ওদের সঙ্গে মাত্র চারটে ঘোড়া আছে, ওগুলোকে গুহায় নিয়ে এল পল!
আপত্তি তুলল একজন। ওকে শান্ত করল কেড্রিক। এখানে পানি আছে, কিন্তু বলা যায় না, যে কোনও মুহূর্তে ঘোড়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
ঢোক গিলে কেড্রিকের দিকে তাকিয়ে রইল লোকটা।
কেড্রিকের শার্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করল পিট লেইন। তোমার গায়ে গুলি লেগেছে! রক্ত বেরোচ্ছে!
সহজ ভঙ্গিতে হাসল পল। আরে, রক্ত না, হুইস্কি। আমার একটা বোতলের বারটা বেজে গেছে!
পিটও হাসল। রক্ত হলেই ভালো ছিল,বলল সে, ওসব জিনিস নষ্ট হলে চলে!
সুস্থরা সবাই খাদের মুখে জড়ো হয়েছে। কেড্রিকের দিকে তাকিয়ে হাসল একজন। তাই তো বলি, সেদিন পালিয়েছিলে কোথায়? বেরুনোর আরেকটা পথ আছে, না?
মাথা নাড়ল কেড্রিক। থাকলেও জানি না। আসলে এখানেই ঘাপটি মেরে ছিলাম। যেই দেখলাম পাহারা নেই, ক্যানিয়ন দিয়েই সুড়ৎ করে সটকে পড়লাম।
গম্ভীর হয়ে উঠল পিট লেইনের চেহারা। ইচ্ছে করলে আমাদের ঘেরাও করে বসে থাকতে পারবে ওরা, কণ্ঠস্বরে উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেল, কিছু করার থাকবে না।
কেড্রিক মাথা দোলাল। একটা পানির ক্যান্টিন আর কিছু খাবার নিয়ে মেসার মাথায় বার্ট উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছি আমি। আমার সাথে আরেকজনকে আসতে হবে। ওখানে বসে ব্যাটাদের ঠেকিয়ে দেব।
আমি আছি, শান্ত কণ্ঠে বলল লরেডো শ্যাড। দাঁড়াও জিনিসপত্র নিয়ে আসি।
একটা রাইফেল গর্জে উঠল। একটু পরেই ডাই রীড যোগ দিল ওদের সঙ্গে। ওরা আসছে! বলল সে। কেড্রিকের দিকে তাকাল। বোল্ডারের পেছনে একজন মারা গেছে। দূরবীনে ব্যাটার চেহারা দেখেছি। লোকটার নাম আলফ্রেড ক্রকেট। অন্যজন ছিল পয়েন্টে।
ক্রকেট একটা নির্ভেজাল হারামজাদা, বার্নেট নামে একজন সেটলার বলল, একনম্বর শয়তান। ক্যাম্পাসে থাকতে এক লোককে খুন করে, পালিয়েছিল। আরেকবার তার দলেরই একজন নিখোঁজ হয়ে যায়। সবার। বিশ্বাস লোকটার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে ক্রকেটের হাত ছিল।
পিট লেইনের দিকে তাকাল কেড্রিক। এখানেই শেষ মোকাবিলা হবে মনে হচ্ছে, বলল ও, যতক্ষণ সম্ভব গুলি ছুঁড়ো না। অপ্রয়োজনে কিছুতেই গুলি নষ্ট করা যাবে না। আমরা মেসার চুড়ায় থাকব।
খাদ থেকে বেরিয়ে এল কেড্রিক। তারপর লরেডোকে সঙ্গে করে বোল্ডার আর ঝোঁপঝাড়ের ভেতর ঢুকে পড়ল। শত্রুপক্ষের কারও চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কেড্রিকের ধারণা, ক্যানিয়নের পেছনে রিমে উঠে ওদের কাভার দেয়ার জন্যে লোক পাঠানো হয়েছে, তার পৌঁছুনোর অপেক্ষা করছে ওরা।
আকাশছোঁয়া ইয়েলো বাটের চূড়ার দিকে তাকাল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। ঝাড়া দেড়শো ফুট খাড়াভাবে উঠে গেছে, বেশির ভাগ অংশ নগ্ন-আড়াল নেই। ক্যানিয়নের মাথায় ধুলোর মেঘ দেখা গেল। গুলি করেছে বার্ট উইলিয়ামস।
ওরা মেসার দিকে পা বাড়াতেই এক পশলা গুলি ছুটে এল। পিছিয়ে এল লরেডো। হতোদ্যম। নাহ, সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার আগেই যদি হামলে পড়ে ব্যাটারা?
