তিনি বললেন-এক্সকিউস মি, আপনাদের মধ্যে হ্যারি পটার কে? তাঁর নামে ফ্রন্ট ডেসকে একশ চিঠি এসেছে।
হোটেলের মালিক ভদ্রমহিলা একটা চিঠি তাদের সামনে তুলে ধরলেন। সবুজ কালিতে লেখা–
মি. এইচ. পটার
কক্ষ নং–১৭
রেইলভিউ হোটেল
ককওয়ার্থ
চিঠিটা নেবার জন্য হ্যারি হাত বাড়াল। হ্যারির হাতটি আঙ্কল ভার্নন সরিয়ে দিলেন। হোটেলের মালিক ভদ্রমহিলা বিস্মিত হলেন। আঙ্কল ভার্নন উঠে দাঁড়িয়ে ভদ্রমহিলাকে বললেন–চলুন। আমি চিঠিগুলো নেব।
***
কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চলার পর আন্ট পেতুনিয়া ভয়ে ভয়ে বললেন–ঘরে ফিরে গেলে কি ভালো হত না?
কিন্তু আঙ্কল ভার্নন তার কথায় কান দিলেন না। তিনি যে ঠিক কী চাইছেন তা অন্য কেউ জানে না। তিনি গাড়ি চালিয়ে একটি গভীর বনে প্রবেশ করলেন। গাড়ি থেকে নামলেন। চারদিকে তাকালেন। মাথা নাড়লেন। আবার গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলেন। এ রকম ঘটনা আরো একাধিকবার ঘটল।
ডাডলি বলে উঠল–বাবার কি মাথা খারাপ হয়েছে?
সমুদ্র উপকূলের কাছে এসে আঙ্কল ভার্নন গাড়ি পার্ক করলেন। সবাইকে গাড়ির ভেতর বসিয়ে রেখে কোথায় যেন গেলেন। বাইরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। গাড়ির ছাদেও বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগল।
ডাডলি তার মাকে বলল–আজ সোমবার। আজ রাতে টিভিতে দ্য গ্রেট হামবেটেসি আছে। আমি যদি টিভি আছে এমন স্থানে থাকতে পারতাম।
সোমবার হ্যারিকে কষ্ট করে মনে করতে হয় না, আজকে কি বার। কোনদিন সোমবার তা জানার জন্য ডাডলির ওপর নির্ভর করা যায়, কারণ সোমবারের টিভির প্রিয় এই প্রোগ্রামের জন্য দিন গুনতে থাকে সে। আগামীকাল মঙ্গলবার। আগামীকাল হ্যারির একাদশ জন্মদিন। অবশ্য এ বাড়িতে হ্যারির জন্মদিনের কোন গুরুত্ত্ব নেই। গত জন্মদিনে সে ডার্সলি পরিবার থেকে পেয়েছিল একটি কোট হ্যাঙার এবং আঙ্কল ভার্ননের এক জোড়া পুরনো মোজা। প্রতিদিনই তো বয়স এগারো থাকে না।
আঙ্কল ভার্নন ফিরে এলেন। মুখে ঈষৎ হাসি। হাতে লম্বা ও সরু একটা প্যাকেট।
কী কিনেছো? আন্ট পেতুনিয়া জানতে চাইলেন। তিনি এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন–চমৎকার একটা জায়গা পেয়েছি। সবাই গাড়ি থেকে নামো।
গাড়ির বাইরে খুব ঠাণ্ডা। আঙ্কল ভার্নন যে জায়গাটা দেখালেন সেটা একটা শিলাময় ছোট দ্বীপ। এর মাঝখানে পুরনো একটা ছোট বাড়ি। এ বাড়িতে যে কোন টেলিভিশন নেই–তা হলফ করেই বলা যায়।
আঙ্কল ভার্নন বললেন–আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে আজ রাতে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দ্বীপটাতে যাবার জন্য এই ভদ্রলোক আমাদেরকে তার নৌকাটা ধার দিয়েছেন।
