টেবিলের ওপর বিশাল থাবা দুটো রেখে একটু সামনে ঝুঁকল শর্টি। আমি জিজ্ঞেস করছি অন্য খাটাসটা কোথায়?
শর্টি! ধমকের সুরে তীক্ষ্ণ স্বরে চ্যাঁচাল মলি। শর্টি, এদিকে এসে তোমার কফি খাও! ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে?
মাতাল লোকটা অ্যাডাম আর জেরির দিকে চেয়ে একটু ইতস্তত করল, তারপর ধপাস করে বসে পড়ল। মাথা নেড়ে সে বিড়বিড় করে বলল, নারী! নারী! ওরা পুরুষকে কোনদিনই শান্তি দিল না। কেবলই বাধ সাধে। ওদের জালায় একটা ভাল ফাইটও কেউ করতে পারে না। দুটো খাটাসের সাথে একটু মারপিট করব, ওটাও ওরা সহ্য করবে না। এক জোড়া খাটাসের সাথে লড়ব, তারও উপায় নেই!
দরজা বন্ধ হওয়ার মৃদু শব্দে রনি তাকাল। দেখল ওরা দুজন বেরিয়ে গেছে। বাইরে থেকে কথাবার্তার মৃদু আওয়াজ আসছে। তেতো কথা কাটাকাটি। অ্যাডাম সত্যিই রনিকে টাউন মার্শাল হিসেবে চেয়েছিল, এটা ওর মনে হয় না। কেউ তাকে রকিঙ কে থেকে সরাতে চাইছে। কিন্তু কে? এবং কেন?
পাই খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিল রনি। পাই শেষ করে মুখ তুলে দেখল, শার্ট স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।
নিচু স্বরে রনি বলল, বেন আমাকে তার ফোরম্যান করেছে। ঝামেলা সামলানো আমার কাজ।
এমন একজন ওর দরকার, শর্টি শুষ্ক স্বরে বলল। ওর স্বরে মাতাল ভাবটা আর নেই।
তা ঠিক। ওর সাথে একমত হলো ড্যাশার। হিউবার্টরা ওর রেঞ্জ দখল করে নিতে চাচ্ছে।
হিউবার্টদের সেই শক্তি আছে, মন্তব্য করল শর্টি।
ওদের একজনের সাথে আজ আমার মোকাবিলা হয়েছে। বিকেলের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিল সে। ওরা এখন লড়াইয়ে নামবে সন্দেহ নেই। আমার এখন কিছু ভাল কাউহ্যাণ্ড দরকার। শুনেছি তুমি মারপিট পছন্দ করো। তোমাকে আমার এই কাজের জন্যে উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। তোমাকে আমি চাই। তোমার কি মত?
ইতস্তত করল শর্টি। তারপর ধীরে মাথা নাড়ল। বুড়োর সাথে কথা কাটাকাটির পর আমি শপথ করেছি এই র্যাঞ্চে আর কখনও কাজ করব না।
যে কেউ মত পাল্টাতে পারে, বলল রনি। বেন কেসি জানে সে কোন ফাইটার নয়, কিন্তু লড়াই আসন্ন। ওকে পছন্দ করি আমি। তাই লড়াইয়ের দিকটা আমি দেখছি। তোমাকে আমার প্রয়োজন।
নীরবে কফিতে চুমুক দিল মাইক। শেষে সে বলল, রজার আর হেনরি এখনও ওখানে আছে?
আছে।
তাহলে আমি নেই।
ওদের পছন্দ করো না?
উঠে দাঁড়াল শর্টি মাইক। রজারকে হয়তো সহ্য করা যায়। আর সবার মত হেনরি কেন শনিবার শহরে আসে না? কোথায় যায় সে?
কৌতূহলী চোখে শর্টিকে খেয়াল করে দেখছে। এই লোকটাকে তার চাই। ওর সম্পর্কে যা শুনেছে, আর আজ যা দেখেছে, তাতে বুঝেছে মারপিটে শর্টি একাই ছয়জনের সমান। কোথায় যায় সে?
