চট করে তাসগুলো ছড়াল সে। মাত্র চারটে তাস দেখা যাচ্ছে এবং কেবল তিনটে কিঙ।
ট্রয়ের মুখটা কুৎসিত হয়ে উঠল, এবং বিলের চোখ কঠিন হলো। রনি কেবল হাসল। তোমার একটা তাস নিশ্চয় হাত ফসকে নিচে পড়ে গেছে, বিল। এখানে আমি কেবল তিনটে সাহেব দেখতে পাচ্ছি।
গলা লম্বা করে টেবিলের তলাটা দেখল ওয়াটসন, তারপর নিচু হয়ে একটা তাস তুলে আনল। ওটা একটা তিন। ওর মুখ লাল হলো। ভুল, বলল সে, আমি নিশ্চিত ভেবেছিলাম আমার চারটে কিঙ আছে।
কাঁধ উঁচাল রনি। ভুলে যাও-ওকিছু না। ভুল আমাদের সবারই হয়। দেখা যাচ্ছে নিরীহ স্বরে সে বলল, আমার ফুল হাউসই পট জিতেছে।
ট্রয় তার হাত সরিয়ে নিয়েছে। চিপসগুলো টেবিলের মাঝখান থেকে শান্তভাবে নিজের দিকে টেনে নিল ড্যাশার। চতুর্থ সাহেবটা ট্রয়ের হাতে ছিল। ছড়াবার সময়ে ওটাও সে বাকিগুলোর সাথে মিশিয়ে দিত। একটা পুরানো চালাকি।
এবার রেড রিভার রেগানের ডীল। অপটু হাতে তাস জড়ো করে নিজের দিকে নিয়ে এল সে। ডিসকার্ড করা তাসের ভিতর দুটো টেক্কা ছিল। কৌশলে ওগুলোকে নিচে নিয়ে এল। ফেঁটার সময়ে আরও একটা টেক্কা ওর চোখে পড়ল। দুই শাফলের পরে ওটাও নিচে চলে গেল। টেক্কা তিনুটে হাতের তালুতে লুকিয়ে রেখে বিলকে বাকি তাস কাটতে দিল। কাটার পর টেক্কাগুলো আবার নিচেই স্থান পেল। শান্ত ভাবে পাঁচ হাত বাটল। বটম ডীল করে নিচে থেকে দুটো টেক্কা সে নিজে রাখল।
ড্রেনান নিজের তাস দেখে ওগুলো ছুঁড়ে একপাশে ফেলে দিল। হ্যানকিনস পাঁচ ডলার বাজি ধরল। ট্রয় ওটাকে বাড়িয়ে দশ করল। এবার দেখব এটা তোমার কেমন পছন্দ হয়, রেড! ওই দশের সাথে আরও চল্লিশ।
রনি নিজের তাসের দিকে চেয়ে একটু ইতস্তত করে পঞ্চাশের ওপর আরও বিশ বাড়াল। হ্যানকিনস নিজের তাস ভঁজ করে রেখে দিল। ট্রয় আরও বাড়াল, বিল বাড়াল আবার। আরও এক রাউণ্ড স্টেক বাড়ানো চলল।
ড্র এর সময় বিল নিল দুই তাস এবং ট্রয় আর রনি দু’জনেই তিনটে করে তাস নিল। নিজে যে তিনটে নিল তার মধ্যে নিচের বাকি টেক্কাটাও ছিল।
ট্রয় দুটো নীল কাউন্টার দিয়ে শুরু করল। বিল দুটোর সাথে আরও তিনটে যোগ করল। রনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ওদের দিকে চেয়ে হাসছে। ওর কঠিন নীল চোখ দুটোও চোখের গভীরের বরফ ভেদ করে হাসছে। ড্রেনান হঠাৎ পা সরিয়ে বিলের দিকে তাকাল। কিন্তু বিশাল লোকটা রেডের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। হ্যানকিনস চুপ করে চেয়ারের হাতলে হাত রেখে বসে আছে। রনিকে দেরি করতে দেখে নার্ভাস ভাবে দেহ মোচড়াচ্ছে ট্রয়, আর সেইসঙ্গে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে রেড রিভারের দিকে চেয়ে আছে।
হ্যানকিনসের গানগুলো চেয়ারের হাতলের নিচে, ঝট করে বের করা অসম্ভব খেয়াল করেছে ড্যাশার। ড্রেনানের কাছে দৃশ্যত কোন গান দেখা যাচ্ছে না। ঝামেলা এলে সে পক্ষ নেবে কি না সেটা বিবেচনার বিষয়। লড়াই বাধলে ট্রয়ই সবথেকে প্রথম অ্যাকশনে যাবে। আর, বিল হচ্ছে সবথেকে শক্ত লোক।
এসো আমরা পট লিমিটে খেলি। হাসিমুখে বলল রেড। উত্তেজনা থাকলে খেলায় মজা আসে না!
তিক্তভাবে গাল দিল ট্রয়-মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল ওয়াটসন। নিজের হাতটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চেয়ারটাকে একটু পিছিয়ে নিল। প্রয়োজন হলে রেডকে সে কাভার করতে পারবে।
কৌতূহলী চোখে ওপাশে বসা লোকটাকে বিল ওয়াটসন খুঁটিয়ে দেখছে। হতে পারে গত হাতের খেলায় ওদের চালাকিটা রেড রিভার আঁচ করেছে। তাই যদি হয় তবে তাসে চুরির ব্যাপারে কিছুটা জ্ঞান অন্তত তার আছে। তাস বিছানোয় ট্রয়কে হারানো, হয়তো একটা ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সে নিঃসন্দেহ নয়, আর অনিশ্চয়তা তার পছন্দ নয়। অন্যের মধ্যেও না, আর নিজের মধ্যে হলে তো আরও খারাপ।
পট লিমিট, মন্তব্য করল সে, অনেক টাকার ব্যাপার হয়ে দাড়াতে পারে। তোমার কাছে তা আছে?
জবাবে পকেট থেকে নোটের একটা মোটা বাণ্ডিল বের করে সামনে রাখল। তুমি যতই বাজি ধরো আমি তা কাভার করতে পারব, বিল, বেপরোয়া ভাবে বলল সে। তুমি যত খুশি উঁচুতে উঠতে পারো।