পিছিয়ে এসে রনি দেখল, হ্যারির রাইফেলটা জিনের ওপর রাখা। বিপক্ষ দলের বাকি লোকজনকে কাভার করে রেখেছে। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটানো লোকটার দিকে দেখিয়ে সে বলল, দেখতেই পাচ্ছ, লঙ, ও লড়তে চেয়েছিল–মনে হচ্ছে ওর সাধ মিটেছে।
রেহাই পাবে না তুম! ভীষণ খেপেছে লঙ, কিন্তু সতর্কও হয়েছে। এখন ওর জেতার সম্ভাবনা আরও কমেছে। ধুলোয় লুটানো লোকটা নড়ছে না। যদি সে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতেও সক্ষম হয়, গোলাগুলির যুদ্ধ সামলাতে পারবে না।
তোমার ভাইদের জানিও, এখানে বার জন্যেই যথেষ্ট রেঞ্জ আছে। তোমাদের গরু রু-ওপাশে চরালে, আর আমাদের গরু খেদিয়ে নিলে, কোন বিরোধ হবে না। আমরা বিরোধ চাই না, কিন্তু ঝামেলা সামলাবার ক্ষমতা আমাদের আছে।
মার-খাওয়া লোকটা উঠে বসেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে কুয়াশা কাটাবার চেষ্টা করছে। কয়েক সেকেণ্ড পর রোষের সাথে রনির দিকে তাকাল। পরেরবার, রাগী কুকুরের মত দাঁত বের করল সে, গুলির লড়াই হবে!
অপেক্ষা কেন? ওর দিকে ঘুরে দাঁড়াল ড্যাশার। তোমার কোমরে পিস্তল রয়েছে। মরতে চাইলে ওদিকে হাত বাড়াও।
অনেকক্ষণ রনির দিকে তাকিয়ে রইল লোকটা। খুনের নেশা ওর চোখে। আগ্রহ আর উত্তেজনায় হাতের আঙুল মাঝেমাঝে লাফাচ্ছে। ধীরে চোখ থেকে খুনের নেশাটা কেটে গেল। এখন না, বলল সে। পরে।
ঠিক আছে, তাই হবে। লঙের দিকে চোখ ফেরাল ড্যাশার। আমি যদি তোমাদের কোন রাইডারকে কখনও এই রেঞ্জে দেখি, ঘোড়া হারাবে সে। হেঁটে ফিরতে হবে। কথাটা মনে রেখো!
কি? হুঙ্কার ছাড়ল লঙ। আগুন ঝরছে ওর চোখে। আম্পর্ধা! তোমাকে আমি—
রনির হিম-শীতল নীল চোখের দিকে চেয়ে ঢোক গিলল লঙ। কথাটা শেষ করতে পারল না। ঠিক আছে, আমন্ত্রণ জানাল ড্যাশার, ইচ্ছে থাকলে কিছু শুরু করো। তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে, নাকি তার পিঠে উপুড় হয়ে ফেরো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
ওরা ফিরে গেলে খিলখিল করে হেসে উঠল হ্যারি। ওহ! লঙের চেহারাটা লক্ষ করেছিলে? এই প্রথম কেউ একজন হিউবার্টের মুখোমুখি পঁড়িয়ে তাকে ভয়ে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করল। এটা ওরা সহজ ভাবে নেবে না!
