কাছেই দেয়ালে পেরেকের সঙ্গে ঝুলছে ওর পিস্তল দুটো। সেইন্ট জেমস থেকে আস্তাবলে রেখে আসা ব্যাগটাও আছে এক কোণে।
সন্ধ্যা নাগাদ চূড়ান্ত হয়ে গেল কেড্রিকের পরিকল্পনা। এর পরপরই লরেডো শ্যাড এল, বিস্তারিত জানাল ওকে। সিম্যারন? একটু ভেবে মাথা দোলাল লরেডো, বুমফীল্ড হলে কাছে হত না? কী বলে?
ঠিক আছে, সায় দিল কেড্রিক, তা হলে আর দেরি করো না।
ও-নিয়ে ভাবছি না, তামাক চিবুতে চিবুতে বলল লরেডো শ্যাড। কদিন থেকেই খুবই সন্দেহবণ হয়ে উঠেছে ওরা। আমি বাইরে থাকতে থাকতেই ট্রেইল করে এখানে এসে পড়লে?
ঝুঁকি না নিয়ে উপায় নেই। এই যে নাও, টেলিগ্রাম আর চিঠি দেরি করো না!
.
জানালা গলে রোদ ঢুকে গড়াগড়ি যাচ্ছৈ কামরায়। নাশতা নিয়ে ভেতরে এল সামান্থা ফক্স। কেড্রিকের দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল চেহারা। আরে তুমি দেখছি বসে আছ?
বোকার মতো হাসল কেড্রিক। হ্যাঁ, শুয়ে শুয়ে তো কম দিন কাটালাম না। আচ্ছা, কদিন হলো বলো তো?
প্রায় দুসপ্তাহ, বলল সামান্থা, কিন্তু এখন কিছুতেই হাঁটাহাঁটি করা চলবে না। আরও কিছু দিন বিশ্রাম নিতে হবে।
জানালার কাছে এক কোণে বসলে নীচের ট্রেইলে সহজে নজর রাখা যায়। কেড্রিক ওখানে বসার পর একজোড়া উইনচেস্টার ওকে এনে দিল সামান্থা। অস্ত্র দুটো পরিষ্কার করে নিল কেড্রিক, যত্নের সঙ্গে তেল দিয়ে পালিশ করল; তারপর টোটা ভরে জানালার সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখল। এবার পিস্তলদুটো পরীক্ষা করে ঢুকিয়ে রাখল হোলস্টারে। সব ঔষে স্যাডলব্যাগ থেকে ওয়েলশ নেভী পিস্তল দুটি বের করে পরখ করল।
এখন আর কিছুই হয়তো করার নেই, ভাবছে কেড্রিক, অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু আরও আগে র্যানসামের কথা মনে পড়ল না কেন? আশ্চর্য! ফ্রেডরিক র্যানস্যামের মতো আঁদরেল উকিল সারা ওয়াশিংটনে আর আছে। কিনা সন্দেহ। গৃহযুদ্ধের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে ওরা। ফ্রাংকো প্রশিয়ান ওঅরে, ফ্রান্সে থাকতে ওর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিদর্শক হিশেবে ওখানে গিয়েছিল রানসাম। কোম্পানির জমি কেনায় কেউ যদি বাধা দিতে পারে, একমাত্র ও-ই পারবে, সময় যত কমই হোক না কেন!
