সিলভারের দিকে ফিরল মিক। তুমি ঠিকই বলেছ সিলভার। আমার পকেটে এখন চল্লিশ ডলার আছে। এখানে থাকলে, হয়তো চারশো ডলার থাকবে। কিন্তু মারা পড়লে ওই চারশো ডলার আমার কি কাজে আসবে? মনে হয় এমনও দিন আসবে যখন তুমিও ভাববে আমার সাথে চলে গেলেই তুমি ভাল করতে!
তিন দিন রেঞ্জটা ঘুরে ভাল করে চিনে নিল রনি। একবার ব্ল্যাক স্যাণ্ড ডেজার্টের দিকেও গেছিল। কিন্তু ঘাস নেই বলে গরু ওদিকে যাবে না। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই সে কাটাল, হে স্ট্যাক ভ্যালি, আর দূরের ব্লু মাউনটিনের আশেপাশে। পুরো এলাকাটা খুঁটিয়ে দেখছে সে। রেঞ্জের পুরোটাই সুন্দর করে রাখা হয়েছে। শান্তি পেলে বেন কেসি উন্নতি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
র্যাঞ্চ বাড়িটা অ্যান্টিলৌপের পশ্চিম ঢালে। কিন্তু ছোট একটা গিরিপথ ধরে সহজেই পুবের বিশাল রেঞ্জে পৌঁছা’নো যায়। ওখানে ওদের প্রচুর গরু চরে। ওই রেঞ্জ নিয়েই তিন ভাইয়ের সাথে কে র্যাঞ্চের বিরোধ। কেবল গরুই চুরি করছে না–ওরা নিজেদের গরু কে রেঞ্জে চরাতে শুরু করেছে।
দক্ষিণে কে-র্যাঞ্চের গরু পোকার গ্যাপ আর কাউ ক্রীক ক্যানিয়ন, আর পশ্চিমে ব্ল্যাক স্যাণ্ড ডেজার্ট পর্যন্ত চরে বেড়ায়। টেরির কথায় রনি জানল দক্ষিণ-পুবে কর্ন প্যাঁচ নামে একটা আউটল গ্রাম আছে। মাঝেমাঝে ওটা শূন্য থাকে, আবার কখনও লোক গিজগিজ করে। আর
এখন? প্রশ্ন করল রনি।
লোকজনে ভরা, বিষণ্ণ মুখে জানাল টেরি। নতুন শিকার ধরার আগে কয়েটিরা যেমন একজোট হয়, ঠিক তেমনি। কিন্তু হিউবার্ট ভাইয়েরা আমার মতে সাধারণ আউটলর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। ওরা প্রত্যেকেই শক্ত লোক, আর জঘন্য রকম নীচ। বিবাদে ঝাপিয়ে পড়তে ওরা ওস্তাদ। ওদের দৌরাত্মে ব্লু ক্লে সাইডহিলে কেউ টিকতে পারেনি!
ওদের দেখা পেলে আমরা ওদের সাথে কথা বলব, সহজ স্বরে বলল রনি।
তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না, টেরি শুষ্ক স্বরে বলল। ওই যে ওরা আসছে।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে এল হ্যারি। ওই যে, লঙ হিউবার্ট তার লোকজন নিয়ে আসছে, জানাল সে।
ওরা সংখ্যায় চারজন। আরোহীরা দ্রুত এগিয়ে এল। রনি ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।
হাওডি, ঠাণ্ডা স্বরে বলল সে। আমি ধরে নিচ্ছি তুমিই লঙ হিউবার্ট।
ওদের মধ্যে সবথেকে লম্বা আর চিকন লোকটা মুখ বাঁকিয়ে ওর দিকে বিদ্বেষের চোখে তাকাল। তুমি ঠিকই ধরেছ, কিন্তু তোমরা থ্রী এইচ এর রেঞ্জে রয়েছ।
আমি যতদূর জানি এটা কে-রেঞ্জ, হেসে জবাব দিল রনি। শুধু এটাই নয়, ব্লু পর্যন্ত পুরোটাই ওদের জমি। থ্রী-এইচ আসার বহু আগে থেকেই ওরা এখানে আছে। রেঞ্জটা তোমাদের কি করে হলো?
