কেড্রিক যখন মাস্ট্যাংয়ে পৌঁছুল, পুরো শহর ঘুমে বিভোর। সোজা আস্তাবলের দিকে এগিয়ে গেল ও। ঘোড়াকে একটা স্টলে রেখে জিন-লাগাম। খুলে ভালো করে দলাইমলাই করল, ছোলা আর খড় খেতে দিল। তারপর আস্তাবল থেকে বেরিয়ে নিঃসাড়ে সেইন্ট জেস-এর উদ্দেশে এগোল। হোটেলের কাছে আসতেই বারান্দার চেয়ারে বসা লম্বা একহারা গড়নের এক লোক উঠে দাঁড়াল। সেদিন এই চেয়ারেই বসেছিল কেড্রিক। শারীরিক গঠন, মাথার চওড়া ব্রীমের টুপি আর পিস্তল ঝোলানোর কায়দা দেখে লরেডো শ্যাডকে চিনতে পারল কেড্রিক।
ক্যাপন? চাপা কণ্ঠস্বর। ভালো আছ?
হ্যাঁ। তুমি?
হাসল শ্যাড। আমার কথা ভাবতে হবে না। আমি সুস্থ! ইঙ্গিতে একটা চেয়ার দেখিয়ে দিল লরেছো শ্যাড। বসো। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। জানতাম ফিরে আসবে।
অন্যরা কী বলছে? কী ভারছে ওরা, আমি পটল তুলৈছি নাকি পালিয়েছি?
কেউ এটা, কেউ ওটা। এদিকে কীথের তো পাগল হওয়ার দশা। তুমি ফেরামাত্র দেখা করতে বলে দিয়েছে-রাত দুপুরে হলেও।
এখন পারর না। অসম্ভব ক্লান্ত।
মাথা দোলাল শ্যাড, তারপর নিভে যাওয়া সিগারেটটা ধরাল। বুঝলে ক্যাপন, ব্যাপারস্যাপার এখন আর সুবিধের মনে হচ্ছে না আমার কাছে।
মাথা ঝাঁকাল কেড্রিক। বুঝতে পারছি কী বলছ। মানুষকে ঘর বাড়ি থেকে উৎখাত করার মতো পিশাচ আমিও নই।
কাজ ছেড়ে দিচ্ছ?
এত তাড়াতাড়ি নয়। ওদের সঙ্গে আগে কথা বলে দেখি।
কী লাভ? রক্তের নেশায় পেয়েছে ওদের। ইয়েলো বাট-এর লোকটাকে পয়েনেসট হত্যা করেছে, কিন্তু উস্কানি দিয়েছে ডরনি, শ। পয়েন্সেট লোকটাকে খুন করার পর চার-পাঁচজন সুখ মিটিয়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে বেচারার লাশ। ফেসেনডেন অবশ্য গুলি করে নি, গফ করেছে কি না জানি না। তবে বাজি রাখতে পারো, আমার পিস্তল থেকে একটা গুলিও বেরোয় নি। পৈশাচিক ব্যাপার, ক্যাপন, জঘন্য।
এর জন্যে ওদের জবাবদিহি করতে হবে। ইয়েলো বাট হামলায় তুমি, ছিলে?
হ্যাঁ, ছিলাম। কিন্তু আমি গুলি ছুঁড়ি নি। আমি গির্জার পাদ্রী নই, ক্যাপন; কিন্তু যোদ্ধা, অসহায় লোকদের সঙ্গে লড়াই করার রুচি আমার নেই। আর এখনও এত পচে যাই নি যে, মেয়েমানুষ আর শিশুদের ওপর পিস্তল ছুঁড়ব।
এখন কী ভাবছে ওরা? নতুন কোনও পরিকল্পনা?
