টিনের কাপে কফি ঢেলে ড্যাশারের দিকে এগিয়ে দিল হ্যারি। এই কফি সম্পর্কে তোমাকে আগেই সাবধান করছি, বলল সে। একবার, কফি শেষ হওয়ার পর তলানিটা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। দেখা গেল চল্লিশ ভাগ কফি, চল্লিশ ভাগ ক্ষার, দশ ভাগ সোনা আর বাকি দশ ভাগ মিশ্র পদার্থ আছে ওর ভিতর।
এদিককার লোকজন, গভীর সুরেই বলে চলল সে, এই কারণেই সব সময়ে কফির শেষে তলানিটা পরীক্ষা করে দেখে। অনেক কাউহ্যাণ্ডই এভাবে সোনা পেয়ে বড়লোক হয়ে গেছে।
নাক দিয়ে অবজ্ঞাসূচক একটা শব্দ করল টেরি। ওর কথায় তুমি কান দিও না। উদ্ভট সব গল্প বানিয়ে বলা ওর অভ্যাস।
আমি গল্প বানাই? কক্ষণও না! প্রতিবাদ জানাল হ্যারি। চুপ করে বসে তোমার কফি খাও, বিরক্ত টেরি বলল।
একটু হেসে রনি তার নিজের কফিতে চুমুক দিল। কফির স্বাদ আর গন্ধে নাক কুঁচকাল সে। ওতে সোনা আছে কি না সেটা বোঝ না গেলেও, ক্ষার যে প্রচুর আছে এটা সত্যি। মনেমনে হাসল আবার। ক্যাম্পে কফি থেকে যত সোনার গুঁড়ো সে গিলেছে, তা একসাথে জড়ো করলে তার আজ নিজেরই একটা র্যাঞ্চ হতে পারত।
রনির দিকে ফিরল টেরি। ড্যাশার, আমি এই টেক্সান টার্কির সাথে একটানা দুবছর কাজ করেছি। এখন আমাকে কিড বা আর কারও সাথে জুটি বেঁধে কাজ করতে দেয়া যায় না? ওর গল্পে আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
ভাল কথা, হঠাৎ মুখ তুলে মন্তব্য করল লেকার, আমি শুনলাম জেরি সমার্স নাকি গোস্ট মাউন্টিনে সোনা পাওয়ার আশায় কিছু জমি কিনেছে! ওটা কর্ন প্যাচের পুবে।
সমার্স? ভুরু কুঁচকাল টেরি। আমি ধারণাই করতে পারিনি সে একজন মাইনার।
গোস্ট মাউন্টিন? কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন করল ফোরম্যান। এমন অদ্ভুত নাম কেন? রক্তরাঙা ট্রেইল
ওখানে নাকি ভূত আছে। স্টার সিটি ছিল ওখানকার একটা মাইনিং টাউন। ১৮৬৮তে ওটা খালি হয়ে গেল। কিন্তু দু’জন লোক মাইন শাক্ট দিয়ে নিচে পড়ে যায়–ওদের খুঁজে পাওয়ার আগেই ওরা খাবারের অভাবে মারা পড়েছিল। লোকে বলে ওখানে নাকি ভূত দেখা গেছে। আমার ধারণা ওটা কর্ন প্যাচের লোকেরাই রটিয়েছে।
শুনেছি কর্ন প্যাঁচ নাকি কঠিন জায়গা, মন্তব্য করল রনি।
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল টেরি। যেকোন সময়েই বিপজ্জনক। ওখানে বিল ওয়াটসন, একটা স্টোর, সেলুন আর জুয়ার আড্ডা চালায়। আউটলদের একটা নিরাপদ আখড়া। লোকটা সাপের থেকেও বিষাক্ত। নল কাটা একটা শটগান সবসময়েই কাছে রাখে। লোকে বলে ড্র পোকারে বিল ওস্তাদ।
চার, কি পাচজন আউটল ওখানে থাকে। তিনজন সবসময়েই থাকে। কিন্তু ওদের সংখ্যা বর্তমানে বিশেরও বেশি। সবাই কঠিন লোক।
বিদ্যুত লেফটি বর্তমানে ওখানে এসে হাজির হয়েছে, জানাল হ্যারি। টেক্সাসের বিগ বেণ্ডের লোক সে।
ওকে আমি চিনি, রনি বলল, ট্যালি মাউন্টিন দলের লোক।
টেক্সাসের হ্যারির চোখ দুটো চকচক করে উঠল। তুমি এলাকাটা চেনো? শাফটার থেকে একটু নিচে বান্ট ক্যাম্পে আমার জন্ম।
চিনি, মুচকি হেসে বলল ড্যাশার। ওটা ফ্রেসনো ক্যানিয়নের কাছে।
ঠিক বলেছ, দাঁত বের করে হাসল হ্যারি। যেন একজন দেশী ভাইয়ের দেখা মিলেছে। আশ্চর্য!
