তিন… দুই… এক… বুম। বুম।
হঠাৎ বিকট আওয়াজ।
গোটা দ্বীপটা কেঁপে উঠল, হ্যারির দরোজায় কে যেন খুব জোরে জোরে কড়া নাড়ছে। কে যেন ভেতরে আসতে চায়।
০৪. চাবির রক্ষক
বুম। বুম। দরোজায় আবার ধাক্কার শব্দ। ডাডলি লাফ দিয়ে জেগে উঠল।
কামানের শব্দ? সে বোকার মত প্রশ্ন করল।
তাদের পেছনে একটি বিকট শব্দ শোনা গেল। আঙ্কল ভার্নন ভয়ে বিবর্ণ হয়ে ঘরে ঢুকলেন। তার হাতে একটি রাইফেল। এখন তারা বুঝতে পারল তিনি সরু লম্বা প্যাকেটে কি এনেছিলেন।
কে ওখানে? আঙ্কল ভার্নন চিৎকার করে উঠলেন–সাবধান, আমার হাতে অস্ত্র আছে
কিছুক্ষণ নীরবতা।
তারপর আবার…
ধ পা স
দরোজায় এমন জোরে ধাক্কা লাগল যে কান–ফাটানো আওয়াজে দরোজার সব পাল্লা মাটিতে পড়ে গেল। দরোজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে এক অতিকায় মানুষ–দৈত্য বললেও ভুল হবে না। চুল–দাঁড়িতে মুখ প্রায় ঢাকা। জ্বলজ্বলে চোখ। তার মাথা গিয়ে ঠেকেছে ঘরের ছাদ পর্যন্ত। মাথা নত করে পিঠ বাঁকিয়ে কুঁজো হয়ে দৈত্যটা ঘরে ঢুকে গেলেন। সে মাথা নিচু করে দরোজাটি হাতে তুলে নিলেন এবং জায়গামতো বসিয়ে দিল। বাইরে ঝড়ের গর্জন কিছুটা কমল। দৈত্যটা সবার দিকে তাকাল।
আমাকে কি এক কাপ চা বানিয়ে দেয়া যায়? পথে যা ধকল সহ্য করেছি।
তারপর সে সোফার দিকে এগিয়ে গেল যেখানে ডাডলি ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে।
দৈত্য বলল-এই মটু উঠে দাঁড়া।
ডাডলি ভয়ে জড়সড় হয়ে মাকে আড়াল করে লুকোবার জন্য ছুটল। আঙ্কল ভার্ননের পেছনে তিনিও ভয়ে কাঁপছিলেন।
আরে এইতো হ্যারি। দৈত্য হ্যারিকে দেখে বলল। হ্যারি দৈত্যাকার লোকটার দিকে তাকাল। লোকটার মুখে স্মিত হাসি।
দৈত্যাকার লোকটা হ্যারিকে বলল–আমি তোমাকে প্রথম যখন দেখি তখন তুমি মাত্র একটি ছোট্ট শিশু। তোমাকে ঠিক তোমার বাবার মত দেখাচ্ছে। অবশ্য তোমার চোখ দুটো তোমার মায়ের মতো।
আঙ্কল ভার্ননের গলায় ঘাড় ঘ্যাঙ শব্দ।
তিনি বললেন–তুমি এক্ষুণি এখান থেকে চলে যাও। এটা আমার হুকুম। তুমি দরোজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছো।
চুপ করো, নির্বোধ–দৈত্য দাপটের সাথে ধমক দিল। সে সোফার পেছনে গিয়ে আঙ্কল ভার্ননের হাত থেকে রাইফেলটি নিয়ে নিল। রাইফেলটাকে বাঁকিয়ে ঘরের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলল। এত সহজে যেন রাবারের তৈরি কোন জিনিস দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিল। আঙ্কল ভার্নন মৃদুকণ্ঠে কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু অদ্ভুত কিছু শব্দ করা ছাড়া তার গলা দিয়ে কথা বেরুল না।
দৈত্য হ্যারিকে উদ্দেশ্য করে বলল–হ্যারি, যাহোক, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
এর পর দৈত্যটা তার জামার পকেট থেকে একটা বাক্স বের করে হ্যারিকে দিল। হ্যারি কাঁপা কাঁপা হাতে বাক্সটা খুলল। একটা বড়ো চকোলেট কেক। কেকের ওপর সবুজ রঙের আইসক্রিম দিয়ে লেখা হ্যাপি বার্থ–ডে হ্যারি।
হ্যারি দৈত্যের দিকে তাকিয়ে বলতে চাইছিল–তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু তার মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো–কে তুমি?