ফোকলা মুখের এক বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে একটা নৌকা দেখিয়ে তাদের সেদিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। তার মুখে কপট হাসি।
আমার কাছে এখনো কিছু খাবার আছে। সবাই নৌকায় ওঠো। আঙ্কল ভার্ননের নির্দেশ।
নৌকাতে হিমেল হাওয়া। সাথে বৃষ্টি। সবাই ঠাণ্ডায় অস্থির। মনে হলো কয়েক ঘণ্টা যাত্রার পর তারা দ্বীপে পৌঁছল। আঙ্কল ভার্নন তাদেরকে একটি ভাঙা বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
বাড়ির ভেতরটা ছিল আরো ভয়ঙ্কর। ঘরের ভেতরে সামুদ্রিক আগাছার গন্ধ। ফায়ার প্রেস স্যাঁতসেঁতে, কাঠের দেয়ালের ফাঁক দিয়ে সমুদ্রের বাতাসের শো শো শব্দ। বাড়িতে মাত্র দুটো কক্ষ।
আঙ্কল ভার্ননের খাবার ভাণ্ডারে যা ছিল তা হল মাত্র এক প্যাকেট মচমচে বিস্কুট ও এক হালি কলা।
তিনি ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালাবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেখানে কোন কাঠ নেই, একেবারেই খালি।
আঙ্কল ভার্নন আনন্দের সাথে মন্তব্য করলেন–যাক, এখানে কোন চিঠি আসবে না। তিনি নিশ্চিত যে এই ঝড়ের রাতে কেউ তাদের কাছে আসতে পারবে না। রাত নামলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মোতাবেক ঝড় শুরু হলো। সমুদ্রের তরঙ্গ দেয়ালে ছিটকে পড়ছে। বাইরের ঝড়ো বাতাস জরাজীর্ণ ও নোংরা জানালায় আঘাত করছে।
আন্ট পেতুনিয়া একটা পোকায়–কাটা সোফার ওপর কম্বল বিছিয়ে ডাডলির শোয়ার ব্যবস্থা করলেন। আঙ্কল ভার্নন ও আন্ট পেতুনিয়া পাশের কক্ষে চলে গেলেন। হ্যারি মেঝের ওপর একটা ছেঁড়া পাতলা কম্বল বিছিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ের বেগও বাড়তে লাগল। হ্যারি ঘুমোতে পারল না। একটু আরাম পাবার জন্য এপিঠ–ওপিঠ করছে। পেট খিদেয় চো চো করছে। অপরদিকে ডাডলি নিশ্চিন্তে নাক ডাকছে। তার হাতঘড়ির আলো একটু পর পর ঠিকরে পড়ছে। অন্ধকারে ঘড়ির আলো থেকে হ্যারি বুঝতে পারল আর দশ মিনিটের ভেতর তার বয়স এগারো পূর্ণ হবে। ডাডলি ভাবছিল পত্রলেখক এখন কোথায়।
পাঁচ মিনিট পর হ্যারি বাইরে যেন কিসের আওয়াজ শুনল। তার ভয় হচ্ছিল–ছাদ মাথার ওপর ভেঙে পড়বে না তো? ছাদ ভেঙে পড়লে সে অবশ্য আরো বেশি উষ্ণতা উপভোগ করতে পারত।
আর চার মিনিট বাকি–হয়তো বা প্রিভেট ড্রাইভে এত চিঠি আসবে যে সারা বাড়ি চিঠিতে ভরে যাবে। সেখান থেকে যেভাবেই হোক অন্ততঃ একটা চিঠি চুরি করতে হবে। তিন মিনিট বাকি।
সমুদ্রের ঢেউ কি এ বাড়ির ওপর আছড়ে পড়ছে।
এখনও দু মিনিট বাকি।
অদ্ভুত শব্দ। সাগরে শিলাখণ্ড টুকরো টুকরো হয়ে সাগরে মিলিয়ে যাচ্ছে?
আর একটা মিনিট।… তিরিশ সেকেন্ড… কুড়ি সেকেন্ড…. দশ,.. নয়… বিরক্ত করার জন্য হলেও ডাডলিকে জাগাবে কি?