আড়চোখে রনির চোখের দিকে চেয়ে বরফ-শীতল হলো ওর চোখ। তুমি জানো ওরা কি বলছে? তুমিই জেমস হার্টকে হত্যা করেছ! তুমিই স্টেজ লুট করেছ! সায়মনকেও তুমিই খুন করেছ! একটু থামল সে। ওরা ঠিক এই কথাই বলছে, এবং ফিনলে হার্টকেও ওরা খবরটা দিয়েছে। শহরে এসেছে সে, তোমাকে খুঁজছে! তোমাকে হত্যা করবে ফিনলে! আর আমি-আগুন ঝরল মেয়েটার চোখে আমি এতে খুব খুশি হব।
০৪. রনি যখন ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল
রনি যখন ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল, নেভাডা সেলুন তখন আলোয় ঝলমল করছে। ঘোড়ার পেটি ঢিলে করার অবসরে রাস্তাটা খুঁটিয়ে দেখে নিল। মলির ওখানে এখন আর রাতের খাবার পাওয়া যাবে না-সময় পেরিয়ে গেছে। রাতের বেলা সেলুনের ব্যবসা জমে উঠেছে। পাহাড়ের দিক থেকে ঠাণ্ডা বইছে। তাই রাস্তায় একটা লোকও নেই। সবাই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কেবল একজন অন্ধকার স্যাডল শপের সামনে একটা পোস্টের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাত দুটো বুকের ওপর ভঁজ করা। মাইনারদের বুট পরেছে সে। হ্যাটটা সাধারণ।
লিসা যা বলেছে, সেটা স্মরণ করেই মলির খাবার দোকানের দিকে পা বাড়াল সে।
ফিনলে কি তার খোঁজেই শহরে এসেছে? সে কি তাকে সত্যিই মেরে ফেলবে বলেছে? নাকি লিসা তাকে নিছক একটু বিব্রত করার জন্যেই ওকথা বলেছে? লোকটা পারিবারিক লড়াই করা পরিবার থেকে এসেছে। কে বলতে পারে, হয়তো সে আগে গুলি কোরে, পরে প্রশ্ন করবে? রাস্তা পেরিয়ে মলির দোকানের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল।
ওকে দেখেই মিষ্টি করে হাসল মলি। একাই ছিল সে।
মলি, চট করে জিজ্ঞেস করল সে, ফিনলে কি এখন শহরে?
মুহূর্তে গম্ভীর হলো ওর মুখ। হ্যাঁ, আছে। তোমার সাথে সে কথা বলতে চায়।
লোকটা কেমন?
ইতস্তত করল মলি, তারপর বলল, আমি–আমি জানি না। তিরিশের নিচে ওর বয়স, একটু রুক্ষ হলেও দেখতে ভাল। হাসে কম। জেমস ওকে দেবতার মত ভক্তি করত। আমার কাছে সবসময়ে কেবল ভাইয়ের গল্পই করত। ফিনলে এটা করেছে, ফিনলে সেটা করেছে, এইসব।
এখানে আসার আগে ওরা মিসৌরিতে একটা গৃহযুদ্ধে জড়িত ছিল। ওদের বাবা আর চাচাকে হত্যা করা হলো। প্রতিশোধে ফিনলে বিপক্ষ দলের সবাইকে শেষ করে দিল। তারপর দু’ভাই একসাথেই এখানে চলে এল। কঠিন পরিশ্রম করে সে। আমার বিশ্বাস লোকটা অত্যন্ত সৎ। এবং ভাইকে সে খুব ভালবাসত।
চিন্তাযুক্ত ভাবে মাথা ঝাঁকাল রনি। আমাকে কিছু কফি দাও, বলল সে; তারপর আবার বলল, কফি আর পাই।
হঠাৎ দরজা খুলে গেল। মুখ তুলে তাকাল ড্যাশার। অ্যাডাম আর জেরি সমার্স ভিতরে ঢুকেছে। ওকে দেখে দুজনেই হেসে সামান্য একটু মাথা ঝুঁকাল। হাওডি, রনি, বলল অ্যাডাম। তুমি যে এখানে আছ, সেটা শহরের সবাই জানে। এই শহরে গত ছয় মাসে এটাই সম্ভবত সবথেকে বড় খবর!