দৈত্যটা প্রথম একটু আমতা আমতা করল। তারপর বলল–আমারই ভুল হয়ে গেছে। প্রথমেই আমার পরিচয় দেয়া উচিত ছিল। আমার নাম রুবিয়াস হ্যাগ্রিড। আমি হোগার্টসে থাকি। সেখানকার দরোজার চাবি আমার হেফাজতে আর মাঠের দেখাশোনা করি।
হ্যারির সাথে করমর্দন করার জন্য দৈত্যটি বিশাল হাত বাড়িয়ে দিল। করমর্দনের সময় হ্যারির মনে হলো তার হাতটা বুঝি খসে পড়ছে।
চা পাওয়া যাবে? হ্যাগ্রিড মনে করিয়ে দিলেন। চা যদি একটু কড়াও হয় তাতেও আমার আপত্তি নেই।
এবার হ্যাগ্রিডের দৃষ্টি গেল ঘর গরম করার ফায়ার প্লেস-এর দিকে। তিনি ঘরের ফায়ার প্লেস-এর কাছে একটু কুঁজো হলেন। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে গনগনে আগুন জ্বলে উঠল। ঘর এত গরম হলো যে হ্যারির মনে হল, সে যেন একটা হট বাথ নিচ্ছে। আগুনে গোসল করে নিচ্ছে।
হ্যাগ্রিড এবার সোফায় বসে পড়লেন। মনে হল গদিটি বুঝি ডুবে যাবে। এবার হ্যাগ্রিডের জামার পকেট থেকে হরেক রকমের জিনিস বেরুল–তামার কেতলি, এক প্যাকেট শূকরের মাংসের সসেজ, লম্বা মগ, বোতল, চা ইত্যাদি। হ্যাগ্রি তার কাজ শুরু করে দিলেন। সসেজের আগুনে ঝলসানোর শব্দ ও পোড়া মাংসের গন্ধে ঘর ভরে গেল। তিনি যখন ছয়টি মোটা, রসে ভরা এবং কিছুটা পুড়ে যাওয়া সসেজ লোহার শিকের কড়াই থেকে বের করল ডাডলি লোভাতুর দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকাল। আঙ্কল ভার্নন কড়াভাবে বললেন–ডাডলি, ওর দেয়া কোন জিনিস স্পর্শ করবে না।
হ্যাগ্রিড মুচকি হেসে রসিকতা করে বললেন–তোমার ছেলে ডাডলি তো একটি আস্ত থলথলে পুডিং, ওর জন্য চর্বির প্রয়োজন হবে না। তোমার কোন চিন্তার কারণ নেই।
হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে সসেজ বাড়িয়ে দিলেন। হ্যারি এত ক্ষুধার্ত ছিল যে খেয়ে মনে হলো এর আগে কখনো সে এত সুস্বাদু খাবার খায়নি। যদিও সে ভয়ের চোখে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে ছিল।
হ্যারি হ্যাগ্রিডের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল। তারপর নিজ থেকেই বলল–আমি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি আপনি কে?
হ্যাগ্রিড এক ঢোক চা গিললেন। হাতের তালু দিয়ে মুখ মুছলেন।
বললেন–সবাই যেমন ডাকে–তুমিও আমাকে হ্যাগ্রিড বলে ডাকবে। তোমাকে একটু আগেই বলেছি, আমি হোগার্টসের চাবির রক্ষক। ধীরে ধীরে তুমি হোগার্টস সম্পর্কে সব জানতে পারবে।