সেটা কী? হ্যারি প্রশ্ন করল।
তিনি তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। ডাম্বলডোর বললেন।
আপনি কী বলছেন? হ্যারি সবিস্ময়ে প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ, ডাম্বলডোর স্বপ্নিল দৃষ্টিতে বললেন–মানুষের মন বড় বিচিত্র। তারা কত রকম অদ্ভুত কাজ করে। স্নেইপ কখনোই তোমার বাবার কাছে ঋণি থাকতে চাননি। আমার ধারণা, এ বছর তোমাকে রক্ষা করার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি তোমার পিতৃঋণ শোধ করতে চান। এটা করতে পারলে তিনি তোমার বাবার স্মৃতিকে ঘৃণা করতে পারবেন।
এসব কথা শুনে হ্যারির মাথা গুলিয়ে গেল। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।
স্যার, আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে। হ্যারি বলল।
একটাই মাত্র প্রশ্ন? ডাম্বলডোর বললেন।
আয়না থেকে আমি কীভাবে পরশমণিটা পেলাম? হ্যারি জানতে চাইল।
আমি খুব আনন্দিত যে, তুমি এই প্রশ্ন করেছ। ডাম্বলডোর বললেন এটা আমার চিন্তাপ্রসূত। এছাড়া তোমার সাথে আমার অন্য রকম একটা সম্পর্ক আছে। ভেবে দেখ, মাত্র একজন লোক পাথরটা পেতে চেয়েছিল পেলও কিন্তু ব্যবহার জানে না। নতুবা এটা থেকে সোনা বানাবে অথবা অমৃত মনে করে পান করবে। হয়েছে, অনেক প্রশ্ন করেছ; আর নয়।
এরপর ডাম্বলডোর হ্যারিকে মিষ্টি খাবার আমন্ত্রণ জানালেন এবং হ্যারির মুখে একটা মিষ্টি তুলে দিলেন। ডাম্বলডোরের উত্তরটা হ্যারির কাছে হেঁয়ালিই রয়ে গেল।
***
ম্যাট্রন মাদাম পমফ্রে অত্যন্ত চমৎকার কিন্তু বড্ড কড়া মহিলা।
হ্যারি বলল–আর মাত্র পাঁচমিনিট।
অসম্ভব। মাদাম পমফ্রে বললেন।
অধ্যাপক ডাম্বলডোরকে ভেতরে আসতে দিয়েছিলেন…। হ্যারি বলল।
মাদাম পমফ্রে বললেন–হ্যাঁ, তাকে দিয়েছি, তবে অধ্যাপক ডাম্বলডোর তো হোগার্টসের প্রধান শিক্ষক। তবে হ্যারি, তোমার বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন।
আমি তো বিশ্রাম নিচ্ছি। দেখছেন তো আমি বিছানায় শুয়ে আছি। হ্যারি বলল।
ঠিক আছে। মাদাম পমফ্রে বললেন–মনে রেখো। তোমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দেয়া হলো।
তিনি রন ও হারমিওনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।
হ্যারি। রন ও হারমিওন আনন্দে চিৎকার করে উঠল। তারা বলল আমরা আর অধ্যাপক ডাম্বলডোর তোমার জন্য খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম।
পুরো স্কুলে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রন বলল–কিন্তু আসলে কী ঘটেছিল?
এটা এমন একটা সত্য ঘটনা যা গল্পের চেয়েও অদ্ভুত এবং উত্তেজনাপূর্ণ।
হ্যারি তাদেরকে সব খুলে বলল–কুইরেলের কথা, ভলডেমর্টের কথা, আয়না ও পরশমণির কথা।
রন আর হারমিওন মনোযোগ দিয়ে হ্যারির কথা শুনল। হ্যারি তাদের কুইরেলের পাগড়ির তলায় কি আছে সেটাও বলল।
হ্যারির কথা শেষ হওয়া মাত্রই রন বলে উঠল–পরশমণি তাহলে কোথায়?