স্টজ লুট হওয়ার থেকেও বড়? শুষ্ক স্বরে জিজ্ঞেস করল রনি।
কাঁধ উঁচাল অ্যাডাম। ওগুলো এখন ডাল-ভাত হয়ে গেছে। অহরহই ঘটছে, তাই ওটা আর এখন গরম খবর নয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ড্যাশারের দিকে তাকাল সে। হ্যাঁ, ভাল খবর। আজ এখানে ইলেকশন হলো। আজ থেকে আমি এই শহরের নতুন মেয়র। শহরে একজন টাউন মার্শাল নিযুক্ত করার জন্যে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রথমেই তোমার কথা আমার মনে এসেছে। ওই কাজের জন্যে তুমিই সব থেকে উপযুক্ত। তুমি কি বলো?
বর্তমানে একটা চাকরি করছি আমি, হেসে মাথা নেড়ে জবাব দিল ড্যাশার। যাহোক, অফার করার জন্যে ধন্যবাদ।
কিন্তু এই চাকরিতে তুমি ডবল পাবে! প্রতিবাদ জানাল অ্যাডাম। আমরা তোমাকে মাসে একশো-পঞ্চাশ ডলার করে দেব। এছাড়া যত অ্যারেস্ট হবে, তাদের মধ্যে যারা জেলে যাবে, সেই টাকা আমরা আধাআধি ভাগ করে নেব। আরও অনেক উপরি পাওনাও আছে।
আমার চাকরি একটা রয়েছে, পুনরাবৃত্তি করল সে। আসলে আমি একজন র্যাঞ্চাইডার, আইনরক্ষী নই।
দুঃখের কথা! অ্যাডাম বিরক্ত হলো। তোমাকে পেলে আমি নিশ্চিন্ত হতাম।
কফিতে চুমুক দিয়ে মলির দিকে চোখ তুলে তাকাল। ম্যাম, বলল সে, আমি মনে-প্রাণে কামনা করছি, আমি শহর ছাড়ার আগে কোন কাউবয়ের সাথে যেন তোমার বিয়ে না হয়! চমৎকার কফি তৈরি করতে পারো তুমি। টেক্সাস ছাড়ার পর যত কফি খেয়েছি, এর সাথে তার তুলনা হয় না!
আবার দরজা খুলল। খাটো একটা মানুষ ভিতরে ঢুকল। পিপের মত বুক, চওড়া চোয়াল-নাকটা ভাঙা। চোখ দুটো নীল। অনেক মদ খেলেও, ওর চেহারা ঝাঁপসা হয়নি। ওর হাতের পাঞ্জা দুটো বড়। দুটো পিস্তল ঝুলছে ওর কোমরে, বেশ নিচুতে। দুটোই উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা।
শর্টি, কঠিন স্বরে বলল মলি, আবার মাতাল হয়েছে তুমি!
একটা বিশদ নির্লজ্জ হাসি দিল লোকটা। এখনও হইনি! আমার হাঁটা এখনও স্বাভাবিক আছে, কথাও জড়ায়নি। কিন্তু–অ্যাডাম আর জেরির দিকে তাকাল সে-কেমন যেন একটা বোটকা গন্ধ নাকে আসছে।
শর্টি একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওদের দিকে। ঠিক! খাটাসের মত গন্ধ। একটা নয়, দুটো! কপট বিস্ময়ে চারপাশে তাকাল সে। তৃতীয়টা কই?
অ্যাডামের চেহারা কঠিন হলো, ঠোঁট পরস্পারের ওপর চেপে বসল। জেরি সমার্সের চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। চোখ দুটোর পিছনে যেন সাক্ষাত শয়তানের বাসা। রনি আঁচ করতে পারছে, জেরি অপমানিত হওয়ার পরও কেন কিছু করতে ইতস্তত করছে। শর্টি এখানে জনপ্রিয়। জেরির হাতে সে মারা পড়লে, হাটে অনেক হাঁড়িই হয়তো ভাঙবে। এতে ওর ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। আর অ্যাডাম কোন অবস্থাতেই শর্টির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজি নয়। দৃশ্যটা থেকে অনেক কিছুই রনির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। কফিতে চুমুক দিতে দিতে সব খেয়াল করছে সে। শর্টি যে ওদের দুজনের কাউকেই ভয় পায় না, এটা পরিষ্কার। কারণ ওদের খোঁচাতে সে ইতস্তত করেনি। কিন্তু বিবাদে যাওয়াটা অ্যাডাম বা জেরি কারও জন্যেই লাভজনক হবে না।