একটু ইতস্তত করল লরেডো শ্যাড; তারপর কাঁধ ঝাঁকাল। তার চেয়ে তুমি নিজেই ওদের সঙ্গে আলাপ করো, ক্যাপন। কিছু জানলেও অন্তত এই মুহূর্তে মুখ খুলতে চাই না আমি।
অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল লরেডো শ্যাড। সিগারেট টানল দুজন। হঠাৎ অধৈর্যভাবে বাতাসে হাতের ঝাঁপটা মারল শ্যাড আমি গানম্যান, ক্যাপন, পিস্তল চালানোর জন্যেই আমাকৈ ভাড়া করেছে ওরা। কিন্তু এ রকম কিছু আশা করি নি আমি। বিপক্ষের কয়েকজনকে আমার কাছে আমাদের চেয়ে হাজার গুণ ভালো লোক বলে মনে হয়েছে। ভাবছি, কাজটা ছেড়ে দেব।
আহ্-হা, হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল পল কেড্রিক, তোমার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি অন্য একটা উপায়ের কথা ভাবছি। বুঝিয়ে শুনিয়ে গুন্টারদের যদি ক্ষান্ত করতে না পারি, দল পাল্টে বিপক্ষে চলে যাব।
শ্যাড মাথা দোলাল। এই কথাটা কিন্তু আমিও ভেবেছিলাম.।
হঠাৎ ঘাড় ফেরাল কেড্রিক। বড় জোর বিশ ফুট দূরে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে ডরনি শ। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল পল। লরেডো শ্যাডও দাঁড়িয়ে পড়ল। কেড্রিকের দৃষ্টি এড়িয়ে শ্যাডের দিকে তাকাল ডরনি শ।
সটকে পড়তে চাইলে আগে আমাকে খুন করতে হবে, শ্যাড, মনে রেখো।
প্রয়োজন হলে তাই করব, চট করে জবাব দিল শ্যাড। তোমাকে মারতে আমার হাত কাঁপবে না। এখনই নামতে চাও?
যথেষ্ট হয়েছে, শ্যাড! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল পল কেড্রিক। আগেও বলেছি, আবার বলছি, আমার দলে মারপিট চলবে না।
আস্তে আস্তে ঘাড় ফিরিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল ডরনি শ। এখনও হুকুম দিচ্ছ, আঁ? এ-অবস্থা আর থাকবে না!
হয়তো, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল পল কেড্রিক। যাক গে, আমি এখন ঘরে যাচ্ছি।
কীথ কিন্তু তোমাকে ডেকেছে।
পরে। এখন আমি ক্লান্ত, তাছাড়া তাড়াহুড়োর কিছু নেই। যা বলার সকালেই বলব।
এই কথা তাকে জানাব?
তোমার মর্জি।
আবার হাসল শ। নিজের দেশে তুমি হয়তো বিরাট কিছু, কেড্রিক। কিন্তু ভুলে যেয়ো না এটা অন্য দেশ। কীথ খেপলে খারাপ হয়ে যাবে। বারউইকের বেলায়ও একই কথা খাটে।
আবার কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক। ওদের চেয়েও খারাপ লোক আমার দেখা আছে। কিন্তু কাউকে খেপাচ্ছি না আমি। ঘুমোতে যাচ্ছি। কিছু বলার থাকলে সকালে অনেক সময় পাবে কীথ। আমি উঠে পড়ব ততক্ষণে।
চলে যাবে বলে পা বাড়াল ডরনি শ, একটু ইতস্তত করল, তারপর কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করে বসল, তোমার কী হয়েছিল? আমরা তো ভেবেছিলাম মারা গেছ নয়তো ওদের হাতে ধরা পড়েছ।
হঠাৎ সন্দেহ জাগল কেড্রিকের মনে। এই জন্যেই কি ইয়েলো বাটের রবার্টসকে হত্যা করিয়েছে শ? ক্ষিপ্ত সেটলাররা ক্লেড্রিককে হত্যা করবে ধরে নিয়েছিল? খুবই সম্ভব।
বাদ দাও ওসব কথা, সহজ ভঙ্গিতে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল পল। এক জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছিলাম আর কি!
ঘুরে হাঁটতে শুরু করল ডরনি শ। কিন্তু কয়েক কদম এগোনোর পরই হঠাৎ কথা বলে উঠল কেড্রিক। ভালো কথা, ডরনি, গ্রুলা মাস্ট্যাং হকায় এমন কাউকে চেনো?