কাপটা ধুয়ে উঠে দাঁড়াল রকিঙ K-র ফোরম্যান। তুমি কি টহল দিয়ে এই এলাকার দেখাশোনা করছ, বাছা?
হ। অন্য কাউহ্যাণ্ডদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল, ওরা ঘোড়ার পেটি বাধায় ব্যস্ত। হঠাৎ সে নিচু স্বরে বলল, রনি, হয়তো কথাটা তোমাকে বলা আমার ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু আমার বিশ্বাস, এটা তোমার জানা উচিত। মিস লিসা কেসি মাজুবা ক্যানিয়নে এটা লোকের সাথে প্রায়ই দেখা করতে যায়। আমি ঝামেলা শুরু করতে চাইনি বলেই ভয়ে বেনকে জানাইনি।
সেটা ওর নিজস্ব ব্যাপার, মন্তব্য করল সে। এখানে আমাদের কাজ কেবল রেঞ্জ আর গরু দেখা।
হ্যাঁ। ছেলেটার মুখ লাল হলো। কিন্তু লোকটা সত্যিই খারাপ সে হচ্ছে পিস্তলবাজ, জেরি সমার্স!
নামটা শুনে একটু থমকাল ড্যাশার। কিড লেকারের অনুভূতি বুঝতে পারছে সে। সমার্স নোকটা হয়তো ভাল হতে পারে, কিন্তু মলির দোকানে দেখা সুদর্শন লোকটাকে তারও ভাল মনে হয়নি। মানুষ চিনতে তার কদাচিৎ ভুল হয়।
আমি-র্যাঞ্চে কিছু কথা আমার কানে এসেছে, যেচেই সে রনিকে জানাল। মেয়েটা ওর সাথে দেখা করুক এটা বস্ মোটেও চায় না। কথাটা কিছুদিন আগে বেন নিজেই বলেছে। জেরিকে র্যাঞ্চ থেকে বের করে দিয়েছিল সে। বেনের মুখের ওপরই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বেরিয়ে গেছিল সমার্স।
মাথা ঝাঁকাল রনি। ঠিক আছে, কিড। এ সম্পর্কে আর কারও সাথে আলাপ কোরো না। ব্যাপারটা আমার একটু ভেবে দেখতে হবে।
র্যাঞ্চে ফেরার পথে রনি আপন মনেই ভাবছে এটা তার কোন ব্যাপার নয়। এতে নাক গলানো তার উচিত নয়কোন মতেই না। পুরোটাই হয়তো ছেলেটার কল্পনা। লিসার প্রতি লেকারের দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর লিসা যে সুদর্শন সমার্সের প্রতি কেন আকৃষ্ট, সেটা বোঝা খুব সহজ।
ট্রেইল ধরে দু’মাইল পথ নীরবে চলার পর রনিই প্রথম মুখ খুলল। জেরির সম্পর্কে তোমরা কিছু জানো?
লোকটা খারাপ, নিচু স্বরে জানাল টেরি। গত বছর ইউনিয়নভিলে সে একজনকে মেরেছে…বিনা কারণে লোকটার সাথে ঝগড়া করে খেপিয়ে ওকে হত্যা করেছে। এর আগে তিনজনকে যে ও হত্যা করেছে, সেটা আমি জানি। এমন আরও দু’জন আছে, যাদের ব্যাপারে আমার ওকেই সন্দেহ হয়। ওর পার্টনার ডাকি–সেও প্রায় ওর মতই খারাপ।