- বইয়ের নামঃ আরব জাতির ইতিহাস
- লেখকের নামঃ ফিলিপ কে. হিট্টি
- প্রকাশনাঃ জ্ঞান বিতরণী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, ইতিহাস
আরব জাতির ইতিহাস
০. ভূমিকা, বাংলা সংস্করণ, গ্রন্থকার
আরব জাতির ইতিহাস
মূল : ফিলিপ কে. হিট্টি
অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ
ভূমিকা
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, প্রাচ্য ভাষা ও ইতিহাসের বিদগ্ধ পণ্ডিত স্যার ফিলিপ কে হিট্টি (১৮৮৬-১৯৭৮)-র মশহুর গ্রন্থ History of the Arabs। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে হিট্টির এই হৈৎ গ্রহের একটি সংক্ষিপ্ত (Abridged) সংস্করণ ‘দ্য আরবস : এ শর্ট হিস্ট্রি’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় নিউ ইয়র্ক থেকে। প্রিন্সিপ্যাল ইবরাহীম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৮) সেই সংক্ষিপ্ত সংস্করণটির বাংলা অনুবাদ করেন “আরব জাতির ইতিকথা” শিরোনামে। ঢাকাস্থ ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশন্সের সহযোগিতায় ইসলামিক একাডেমী কর্তৃক অনুবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে। পরবর্তীকালে বাংলা একাডেমী কর্তৃক ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত এবং মৎসম্পাদিত ইবরাহীম খাঁ রনোবলীর দ্বিতীয় খণ্ডে অনুবাদগ্রন্থটি সংস্থিত হয়। প্রকাশনা সংস্থা ‘জ্ঞান বিতরণী’ ‘আরব জাতির ইতিকথা’কে ‘আরব জাতির ইতিহাস’ শিরোনামে পুণঃমূদ্রণের উদ্যোগ নেয়ায় এবং তার ভূমিকা লেখার জন্য আমাকে অনুরোধ রাখায় বিশেষ সাধুবাদ আর ধন্যবাদ জানাই। গ্রন্থের মূল লেখক এবং অনুবাদককেও এ সুবাদে সর্বাগ্রে স্মরণ করি বিম্র শ্রদ্ধায়, মাগফিরাত কামনা করি তাঁদের বিদেহী আত্মার। তাঁদের পরিশ্রম আর আন্তরিকতার একান্ত ফসল ভাবীকালের পাঠকেরা যুগ যুগান্তরে উপভোগ করে চলেছেন ও চলবেনও। অগণিত পাঠকের করকমলে এই অমর সৃষ্টি পৌঁছানোর যে কোন উদ্যোগ একই সাথে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকল।
স্যার ফিলিপ খৃরী হিট্টি (Sir Philip Khuri Hitti) অটোমান সিরিয়া (বর্তমান লেবানন)-র শিমলানে ম্যারোনাইট খ্রীস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালে। তিনি লেবাননের সাক আল গারব এলাকার আমেরিকান প্রেবিটারিয়ান মিশনারী স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং ১৯০৮ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত থেকে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতেই কিছুদিন অধ্যাপনার পর তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, সেখানে সিমেটিক ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভসহ ১৯১৫ সালে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে হিট্টি আবার বৈরুত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং ১৯২৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনায় কাটান। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তাকে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ চেয়ার দেয়া হয় এবং ১৯৫৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা ও ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি হার্ভার্ড-এ অতি সম্মানজনক পদে এবং ইউটা ও ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সামার স্কুলে অধ্যাপনা করেন। এ সময় ইউনিভার্সিটি অব মিনোসোটাতে গবেষণা পর্ষদেও সংযুক্ত হন। সমগ্র মার্কিন মুলুকে হিট্টি একক হাতে আরবী ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চার প্রবর্তন ঘটান (‘Philip Hitti almost single handedly created the discipline of Arabic Studies in the United States.’ Wikipedia) ১৯৪৫ সালে সান ফ্রানসিসকোতে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাতিসংঘের জন্ম হয় সেই সম্মেলনে হিট্টি আরব প্রতিনিধিদলের উপদেষ্টা ছিলেন। ম্যাগনাম অপাস ‘হিস্ট্রি অব দ্য আরবস’ ছাড়াও তার অন্যান্য প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে–The Syrians in America (1924); The Origins of the Druze People and Religion : with extracts from their sacred writings (1928); An Arab-Syrian Gentlemen in the Period of the Crusades : Memoirs of Usamah ibn Munqidh (1929); History of Syria : Including Lebanon and Palestine (1957); The Arabs (1960); Lebanon in History (1967); Makers of Arab History (1968); The Near East in History (1961); Islam and the West (1962); Islam : A Way of Life (1970); Capital Cities of Arab Islam (1973).
মূল ‘হিস্ট্রি অব দ্য আরবস’ রচনায় হিট্টি দশ দশটি বছর সময় নেন। ১৯৩৭ সালে প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ম্যাকমিলান কর্তৃক লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক থেকে এটি একযোগে প্রথম প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বে সাড়া পড়ে যায়। বলাবাহুল্য, হিট্টির এই আকর গ্রন্থটির মাধ্যমে আরব জাতি, তাদের জীবন সাধনা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং বিশেষভাবে ইসলাম ধর্মের বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বহির্বিশ্বের অবগতির অবয়ব বৃদ্ধি পায়। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বদৌলতে বইটির সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশিত হলে বহু ইউরোপীয় ও এশীয় ভাষায় এর অনুবাদে ধুম পড়ে যায়। ইবরাহীম খাঁ-র বাংলা অনুবাদ প্রকাশের প্রাক্কালে ১ এপ্রিল ১৯৫৭ তারিখে হিট্টি নিজে ‘গভীর আনন্দ প্রকাশ করে’ লিখেন যে, ‘এ বইয়ের একটা বাংলা সংস্করণও এখন আত্মপ্রকাশ করছে। বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপুঞ্জের ইন্দো আর্য উপ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত দূর প্রাচ্যের ভাষা সমষ্টির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ভাষা। ধর্মীয় ও সাহিত্যিক চিন্তাধারার বাহন হিসেবে এ ভাষার সুদীর্ঘ ও মহত্তম ঐতিহ্য রয়েছে।’