সেলুনে জনাবারো লোক অলসভাবে খুবই অল্প পয়সায় পোকার খেলছে। বিল ওয়াটসন ঝিমাচ্ছে বারে। মাঝেমাঝে জাগছে। একবার জেগে সে খেয়াল করল একজন আরোহী সাদা স্ট্যালিয়নে চড়ে এগিয়ে আসছে। আরোহীর মাথায় একটা কালো হ্যাট, কালো প্যান্ট উঁচু বুটের ভিতরে গোজা। পরনে কালো গেঞ্জি। দু’পাশে দুটো পিস্তল, ফিতে দিয়ে ঊরুর সাথে বাধা।
রাইফেলের খাপে উইনচেষ্টার দেখে বিভ্রান্ত হলো বিল ওয়াটসন। ওখানে যদি ৫০ শাপর্স থাকত, তাহলে ওকে রনি ড্যাশার বলেই সন্দেহ করত সে।
বিল ওয়াটসন মানুষকে জিনিসের সাথে বিচার করে চিনতে অভ্যস্ত। ড্যাশার যে শার্পস ভালবাসে সেটা প্রতি কাউক্যাম্প আর ক্যাটল ড্রাইভের সবারই জানা আছে। হাড়ের হাতলওয়ালা কোল্ট দেখেই বিল বুঝল লোকটা ওগুলোর ব্যবহার জানে। এই লোকটা কর্ন প্যাচে এসেছে, যে জায়গা আউটলদের জন্যে নিরাপদ, আর আইনের অফিসারদের জন্যে নিশ্চিত মৃত্যু। সুতরাং এই লোকটা নিশ্চয় আউটল। তবু, বিল ওয়াটসন সতর্ক রইল।
দরজা ঠেলে রনি লম্বা কামরাটায় ঢুকল। লোকগুলো মুখ তুলে তাকাল, তারপর যে যা করছিল সেদিকে মন দিল। ওয়াটসনই সব সামলাবে। সবসময়েই সে তা করেছে। ওদের মাথা ঘামিয়ে কোন লাভ নেই।
পানি, প্রস্তাব রাখল রনি। হাত বাড়িয়ে বারের পিছন থেকে একটা গ্লাস নিয়ে পানি ভরে ড্যাশারের দিকে ঠেলে দিল বিল। পানিটা চেখে দেখে পুরোটা শেষ করে ফেলল। ভাল, বলল সে।
ঝর্নার পানি, গর্বের সাথে বলল বিল। কোন ক্ষার নেই।
যারা কম কথার মানুষ, বিল ওয়াটসন তাদের পছন্দ করে। ঠাণ্ডা নীল চোখ ওকে যাচাই করে দেখছে। অস্বস্তি বোধ করছে ওয়াটসন। এটা ওকে কিছুটা বিচলিত করে তুলল, কারণ নিজের ওপর তার এতটা আস্থা আছে, যে কোন কিছুতেই অস্বস্তি বোধ করে না।
পোকার খেলোয়াড়দের দিকে তাকাল ড্যাশার। ড্র পোকার খেলোয়াড় কেউ আছে?
বিলের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কয়েকজন। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে খেলি।
খেলাটা আমার পছন্দ, স্বীকার করল রনি। তবে একটু ফাস্ট গেমই আমি ভালবাসি।
টুলটা একটু এগিয়ে আনল বিল। আমি একটা নতুন প্যাকেট খুলব। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। ঘোড়াটাকে ওখান থেকে সরিয়ে নেয়া ভাল। বাইরে খুব গরম।
ঘুরে, সেলুন থেকে বেরিয়ে গেল ড্যাশার। ওয়াটসন চেয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে ওই লোকটাকে তার চেনা উচিত। দারুণ বিরক্তিতে মাথা নাড়ল সে। পরে মনে পড়বে। ঘোড়াটাকে হটিয়ে না নিয়ে, রনিকে ওর পিঠে চেপে বসতে দেখে হাসল। রাইডার, সন্দেহ নেই।
আস্তাবলটা লম্বা, প্রশস্ত, আর ভিতরটা বেশ ঠাণ্ডা। ঘোড়াটাকে একটা স্টলে নিয়ে, পিঠ থেকে জিন নামিয়ে খড় দিয়ে ওর গা ডলে দিল। তারপর ওকে কিছু চানা খেতে দিয়ে, দ্রুতপায়ে এগিয়ে আস্তাবলের সবগুলো ঘোড়া চেক করে দেখল। স্টেজ ডাকাতিতে দেখা ঘোড়াটা এখানে নেই। হয়তো কর্ন প্যাচে আরও আস্তাবল আছে, অথবা পাহাড়ে কোন গুপ্ত জায়গা আছে যেখানে ঘোড়া রাখা সম্ভব। ফিরে চলল সে। রোদে-পোড়া রাস্তা পার হয়ে সেলুনে গিয়ে ঢুকল।
বিল মুখ তুলে তাকাল। তুমি না খেলতে চেয়েছিলে? খেলবে?