কৈফিয়ত আমি দেব না! বিচ্ছিরি শব্দ তুলে জোরে হেসে উঠল লঙ। বুড়ো কেসি বেঁচে থাকতে সে গায়ের জোরে প্রতিবেশীদের সব জায়গা কেড়ে নিয়েছিল। এখন বুড়ো মরেছে, সুতরাং তোমরা যেতে পারো–আর ফিরো না!
ঘোড়ার পিঠে বসেই ঠাণ্ডা নীল চোখে থ্র-এইচ রাইডারদের একেএকে খুঁটিয়ে দেখল রনি।
লঙ, নিচু স্বরে বলল সে, এটা রকিঙ কে-রেঞ্জ। আগেও ছিল, এখনও আছে। ব্লু মাউনটিনসের ওপাশে প্রচুর জমি রয়েছে। তোমরা গরু চরাতে চাইলে, আর কেউ নিয়ে। য়ার আগেই তোমাদের ওখানে যাওয়া উচিত। তুমি আর তোমার ভাইয়েরা শান্তিতে থাকতে চাইলে সেটা সম্ভব। কিন্তু তোমরা যুদ্ধ চাইলে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই–এখনই শুরু করতে পারো।
অ্যাঁ? কথাগুলো রনি এত নিচু স্বরে বলেছে যে কথার মর্ম উপলব্ধি করতে লঙের কিছুটা সময় লাগল। যখন বুঝল, রাগে ওর মুখটা লাল এবং ভীষণ হয়ে উঠল। কিন্তু সেই সাথে একটা ঠাণ্ডা অনুভূতিও জাগল। পরিস্থিতিটা ওদের অনুকূলে আছে বলা যায় না। সাঙ্ঘাতিক লোক বলে রনির নাম আছে। টেরি আর হ্যারির থেকেও কোন দুর্বলতা আশা করা যায় না। গানম্যান না হলেও ওরা পাশাপাশি দাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইট করবে। লঙ বোকা নয়। সেই যে ওদের তিনজনেরই প্রথম টার্গেট হবে এটা সে জানে। ইতস্তত করছে হিউবার্ট।
ঘোড়াটাকে এগিয়ে নিয়ে রনি ওর খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আমার কথা কানে গেছে তোমার? যুদ্ধ, না শান্তি, কোনটা চাও তোমরা? যুদ্ধের কথা তুমিই প্রথম তুলেছ। অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। মনস্থির করে নাও। যুদ্ধ চাইলে তোমাদের তাই দেয়া হবে।
লঙের পিছনে, একটু বাম দিকে বিষণ্ণ চেহারার একটা লোক গোড়ার পিঠে বসে আছে। উঁচু গালের-হাড়ের ওপর ছোটছোট দুটো চোখ। চোয়ালটা ভারি আর নিষ্ঠুর। ওকে আমার হাতে ছেড়ে দাও, লঙ, অনুনয় করে বস-এর অনুমতি চাইল সে। অনেক বড় বড় কথা—
ওর কথাটা শেষ হলো না। রনির উল্টো হাতের ঘুসি খেয়ে জিনের ওপর টলে উঠল আংশিক টাকমাথা লোকটা। পাদানি থেকে ওর ডান পা ছুটে গেছে। একটু ঝুঁকে ওর পাটা হেঁচকা টানে উপরে তুলল ড্যাশার। আছাড় খেয়ে সশব্দে মাটিতে পড়ল সে। লোকটা সামলে ওঠার আগেই লাফিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল রনি। পরক্ষণেই শার্টের কলার ধরে ওকে ধুলো থেকে টেনে তুলে প্রচণ্ড একটা ডান-হাতি ঘুসি মেরে লোকটাকে আবার মাটিতে ফেলে পিছিয়ে এল।
প্রচণ্ড ঘুসিতে কুতকুতে চোখের লোকটার ধাঁধা লেগে গেছে। মাথা আঁকাল সে। পরিস্থিতিটা কিছুটা পরিষ্কার হতেই মুখ দিয়ে ঘোৎ করে একটা শব্দ তুলে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। হাত ঘুরিয়ে বাম হাতের ঘুসিতে ওর গাল হাড় পর্যন্ত চিরে গেল। ডান হাতের বিরাশি-সিক্কা ঘুসিটা থুতনির ওপর পড়তেই মুখ থুবড়ে ধুলোর ওপর পড়ল সে।