- বইয়ের নামঃ আক্রান্ত শহর
- লেখকের নামঃশওকত হােসেন
- সিরিজঃ ওয়েস্টার্ন সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ওয়েস্টার্ন, কল্পকাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
আক্রান্ত শহর
০১.ঝিম মেরে আছে মাস্ট্যাং
ঝিম মেরে আছে মাস্ট্যাং। তিন দিন হলো পিস্তলবাজি নেই, খুনোখুনি নেই, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। এ-শহরে আসল রূপ সবার চেনা, তাই আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। হরদম খুন-খারাবী শুরু হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে সবাই। বন্দুকবাজি ছাড়া কটা দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। সবার মনে জিজ্ঞাসা: কার কপালে মরণ লেখা আছে এরপর?
এদিকে ক্লে অ্যালিসন, যার হাতে তিরিশজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, মরমন হাউসে জমিয়ে পোকার খেলছে; ফাঁসির আসামী ব্ল্যাক জ্যাক কেচাম মদ খেয়ে বেসামাল অবস্থায় ফিরে গেছে সেইন্ট জেমস-এর নিজের কামরায়। যে কোনও মুহূর্তে মহা গোলমাল শুরু হয়ে যেতে পারে! সেইন্ট জেমস্ হোটেলের ছায়া ঢাকা প্রশস্ত বারান্দা, শহরে নতুন এসেছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক, একটা ঝকঝকে নতুন চেয়ারে বসে কৌতূহলী চোখে রাস্তা জরিপ করছে।
দীর্ঘদেহী একহারা গড়নের যুবক পল কেড্রিক, স্বল্পভাষী, এক মাথা লালচে বাদামি চুল, তামাটে চেহারা, সবুজ একজোড়া চোখ। সব মিলিয়ে সুদর্শন।
বাক বোর্ড ফ্রেইট ওয়্যাগনে গিজ গিজ করছে শহরের রাস্তা; এই মাত্র একটা স্টেজ কোচ পৌঁছেছে, একটু বাদেই রওনা হতে যাচ্ছে আরেকটা। হিচরেইলগুলোয় নানান ব্র্যান্ডের অসংখ্য ঘোড় দাঁড়িয়ে ঝিমুচ্ছে।
পাশে এক তরুণ এসে দাঁড়িয়েছে হঠাৎ টের পেল কেড্রিক, চোখ তুলে তাকাল। অল্পবয়সী ছোকরা, ধূসর চোখে তাকিয়ে ওর দিকে। লম্বা চুল কাঁধ অবধি নেমে এসেছে তার।
ক্যাপন কেড্রিক?
জিজ্ঞেস করল নবাগত তরুণ। আমি ডরনি শ। জুন গুন্টারের কাছ থেকে আসছি।
ও, তাই? উঠে দাঁড়াল কেড্রিক, করমর্দনের জন্যে হাত বাড়াল। তোমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। তুমি গুন্টারের লোক?
বিদ্রূপ খেলে গেল যেন শর ধূসর চোখে। গুন্টারের সঙ্গী, শুধরে দিল সে। আমি কারও চাকরি করি না!
আচ্ছা, বুঝেছি।
আসলে বোঝে নি কেড্রিক। ধৈর্য ধরবে, স্থির করল ও, ব্যাপারটা কী জানতে হবে। ছেলেটার হাবভাবে কোথায় যেন একটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে, সতর্ক করে তুলছে ওকে।
গুন্টার কোথায়?
আসছে। তুমি এসেছ কিনা দেখতে বলল আমাকে। হোটেলের কাছাকাছি অপেক্ষা করতে বলেছে তোমায়।
ঠিক আছে। তুমি দাঁড়িয়ে কেন, বসো?
সার বাঁধা চেয়ারগুলোর দিকে এক নজর তাকাল ডরনি শ। না, আমি হাতলঅলা চেয়ারে বসি না, অসুবিধে হয়।
অসুবিধে? চোখ তুলে তাকাল কেড্রিক, শর কোমরে ঝোলানো পিস্তলজোড়ার দিকে নজর গেল। বুঝেছি। পিস্তলের বাঁট দুটো বাইরের দিকে ছড়ানো। ওগুলোর দিকে ইঙ্গিত করল কেড্রিক। টাউন মার্শাল আপত্তি করে না?