তাতে লাভ হবে না। মেসার পাদদেশে অসংখ্য বোন্ডারের আড়ালে গুটিসুটি হয়ে বসল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। এই যে চমৎকার একটা ফায়্যারিং পয়েন্ট পেয়ে গেছি আমরা। একটা সিগারেট রোল করে ধরাল ও। এই ঝামেলা শেষ হয়ে গেলে কী করবে, শ্যাড? এখানেই থেকে যাবে?
দীর্ঘদেহী টেক্সান কাঁধ ঝাঁকাল। এখনও কিছু ভাবি নি। সময়েই দেখা যাবে। তুমি?
ওদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোগলনস নামে একটা জায়গা আছে, চেনো? ভাবছি ওখানে নিজস্ব একটা র্যাঞ্চ গড়ে তুলব।
আমিও হয়তো এরকম কিছুই করব, শান্ত কণ্ঠে বলল লরেডো শ্যাড। নিজের একটা র্যাঞ্চ গড়া আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। সত্যি বলতে কী একবার র্যাঞ্চ কিনেছিলাম। কিন্তু রাখতে পারি নি, পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছি।
ক্যানিয়ন বরাবর বাইরে তাকাল লরেডো শ্যাড। রাইফেলটা হাঁটুর ওপর ফেলে রেখেছে ও। কেড্রিকের দিকে না তাকিয়েই সহজ কণ্ঠে বলল, এখান থেকে রেহাই পেতে আমাদের স্বয়ং খোদার সাহায্য লাগবে, ক্যাপন।
হুম, কেড্রিকের চেহারা গম্ভীর। আচ্ছা, ক্যানিয়নের মুখে পাহারায় কে আছে এখন-মানে কার থাকার কথা?
ওয়ালেস।
ওর সাথে কথা বলতে হবে। এখনও আছে ওখানে?
উম-নাহ, নেই। কোথাও গা ঢাকা দিয়েছে বোধ হয়।
অথবা বিকিয়ে গেছে। তুমিই বলেছিলে–সিঙ্গারের মতো আরও লোক থাকতে পারে।
সিগারেটের গোড়া পিষে নেভাল, লরেডো শ্যাড। শিগগিরই আক্রমণ চালাবে ওরা, পল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ঝামেলা চুকিয়ে দেয়া দরকার। তারপর সোজা মাস্ট্যাংয়ে যাব, মরতেই যদি হয় কীথ আর বারউইক এই দুই শয়তানকে নিয়ে মরতে চাই আমি।
মাথা নেড়ে সায় দিল কেড্রিক। খাদে আশ্রিতদের কথা ভাবছে। শ্যাঙ, লেইন আর রীডকে বাদ দিলে আরও অন্তত চারজন, সাহসী লোক আছে। এখানে। তার মানে, মোটেই দুর্বল নয় ওরা। অবশ্য সংখ্যায় শত্রুপক্ষ ভারি। যুদ্ধের শুরুতে বারজন লোক ছিল ওদিকে। আলফ্রেড ক্রকেট মারা গেছে। আরও লোকের আমদানি না ঘটে থাকলে, তিনজনে এগিয়ে আছে ওরা। তবে নতুন লোকের আমদানি হওয়াই স্বাভাবিক। কেড্রিকরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করবে-এটাই ধরে নেবে প্রতিপক্ষকিন্তু যদি উল্টো হামলা চালানো হয়?
সামনে তাকাল কেড্রিক। হঠাৎ প্রায় দেড়শো গজ দূরে, ক্যানিয়নের দেয়ালে বেশ উঁচুতে একটা ছায়ামূর্তি দেখা দিল। রাইফেল তুলে গুলি করল ছায়াটা, সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা গুলি করল শ্যাড আর কেড্রিক। অদৃশ্য হলো ছায়া, তবে চোট পেয়েছে কি না বোঝা গেল না।