টেরি দাঁত বের করে হাসল, কিন্তু ওর চোখে দুশ্চিন্তা। উচিত শিক্ষা হয়েছে ওদের, স্বীকার করল সে। কিন্তু ওরা এখন লোকজন নিয়ে গোলাগুলির জন্যে তৈরি হয়ে আসবে। ওদের কাউহ্যাণ্ডের সংখ্যা আমাদের চেয়ে বেশি।
ওরাও নিজেদের র্যাঞ্চের পথে রওনা হলো। রেঞ্জের চারপাশ ভাল করে খুঁটিয়ে দেখছে রনি। এই নেভাডা স্টেটটা অন্যান্য স্টেটের তুলনায় শুকনো। বসন্তকালটাই এখানকার সব থেকে ভাল সময় হলেও ততটা সবুজ নয়। যেসব জায়গায় উইন্টার ফ্যাট জন্মেছে সেগুলো হালকা ধূসর রঙ দেখে দূর থেকেই চেনা যায়। ওগুলোই এসব এলাকার সবচেয়ে ভাল চারণভূমি। কেসির রেঞ্জে উইন্টার ফ্যাট বেশি জন্মায়। ওগুলোর দখল, বিরোধের একটা মূল কারণ। সাথে কিছু অন্যরকম স্বার্থও জড়িত আছে।
কিছুক্ষণ নীরবে পথ চলার পর রনি প্রশ্ন করল, শহরে কোন বেকার ভাল রাইডার আছে? আমি এমন লোক কাজে নিতে চাই যারা ফাইট করবে।
কাঁধ উঁচাল হ্যারি। হয়তো দু’জন পাওয়া যাবে। শর্টি মাইক শহরেই আছে। দারুণ ফাইটার। কিন্তু বেন কেসির হয়ে কাজ করবে না সে। দু’বার প্রত্যাখ্যান করেছে। বুড়ো কেসির সাথে ওর কিছু সংঘর্ষ ঘটেছিল।
কঠিন কিছু?
না, কিছু কথা কাটাকাটি মাত্র। শর্টির ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। যেকোন বিপদের মুখে গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে সে এগিয়ে যেতে পারে। জেমস হার্টের সাথে ওর খুব ভাব ছিল। ওর একটাই দোষ কাজ না থাকলে মদে চুর হয়ে থাকে।
আর যখন কাজ করে?
কখনও ছুঁয়েও দেখে না। মানুষটা ঝগড়া-প্রিয়। কিন্তু ফাইটিঙের জন্যে ওর মত লোক তুমি কমই পাবে।
জেতে?
ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু তাতে ওর কোন আক্ষেপ নেই। ওর রক্তের সাথেই মিশে আছে মারপিট। ইউনিয়নভিলে একটা লোক ওকে তিনবার হারিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতি শনিবারে ওখানে লোকটার বিরুদ্ধে লড়তে যেত শর্টি। শেষে অতিষ্ঠ হয়ে লোকটা ওর থেকে দূরে থাকার জন্যে দেশ ছেড়েই চলে গেছে।
হাসল রনি। হয়তো শহরে গিয়ে শর্টির সাথে কথা বললে কিছু কাজ হতে পারে।
ওকে কোথায় পাওয়া যাবে?
মলি ব্রাউনের ওখানেই ও বেশি সময় কাটায়। বাকিটা নেভাডা সেলুনে।
একটা সরু ধোয়ার রেখা উঠতে দেখে, আকৃষ্ট হয়ে ওরা ওদিকে এগোল।
কিড লেকার তার আগুন থেকে মুখ তুলে চাইল। রাইফেলটা ওর পাশেই রাখা–কোমরেও পিস্তল ঝুলছে। পাতলা গড়নের কম বয়সী বেটপ একটা ছেলে। কিন্তু ওর হাসিটা সরল আর বিশদ। হাওডি! বলল সে। নেমে, বসো! কফি গরম আছে–খাবারও তৈরি হচ্ছে। রনির দিকে একটা চোরা-চাহনি দিল। ওখানে কি ঘটেছে তা আমি দেখেছি। আমি কাছেই ছিলাম।
মনোযোগ দিয়ে নতুন চোখে রনি ছেলেটাকে খুঁটিয়ে দেখল।
কাছেই মানে? কোথায় ছিলে তুমি?
তিনশো গজ দূরে একটা পাথরের আড়ালে। আমার রাইফেল সর্বক্ষণ লঙ হিউবার্টের দিকে তাক করা ছিল।
মাথা হেলিয়ে কিড লেকারের দিকে ইঙ্গিত করল টেরি। রাইফেলে ছেলেটার হাত ভাল, রনি। ওকে আমি তিনশো গজ দূরে ছুটন্ত অ্যানটিলৌপ শিকার করতে দেখেছি। ঠিক মাথায় লেগেছে গুলি।
ওটা কিছু না। লজ্জা পেয়েছে লেকার। শ্যুটিঙ করেই সারা জীবন কেটেছে আমার।