আর যদি পরশমণি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তো নিকোলাস ফ্লামেলের মৃত্যু অবধারিত। হারমিওন আত্নচিৎকার করল।
হ্যারি বলল–আমিও তাই ভাবছিলাম। কিন্তু ডাম্বলডোর আমাকে বোঝালেন যে সুসংগঠিত মনের মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য অভিযান মাত্র।
তোমাদের দুজনের কী হয়েছিল? হ্যারি জানতে চাইল।
আমরা ঠিকভাবেই ফিরে এসেছি। হারমিওন বলল–রনকে নিয়ে আসতে অবশ্য কিছুটা সময় লেগেছে। অধ্যাপক ডাম্বলডোরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমরা পেঁচার ঘরে যাওয়ার পথে প্রবেশ হলে ডাম্বলডোরকে পাই, তিনি আগেই সব জেনেছেন। তিনি বললেন–হ্যারি তার পেছনে গিয়েছে, তাই না? তারপর তিনি দ্রুত তোমার দিকে ছুটলেন।
তোমার মাধ্যমেই তিনি কাজ করতে চেয়েছিলেন কি? রন জানতে চাইল তোমাকে তোমার বাবার পোশাক আর অন্যান্য জিনিস পাঠিয়ে।
হারমিওন ক্রোধের সাথে বলল–তিনি যদি কিছু করে থাকেন–আমি বলতে চাচ্ছি–তোমার তো মৃত্যুও হতে পারত।
ঘটনা তা নয়। হ্যারি প্রতিবাদ করে উঠলো–আসলে তিনি আমাকে একটি সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। এখানে যা কিছু ঘটেছে সবই তার জানা ছিল। আমার ধারণা–আমরা কী করতে চাচ্ছি–তাও তিনি জানতেন। তিনি আমাদেরকে বাধা না দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। আমার মনে হয়, আয়নার বিষয়টা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়। আসলে আগে থেকে তিনিই সবকিছুর পরিকল্পনা করেছিলেন।
হ্যাঁ, তুমি তো ডাম্বলডোরের প্রশংসা করবেই? রন বলল-এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল ভোজ হবে। খেলাতে স্লিদারিন হাউজ জিতেছে। কিডি প্রতিযোগিতায় তুমি ছিলে না। তোমাকে ছাড়া আমরা পেছনে পড়ে গেছি, তবে আগামীকালের ভোজটা ভালো হবে।
ঠিক সেই মুহূর্তে মাদাম পমফ্রে ঘরে ঢুকেই বললেন–তোমরা পনেরো মিনিট কথা বলেছ। এবার বাইরে যাও।
রাতে ভাল ঘুমের ফলে হ্যারির সুস্থতা ফিরে এলো। হ্যারি মাদাম পমফ্রেকে বলল–আমি ভোজে যোগ দিতে চাই। আমি কি যেতে পারব?
মাদাম পমফ্রে বললেন–ভোজে যাবার জন্য অধ্যাপক ডাম্বলডোর তোমাকে ইতোমধ্যেই অনুমতি দিয়েছেন। তবে তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, সেখানে যাওয়াটা তোমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা।
তোমাকে দেখতে আর একজন এসেছেন।
খুব ভাল, কে সে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল। দরোজা খুলে হ্যাগ্রিড ভেতরে প্রবেশ করল। তার ইয়া বড় শরীর নিয়ে যখন সে ভেতরে ঢুকলো, তার শরীরের কাছে ঘরটাই ছোট মনে হচ্ছিল। হ্যাগ্রিড হ্যারির পাশে বসলেন। হ্যারির দিকে এক নজর তাকিয়ে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন।
এসবই আমার দোষে। হ্যাগ্রিড বললেন। আমিই তাদের ফ্লাফির কথা বলেছি। তারা ফ্লাফির কথা জানত না। তোমরা তো মারাও যেতে পারতে। আমি এসব করেছি ড্রাগনের ডিম পাবার জন্য। আমি আর পান করব না! এখন থেকে আমি সব কিছু বাদ দিয়ে মাগলদের মত জীবনযাপন করব।