হাসল শর্টি। ঘোড়ায় চেপে লম্বা রাইডে যায়। বুঝে নাও কোথায় যেতে পারে এবং কেন। তাহলেই বুঝবে কেন ওকে আমি অপছন্দ করি।
তার পিছনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শর্টি বেরিয়ে গেল। চিন্তাযুক্ত মনে সিগারেটে টান দিয়ে রনি বলল, দারুণ ভাল একটা লোক। ওকে পেলে আমি খুশি হতাম।
পাবে। মলি নিশ্চিত। ওটা আমার আর শর্টির নিজের ওপরই তুমি ছেড়ে দাও। মারপিট ওর প্রিয়, আর আমি জানি এটাতে ঢোকার জন্যে সে পাগল। তাছাড়া, তোমাকে ওর পছন্দ হয়েছে।
আমাকে? অবাক হয়ে মলির দিকে চাইল সে।
হ্যাঁ, তোমাকে। শর্টিকে আমি চিনি। এখন সে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। আজ লঙ হিউবার্ট আর তোমার মাঝে কি ঘটেছে। যা শুনবে, সেটা যদি ওর পছন্দ হয়, কাল সকালেই সে কাজে যোগ দেবে। কেবল সে যখন আসবে, কোন প্রশ্ন তুলো না।
বাইরে বেরিয়ে রাস্তাটা খুঁটিয়ে দেখল রনি। স্যাডল শপের সামনে যে লোকটা দাড়িয়ে ছিল, সে এখন আর একটু দূরে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কেবল ওর পা দুটো দেখা যাচ্ছে।
ধীর পায়ে রাস্তা ধরে এগোল রনি। পিছন ফিরে না তাকিয়েও সে বুঝতে পারছে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। লোকটা তাকে গুলি করার কয়েকটা ভাল সুযোগ পেয়েছে; সুতরাং হয় সে কথা বলতে চায়, অথবা গুলি করে গোপনে পালিয়ে যাবার মত সুযোগ খুঁজছে।
হঠাৎ লোকটা দ্রুত য়ে এগিয়ে এল। ঘুরে দাঁড়াল রনি। তৈরি।
ড্যাশার? প্রশ্ন নয় বক্তব্য। আমি কাৰ্প। তোমার সাথে নির্জনে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম আমি।
কেন?
আমি রাসলার হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ফাঁসি না দিয়ে তুমি আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছিলে। তাই তোমাকে ফাঁদ থেকে সাবধান করতে এসেছি।
কেমন ফাঁদ?
অ্যামবুশ! রোউজবাড ক্যানিয়নে। ওখানে সাত বা আটজন লোক প্রস্তুত হয়ে লুকিয়ে থাকবে। তোমারই একজন লোক তোমাকে ওখানে নিয়ে যাবে। ওরা সবাই একসাথে গুলি করে তোমাকে ঝাঁঝরা করে দেবে আউটল দল।
ধন্যবাদ, কার্প। একটু ইতস্তত করল ড্যাশার। তুমি কি করবে?
শুকনো একটু হাসল কার্প। আমি? আমি কাল সকালেই মনট্যানার পথ ধরব। যখন শুনলাম তুমি এখানে এসেছ, বুঝলাম রাসলিঙের খেলা শেষ।
রাস্তা ধরে কয়েকজন আরোহীকে এগিয়ে আসতে দেখে দেয়াল ঘেঁষে একটা অন্ধকার জায়গা বেছে নিয়ে দাঁড়াল রনি। দেখল, ওরা পাঁচজন। ওদের মধ্যে লঙ হিউবার্ট আর টাকমাথা কাউহ্যাণ্ডকে চিনতে পার।
রাস্তার উল্টো পাশে অন্ধকারে সামান্য নড়াচড়া লক্ষ করে খুব খেয়াল করে দেখার চেষ্টা করল সে। চিনতে পারল–ওটা শর্টি মাইক।
কাউহ্যাণ্ড হিউবার্টদের পিছুপিছু হাই-গ্রেড সেলুনে ঢুকল। একটু ভেবে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে ঘুরে পিছন দিকে চলে এল রনি।