বুথ ছেড়ে নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল রনি। সবার চোখ শর্টি আর হিউবার্টদের ওপর থাকায় কেউ ওর নেমে আসা খেয়াল করল না।
এবার সে মুখ খুলল।
তুমি ভুল ধারণা করেছ, শান্ত স্বরে বলল সে। রকিঙ কে কোন অধিকারই ছাড়েনি। আমাদের গরু এখনও ওই রেঞ্জে চরছে এবং ভবিষ্যতেও চরবে। আরও বলছি, তোমাকে তোমাদের গরু রুর ওপাশে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছিল। এখন সবার সামনে সেই আদেশের পুনরাবৃত্তি করছি আমি,
মুহূর্তের জন্যে বারটা একেবারে নীরব হলো। জনি হিউবার্ট ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড রেগেছে। কিন্তু আর সবার থেকে সে ভাল বুঝছে কিভাবে ড্যাশার পুরো ব্যাপারটাই উল্টে তার বিপক্ষে নিয়ে গেছে। এখন তার কোন কাজে যদি দাঙ্গা হয়, তবে সবাই তাকেই দুষবে। তিক্ত মনে বারের দিকে চেয়ে রইল সে। একটু পরে মুখ তুলে চাইতেই অ্যাডামের চোখে চোখ পড়ল ওর। দেখল অ্যাডামের চোখ হোটেলের অফিসের দিকে সামান্য কাত হলো।
ওর সাথে অ্যাডামের মৌখিক আলাপের বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল না। লোকটাকে তার পছন্দ হয় না। এখন নতুন করে পছন্দ করারও কোন কারণ সে দেখছে না। তবু ওই ভঙ্গিতে এমন কিছু ছিল, যা ওকে আকৃষ্ট করল। দু’এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে ঘুরে দরজার দিকে রওনা হলো। রনির নীল চোখ দুটো ওকে অনুসরণ করল। ইশারাটা সেও লক্ষ করেছে। ওপাশে কি আছে সে জানে না। তবে এর মানে যে বাড়তি ঝামেলা, এটা নিশ্চিত।
শর্টি মাইক রনির পাশে সরে এল। মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তোমার ইচ্ছাই টিকল, বলল সে। সকালে আমি কাজে রিপোর্ট করলে ঠিক আছে?
অবশ্যই। সেটা তুমিও জানো! জোর দিয়ে বলল রনি।
শর্টি বলল, একটা কথা, যতক্ষণ থ্রী এইচ আউটফিট, এবং আরও কিছু লোককে শেষ না করা হচ্ছে, ততক্ষণ এখানে শান্তি আসবে না।
ঠিকই বলেছ, আমি ভাবছি। চিন্তাযুক্ত ভাবে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে বলল, মনে হচ্ছে আমার কিছু রাইডিঙ করার সময় এসেছে।
কামরা ছেড়ে বেরোবার জন্যে ঘুরে রওনা হলো ড্যাশার। শর্টি ওর পিছু নিল। আমাকে সকালে র্যাঞ্চে না পেলে বেন কেসিকে বোলো আমি তোমাকে কাজে নিয়েছি। তারপর কাজ শুরু কোরো। তুমি তো জানো র্যাঞ্চে কোথায় কি করা দরকার।
তুমি কোথায় যাবে? জানতে চাইল মাইক।
একটু ইতস্তত করল রনি। ভাবছি কর্ন প্যাচের ওদিকে যাব। আমি নিজের চোখে দেখতে চাই ওখানে কি ঘটছে।
মাথা নাড়ল শর্টি। রনি, তুমি সাবধান থেকো। ওই লোকগুলো একেবারে বিষাক্ত। বিশেষ করে ওই বিল ওয়াটসন। ওকে এক ফোঁটা বিশ্বাস কোরো না। মাছি মারার মতই নির্বিকার ভাবে সে মানুষ মারতে পারে।
০৫. বিল ওয়াটসন কর্ন প্যাচের হর্তা-কর্তা-বিধাতা
বিল ওয়াটসন কর্ন প্যাচের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ওর আগের জীবন সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। তবে মনে হয় আর সবকিছুর সাথে, নিষ্ঠুর খুন, দাঙ্গা, আর বিভিন্ন রকম ডাকাতিতে একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীও সে করেছে।
