খাবার থেকে মুখ তুলে স্যু লেইনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। কোম্পানির লোক হই আর যা হই খুন-খারাবীতে আমার মত নেই। মানুষকে তার ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করারও পক্ষপাতি নই আমি।
এমনিতেই তো ওখানে থাকতে পারবে না ওরা। জায়গাটাকে সরকার। ইন্ডিয়ান রিজারভেশন, ঘোষণা করলে সবাইকে জোর করে সরিয়ে দেয়া হবে। খামোকা, বোকার মতো লড়ছে।
কিন্তু তখন সরকার জমির বিনিময়ে টাকা দেবে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে।সে যা হোক, কোম্পানি অনেক তথ্য গোপন করেছে-মিথ্যে বলেছে; আমাদের কাছে, সরকারের কাছে তো বটেই।
কেড্রিকের সামনে এসে বসল স্যু লেইন তাতে কী? শেষ পর্যন্ত ওরাই জিতবে। টাকা, প্রভাব, ক্ষমতা-কী নেই ওদের? আর সেটলারদের কী আছে? ঘোড়ার ডিম! তিক্ত চেহারায় কামরার চারদিকে চোখ বোলাল মেয়েটা। হয়তো ভাবছ, আপন লোকদের বিরোধিতা করছি আমি; তা ঠিক নয়। আসলে এদের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা দুভাই-বোন এখানকার মানুষ নই, হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু পিট সেটা বোঝে না! আচ্ছা, তুমিই বলো, এই কাঠখোট্টা একটা জায়গায় সারা জীবন খেটে মরতে হবে, এটা সম্ভব?
কেড্রিকের দিকে ঝুঁকে এল, স্যু লেইন। শোনো, ক্যাপ্টেন কেড্রিক। তুমি আসলে কীথদেরই একজন। ডরনি শয়ের মতো নগণ্য, ভাড়াটে গানম্যান নও। আশপাশের লোকদের বশ করার মতো ক্ষমতা তোমার আছে। কীথকে সামলানোও তোমার জন্যে কঠিন হবে না। দেখো, ইচ্ছে করলেই কিন্তু বিরাট কিছু হতে পারো তুমি?
বোকামি করছ কেন তা হলে? কী লাভ ওসব কথা ভেবে? এইসব রাখাল আর চাষার দলের কাছে তোমাকে দেয়ার মতো কিছু নেই। নিজেরাই দুবেলা খেতে পায় না, তোমাকে দেবে কোত্থেকে? তার চেয়ে কোম্পানির সঙ্গে থাকো, শেষ পর্যন্ত কোম্পানিই জিতবে; তোমার ভাগেও লাভের অংশ পড়বে। বোকামি করো না, ক্যাপ্টেন-কোম্পানিতে থেকে ওদের হয়ে কাজ করে যাও।
টাকাই সব নয়, বলল পল কেড্রিক, আত্মসম্মান বলে একটা কথা আছে।
চোখ বড় করে ওর দিকে তাকাল সু লিইন। এসব কথা মন থেকে বিশ্বাস কর না নিশ্চয়ই? তোমার ওই আত্মসম্মান নামক বস্তুটি দিয়ে দোকানে গিয়ে একবার খাবার, কেনার চেষ্টা করো। এক দানা গমও পাবে না। কিন্তু কথা তা নয়। তুমি কী করবে সেটা তোমার ইচ্ছে। কিন্তু আমি এমন একজন পুরুষকে চাই যার আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা আছে। চট করে উঠে দাঁড়াল স্যু লেইন, টেবিল ঘুরে কেড্রিকের কাছে এল। ক্যাপ্টেন, তুমি পারো না? ইচ্ছে করলেই তো এখানে বিরাট কিছু হতে পারো, তাই না?
স্যু লেইনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল পল কেড্রিক। তোমার নজর অনেক ওপরে মনে হচ্ছে?
হবে না কেন? একটা সাধারণ র্যাঞ্চারের বউ হয়ে জীবন যাপন করতে চাই না আমি। এখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাই, উপভোগ করতে চাই জীবনকে। কেড্রিকের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকাল স্যু লেইন। একটু বুদ্ধি খাটালেই গুন্টার বা কীথ এমনকি বারউইককেও পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারবে। অবশ্য বারউইকের সঙ্গে পেরে ওঠা একটু কঠিন হরে; কিন্তু অসুবিধে নেই, আমি উপায় বাতলে দেব।
তুমি? মাথা তুলে তাকাল কেড্রিক। ওর একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা, তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। স্যু লেইন, অস্বীকার করার জো নেই, সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়। রীতিমত অস্বস্তিতে পড়ে গ্লেল: কেড্রিক। ওর অবস্থা বুঝতে অসুবিধে হলো না সু, লেইনের। তা শুনি, কীভাবে?
মাথা নাড়ল স্যু লেইন। উঁহু, আগে বলো তুমি আমার দলে, তারপর বলব। তবে মনে রেখো, জন গুন্টার একটা নিরেট গর্দভ। টাকার দরকার ছিল বারউইকদের, গুন্টার সামান্থার টাকা পয়সার হিসেব রাখে, তাই দলে টেনে নিয়েছে। কীথ বিপজ্জনক লোক, অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছে তার অন্তরে দয়া মায়ার বালাই নেই। কিন্তু আসল চীজ হলো বারউইক, ঝামেলা মিটে যাবার পর সবার ওপর মাথা তুলে দাঁড়াবে সে, নিশ্চিত থাকতে পারো। ভেবে-চিন্তে, হিসেব করে কাজ করে।
অনেক খবর রাখো দেখছি।
হ্যাঁ! লোকেরা আমায় পছন্দ করে, আমাকে খুশি করার জন্যে নানান কথা শোনায় তারা, আমিও প্যাঁচ কষে, অনেক কথা বের করে নিই-ওরা বুঝতে পারে না। এবং কিছুই আমি ভুলি না।
আমাকে সব বলে দিচ্ছ যে?
কারণ তুমি ছাড়া আর কাউকে দিয়ে কাজ হবে না। ওদের সবকটাকে লাইনে রাখা একমাত্র তোমার পক্ষেই সম্ভব। ডরনি শও তোমার নির্দেশ মানতে বাধ্য হবে-যদিও ও তোমাকে বিশ্বাস করে না।
বিশ্বাস করে না? কেন?
ডাই রীডকে তোমার কামরা থেকে বের হতে দেখেছে ডরনি, তোমার ওপর নজর রাখছিল সে।
আচ্ছা, এই ব্যাপার?
কিন্তু ওর ওপর নজর রাখতে গেল কেন ডরনি? কী ভাবছে লোকটা? ডাই রীডের সঙ্গে ওর সাক্ষাতের কথা কীথকে জানিয়েছে?
খাওয়া শেষ করে সিগারেট ধরাল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। ট্রেইলে প্রথম দেখার পর থেকেই এই মেয়েটা ওকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এ-রকম একটা মেয়ে এমন হীন স্বার্থপর বিশ্বাসঘাতক হতে পারে বিশ্বাসই হতে চায় না। হালকা পাতলা সুনয়না কিশোরীর মতো মেয়েটিকে দেখলে কে বলবে পেটে পেটে এত প্যাঁচ তার!
বোঝা যাচ্ছে স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিশেবে ওকে বেছে নিয়েছে মেয়েটা। আরও কতজনকে এইভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছে কে জানে?