টেলিগ্রামের সঙ্গে বিস্তারিত বিবরণসহ চিঠিও যাচ্ছে র্যানসামের কাছে, ওটার সাহায্যে একটা উপায় ঠিকই বের করে ফেলবে ও। জনপ্রিয় এবং করিৎকর্মা তরুণ সিটের র্যানসামের উঁচু মহলে যথেষ্ট যোগাযোগ, অমায়িক ব্যবহার দিয়ে সহজে যে কোনও কাজ আদায় করে নিতে পারে। তা ছাড়া র্যানসাম একজন সুযোগ্য স্ট্রাটেজিস্টও বটে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন একজন লোকই দরকার।
পাহাড়ের অনেকটা ভেতরে লোকচক্ষুর আড়ালে যে কোনও হামলা ঠেকানোর উপযোগী করে বানানো হয়েছে এই ঘরটা। এই পাহাড়ের নাম, সামান্থা জানিয়েছে, থিভিং-রক। শাদারা এখানে আসার বহু আগে যেসব ইন্ডিয়ান থাকত, ভয়ঙ্কর চোর ছিল ওরা, তাই, এই নামকরণ। এখানে ঝর্না থাকায় পানির অভাব নেই। জরুরি প্রয়োজন মেটাবার মতো রসদপত্র রাখারও ব্যবস্থা আছে।
ধীরে ধীরে আরও দুটো দিন কেটে গেল। ততীয় দিন সকালে, জানালার পাশে বসতে যাবে, এমন সময় নীচের সংকীর্ণ ক্যানিয়নে একজন ঘোড়সওয়ারকে ঢুকতে দেখল কেড্রিক।
আস্তে আস্তে এগোচ্ছে লোকটা, তীক্ষ্ণ চোখে ট্রেইল জরিপ করছে। মাঝে মাঝে থামছে, সতর্ক নজর বোলাচ্ছে চারদিকে।
উঠে দাঁড়াল ক্যাপ্টেন কেড্রিক র একটা উইনচেস্টার নিয়ে পাশের কামরায় চলে এল।
সামান্থা? মৃদু কণ্ঠে ডাকল ও।
সাড়া নেই।
একটু অপেক্ষা করে আবার ডাকল পল। সাড়া মিলল না।
এবার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল কেড্রিক, মনে পড়ল, সজির ঘাটতি মেটাবার জন্যে স্ক-ক্যাবেজ আনতে নীচে যাবে বলেছিল সামান্থা।
আবার জানালার কাছে ফিরে এল কেড্রিক। সতর্কতার সঙ্গে সামনের এলাকা জরিপ করল। বুকের ভেতর আচমকা লাফিয়ে উঠল হৃৎপিণ্ডটা। ক্যানিয়ন দেয়ালের একটা গর্ত থেকে স্ক-ক্যাবেজ তুলছে সামান্থা ফক্স, বড় জোর পঞ্চাশ গজ দূরেই দাঁড়িয়ে আছে অনাহুত অশ্বারোহী!
রাইফেল উঁচিয়ে দূরত্ব মাপল কেড্রিক। কমপক্ষে চারশো গজ দূরে, এবং নীচে রয়েছে লক্ষ্যবস্তু। সযত্নে অশ্বারোহীকে তাক করল ও। তারপর রাইফেল নামিয়ে নিল। সামান্থার অনেক কাছে পৌঁছে গেছে লোকটা, গুলি ফসকে গেলে পাথুরে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ওকে আঘাত করতে পারে। ছুটন্ত বুলেট ক্যানিয়ন-দেয়ালে বাড়ি খেয়ে আবার ক্যানিয়নে ফিরে আসবে, সংকীর্ণ জায়গায় ছুটোছুটি করবে ওটা, বিপদের আশঙ্কা আছে।
সামান্থাকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করার একটা উপায় বের করা দরকার। আগত অশ্বারোহী সামান্থার পায়ের ছাপ দেখতে পেলে এই হাইডআউটের অস্তিত্ব ফাঁস হয়ে যাবে। লোকটার ঘোড়ার কানজোড়া আচমকা খাড়া হয়ে গেল, আড়ষ্ট হলো সে, সতর্ক, ডানে বাঁয়ে তাকাল। সাবধানে আবার অশ্বারোহীকে তাক করল কেড্রিক। অসতর্ক শত্রুকে হত্যা করা ওর ধাতের বাইরে, কিন্তু নিরুপায় হলে সেটাও করতে হবে!
সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে সামান্থা ফক্স 1 কান পেতে কী যেন শোনার চেষ্টা করছে। উত্তেজনায় টান টান হয়ে গেছে পল কেড্রিক। নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ও, কান খাড়া। অপেক্ষা করছে। এই মুহূর্তে বড় জোর পঞ্চাশ ফুট দূরত্ব। সামান্থা আর আগন্তুকের মাঝে। অবশ্য বেরিয়ে থাকা একটা পাথর আর ওটার গায়ে জন্মানো আগাছা, একটা কটনউড আর গোটা কয়েক সিডার ওদের আলাদা করে রেখেছে।