খালি পায়ে সে ছয় ফুট চার ইঞ্চি উঁচু। ওজন, দু’শো ষাট পাউণ্ড। একটা পিস্তল সে কোমরে ঝুলায় বটে, কিন্তু ওর প্রধান অস্ত্র হচ্ছে নল কেটে ছোট করা একটা শটগান। বাটটা বদলে ওটাকে পিস্তল গ্রিপ করে নেয়া হয়েছে। ওর এই অস্ত্রটাই আশপাশের সবাইকে সন্ত্রস্ত করে রাখে। পিস্তলের গুলিতে দেহে একটা ফুটো হবে। জায়গা-মত না লাগলে প্রাণের আশঙ্কা নেই। কিন্তু কাছে থেকে শটগানের গুলিতে দেহ দু’টুকরো হয়ে যেতে পারে।
বছর পঞ্চাশেক আগে এক ভবঘুরে মাইনার এখানে এসে, একসারি কর্ন দেখতে পায় ওয়াটার হোলের চারপাশে। বোঝা যায় কেউ এই শস্য বুনে কিছুদিন ভোগও করেছে–কিন্তু তারপর হয়তো নিজের কাজে কোথাও চলে গেছে, অথবা কোন বিজন এলাকায় মারা পড়েছে। সুযোগ পেলে কর্ন (ভুট্টা) খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। কিন্তু কাটা না হলে দানাগুলো মাটিতে ছড়ায় এবং আরও কর্ন জন্মায়।
কর্নে আকৃষ্ট হয়ে মাইনার একটা ছাপরা তৈরি করে ওখানেই থেকে গেল। ঝর্নায় কিছু সোনাও পেল। কপাল-গুণে ওয়্যাগন ট্রেইন থেকে হারানো দুটো গরুও মিলল। অল্পদিনের মধ্যেই বেশ একটা সচ্ছল জীবন যাপন করা সম্ভব হলো। আরও মাইনার এল, কিছুদিন থাকল, তারপর তাদের ছাপরা ছেড়ে অন্যদিকে কোথাও চলে গেল। পরে হঠাৎ করেই কিছুদিনের জন্যে এলাকাটা জমজমাট হলো। একটা সেলুন আর চলনসই একটা হোটেলও তৈরি হলো। ছাপরার মলিকানা প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতিমাসে বদলাচ্ছে। কোন লেখা-পড়া নেই–যে থাকছে সেই মালিক, এই রকম ব্যবস্থা। তারপর বিল ওয়াটসন এল, এবং থাকল।
আদি মাইনার বাসিন্দা অদৃশ্য হলো। দুটো গরু এখন বেড়ে বারোটা হয়েছে। ওগুলোর মালিকানা বিলের নামে লিখে দেয়া হয়েছে। শটগানের হুমকি দেখিয়ে কর্ন প্যাচের পুরো মালিকানাই সে নিয়ে নিল। কেউ কোন বিবাদ বা প্রতিবাদ করলে বুটহিলে তাদের জন্যে স্থায়ী ব্যবস্থা হয়।
এর কিছুটা রনি জানে। কিন্তু আরও অনেককিছুই সে আগামীতে জানবে।
বিল যেখানে বসে সেখান থেকে প্রত্যেকটা ছাপরার ওপরই সে নজর রাখতে পারে। সে নিজেই নিজের সিকিউরিটি এজেন্ট। কোথায় কি চলছে সবই সে জানে। ওকে ফাঁকি দিয়ে কারও কিছু করার উপায় নেই।
লোকজন দুই রকম ধারায় কয়েকবার চেষ্টা করে দেখেছে। প্রথমটা চারবার চেষ্টা করা হয়েছে–ফলে চারটা কবর ওদের জন্যে খোড়া হয়েছে বুট হিলে। পরে আরও আরও দু’বার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল ভাল হয়নি। সাতটা বাড়তি কবর খুঁড়তে হয়েছে ওদের জন্যে। আরও চারজনকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে, যারা বিল ওয়াটসনের ক্ষমতায় সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। প্রত্যেকেই একক ভাবে বুঝতে গিয়েছিল–কিন্তু সবার একই পরিণতি ঘটেছে। বিল ওয়াটসন সীসা দিয়ে সবার সন্দেহের অবসান ঘটায়।