নিশ্চয়। প্রথম রাউণ্ড ব্লাই?
আমিও তাই খেলি। টুল থেকে উঠে বার ঘুরে একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসল সে। চেয়ারটা বিশাল, বোঝাই যায়, ওর নিজের আরামের জন্যে বিশেষ ভাবে তৈরি। একটু ঘুরে অন্যান্য লোকজনের দিকে ফিরল। তোমাদের কেউ যোগ দিতে চাও?
কঠিন চোখ আর কালো চুলওয়ালা একটা লোক মুখ তুলে চাইল। তোমার সাথে খেলায় আমি নেই! তুমি যেমন ফাস্ট খেলো তাতে আমার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে আসে!
শব্দ করে হাসল ওয়াটসন। ওই লোক খুব সাবধানী খেলোয়াড়।
সরু চেহারার একটা লোক, অস্থির, বিরক্তিভরা মুখ, এগিয়ে এল। নামটা ট্রয়। আমি খেলব।
আরও দুজন, একজন মোটাসোটা কাউবয়, হ্যানকি, হাতের নখগুলো ময়লা আর ভাঙা, কঠিন সতর্ক চোখ, এবং লম্বা, পাকা চুলওয়ালা লোক, কালো চোখ আর মসৃণ হাত। রাইণ্ড ওপনার? পাকা চুলের লোকটা হাসল। ওটা ক্ষতিকর হতে পারে। রক্তরাঙা ট্রেইল
বিল বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে লোকটাকে দেখাল। নাম ড্রেনান, তোমার?
রেড রিভার রেগান। হাসল ড্যাশার।
সবাই কেটে হাই কার্ড বাটবে? সবার দিকে তাকাল সে। কিন্তু সম্মতির জন্যে নয়, কে কোথায় বসেছে মনে গেঁথে নেয়াই উদ্দেশ্য। রেড রিভার রেগানের কাছে নোটের একটা মোটা বাণ্ডিল দেখা যাচ্ছে। বিল আজ ওকেই টার্গেট করবে। হাবা লোক আজকাল কমই পাওয়া যায়।
রনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেলুনকীপারের পটু হাতে তাস শাফল করা সে লক্ষই করছে না। তাসের প্যাকেটটা রনির দিকে বাড়িয়ে দিল বিল। কেটে আট তুলল সে। ড্রেনান ছয় তুলল। হ্যানকিনস আর ট্রয় দুজনেই দশ তুলল, আর বিল তুলল সাহেব।
আর একবার তাস ফেঁটে ট্রয়ের সামনে রাখল। কাটা হলে বিল বাটল। দ্রুত এগিয়ে চলল খেলা। কয়েকটা ছোট পট (বা কিটি) জিতল রনি। ড্রেনান আর বিল জিতছে। ট্রয় আর হ্যানকিনস দু’জনেই হারছে। ট্রয় ভাল তাস পাচ্ছে না বলে গজর-গজর করছে। রনির পোকারের দক্ষতা, টেক্স ইউয়াল্টের ট্রেইনিঙের ফল। অসাধারণ পোকার খেলোয়াড় র্টেক্স। সে যা জানে না তা কেউ জানে না। বিল ভালই, তবে টেক্সের তুলনায় কিছুই না। রনি সাবধানে খেলে চলল, একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ সুযোগটা এল।