কেড্রিকের দিকে তাকাল ডরনি শ, ধীরে ধীরে এক চিলতে হাসি দেখা দিল ঠোঁটে। না, করলে খারাপ হয়ে যাবে না!
আসলে, একটু থেমে আবার বলল সে, মাস্ট্যাংয়ে কাউকেই কিছু বলার সাহস নেই তার। শহর ভর্তি গুণ্ডা-পাণ্ডা। এখানে কোনও মার্শাল বেশিদিন টেকে না। তেমন লোক কোথায়?
হাঁসল কেড্রিক। হিকক? ইয়্যাৰ্প? ম্যাস্টারসন?
ওরা হয়তো টিকতে পারে, ডরনি শয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট সন্দেহ, তবু আমার সন্দেহ আছে। অ্যালিসন এখন এখানে, জ্যাক কেচামও, বিলি, দ্য কিড দলবল নিয়ে আশপাশে ঘুরঘুর করছে। এই রকম শহরের মার্শালকে ক্ষিপ্র পিস্তলবাজ হতে হয়, প্রতিদিন নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে তাকে।
ঠিক বলেছ, আড়চোখে ডরনি শকে মাপল কেড্রিক। কী আছে ছেলেটার মাঝে, যা অস্বস্তি জাগিয়ে দিচ্ছে? পিস্তলজোড়া নয়; দুই পিস্তল ঝোলায় এমন লোক অনেক দেখেছে ও; সত্যি বলতে ওদের মাঝেই বেড়ে উঠেছে। নাহ্, অন্য কিছু, এর প্রতিটি ভঙ্গিতেই কেমন যেন অশুভ ইঙ্গিত আছে, সাপের চোখের দিকে তাকালে যেমন হয়-ভীতিকর অনুভূতি জাগে মনে।
লোকজন যোগাড় হয়ে গেছে, খানিক পর বলল ডরনি শ। লরেডো শ্যাডকে আমার কাজের লোক বলেই মনে হয়েছে। কঠিন, ক্ষিপ্র পিস্তলবাজ। ফেসেনডেন, পয়েন্সেট, গফ-এরাও, যোগ দিয়েছে, আমাদের সঙ্গে। ডরনি শয়ের বলার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে নামগুলো অর্থবহ। কিন্তু কেড্রিকের কোনও প্রতিক্রিয়া হলো না। ফেসেনডেন নামটা চেনা চেনা লাগলেও, নিশ্চিত হতে পারল না ও। ঘাড় ফিরিয়ে রাস্তার দিকে তাকাল আবার, ভিড়ের ওপর চোখ বোলাল।
ওরা সত্যি লড়বে? রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়েই জানতে চাইল ও। তেমন লোক আছে?
লড়বে মানে? শুষ্ক কণ্ঠে বলল ডরনি শ, জানপ্রাণ দিয়ে লড়বে! কঠিন লোকের অভাব নেই ওখানে। ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়াও আরও বিপদের মোকাবিলা করেছে। কাউকে পরোয়া করে না ওরা। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কেড্রিকের দিকে তাকাল সে। গুন্টার বলছিল, তুমি লড়াকু লোক।
শয়ের কণ্ঠে কি সন্দেহ প্রকাশ পেল?
মুচকি হেসে কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক।
আগে পশ্চিমে এসেছ?।
নিশ্চয়ই! গোল্ড রাশের কিছুদিন আগে ক্যালিফোর্নিয়াতে আমার জন্ম; যুদ্ধের সময় বয়স ছিল ষোল, নেভাদার একটা দলের সঙ্গে তখনই যুদ্ধে যোগ দিই। যুদ্ধ শেষ হবার পরেও দুবছর পশ্চিমে কাটিয়েছি। অ্যাপাচিদের বিরুদ্ধে। লড়াই করেছি।