তাহলে পরশমণি আপনার কাছে। হ্যারি জানতে চাইল।
আমার ভয় ছিল, আমার যেতে হয়ত দেরী হয়ে যেতে পারে। অধ্যাপক ডাম্বলডোর বললেন।
না, আপনি ঠিক সময়েই এসেছেন।
আমি তাকে বেশিক্ষণ পরশমণি থেকে দূরে রাখতে পারতাম না। হ্যারি বলল।
ডাম্বলডোর আরো বললেন–আমি পাথরের কথা বলছি না। বলছিলাম তোমার চেষ্টার কথা। এতে তোমার মৃত্যুও হতে পারত। এজন্য আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আর পরশমণির কথা বলছ, সেটা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
ধ্বংস করা হয়েছে! হ্যারি বিস্ময়ের সাথে মন্তব্য করল–আপনার বন্ধু নিকোলাস ফ্লামেল?
তুমি তাহলে নিকোলাস সম্পর্কে জানো। ডাম্বলডোর বললেন–তুমি ঠিক কাজটাই করেছ, তাই না? আমি আর নিকোলাস আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলাম। যা করা হয়েছে তা ঠিকই ছিল।
তার মানে নিকোলাস এবং তার স্ত্রী মারা যাবেন। তাই নয় কি?
তবে তাদের কাছে প্রচুর মৃতসঞ্জীবনী সুধা আছে। হ্যাঁ, পরবর্তীতে তাঁরা মারা যাবেন।
হ্যারির চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ দেখে ডাম্বলভোর মুচকি হাসলেন।
ডাম্বলডোর বললেন–তোমাদের মত তরুণদের কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। নিকোলাস এবং পেরেনেলের কাছে এটা হবে দীর্ঘদিন পর শোবার জন্য বিছানায় যাওয়া। বড় কথা হলো সুসংগঠিত মৃত্যু হলো পরবর্তী পর্যায়ে যাবার অভিযান।
ডাম্বলডোর আরো বললেন, পরশমণি বড় কথা নয়। মানুষ এমন কিছু আকাঙ্ক্ষা করে যা বাস্তবে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।
হ্যারি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল। ডাম্বলডোর মৃদু হেসে ওপরে ঘরের ছাদের দিকে তাকালেন।
স্যার, হ্যারি বলল–আমি ভাবছিলাম পরশমণি তো ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু ভোলডেমর্ট এবং ইউ-নো-হুর ভূমিকা কী হবে।
হ্যারি, তাকে সবসময় ভোলডেমর্ট ডাকবে। তার সঠিক নামে ডাকবে। কোন বিশেষণেরও দরকার নেই। নামের ভীতি মানুষের প্রতি বাড়িয়ে দেয়।
জী স্যার। হ্যারি বলল–ভোলডেমট ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তাই না? তিনি তো এখনও বিদায় হননি, হয়েছেন কী?
হ্যারি তুমি ঠিকই বলেছ। ডাম্বলডোর বললেন–ভোলডেমর্ট ফিরে আসার চেষ্টা করছে। সে যায়নি। সে কাছাকাছি কোথাও আছে। সে কারো সঙ্গে তার শরীর ভাগাভাগি করে নিতে চাচ্ছে। সে যদি সত্যি সত্যিই জীবিত না থাকে তাহলে কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না। সে কুইরেলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। শত্রু মিত্র কারো প্রতি সে করুণা করে না।
হ্যারি মাথা নাড়ল। তার কপালের ব্যথাটা আবার বেড়ে গেছে। তারপর ডালভোরের উদ্দেশ্যে বলল–স্যার, আপনাকে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনি কি আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেবেন?
সত্য শব্দটি একটা সুন্দর ও নিষ্ঠুর শব্দ। ডাম্বলডোর মন্তব্য করলেন তাই খুবই সতর্কভাবে তোমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেবার চেষ্টা করব। সমস্যা না হলে আমি তোমার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেব। যদি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি কথা দিচ্ছি, আমি তোমাকে মিথ্যা বলব না।
হ্যারি শুরু করল, ভলডেমর্ট বলেছে তিনি আমার মাকে হত্যা করেছে, কারণ আমার মা আমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন। এখন সে আমাকে কেন হত্যা করতে চাচ্ছে?
ডাম্বলডোর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন–হ্যারি, আমি দুঃখিত। আমি তোমার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। অর্থাৎ আজ ৰা এখন আমি তোমার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তবে একদিন তুমি এই প্রশ্নের উত্তর পাবে। তুমি বড় হলে সব জানতে পারবে। আর আমি এটাও জানি, এই প্রশ্নের উত্তর তোমার ঘৃণা উদ্রেক করবে। বড় হলে তুমি নিজেই সব জানতে পারবে।
হ্যারি বুঝতে পারল এ বিষয়ে আর কথা বলা অবান্তর।
কিন্তু কুইরেল কেন আমাকে স্পর্শ করতে পারেননি। হ্যারির পরবর্তী প্রশ্ন।
ডাম্বলডোর জবাব দিলেন–তোমাকে বাঁচাতে গিয়ে তোমার মায়ের মৃত্যু ঘটেছে। ভালোবাসা কী জিনিস-এ বিষয়ে ভোলডেমর্টের কোন ধারণা ছিল না। ভালোবাসা যে কত শক্তিশালী হতে পারে তা সে কখনোই বুঝতে পারেনি। তোমার জন্য তোমার মায়ের ভালোবাসা একটা অনন্য ঘটনার স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি তার ভালোবাসার কোন চিহ্ন রেখে যেতে পারেননি। তোমার জন্য তোমার মায়ের ভালোবাসা তোমাকে চিরদিনের জন্য নিরাপদ করে দিয়েছে। আর কুইরেলের ভেতর আছে–ঘৃণা, লোভ আর উচ্চাভিলাষ। তার এই দোষগুলো ভোলড়েঘর্টের কাছ থেকে পাওয়া। এ জন্যই কুইরেল তোমাকে স্পর্শ করতে পারেননি।
ডাম্বলডোর জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। এই ফাঁকে হ্যারি তার চোখের জল মুছলো।
হ্যারির বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ স্বাভাবিক হয়ে এলে তার পরবর্তী প্রশ্ন–আপনি কি জানেন অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা আসলে কে পাঠিয়েছিল?
ডাম্বলডোর জবাব দিলেন–তোমার বাবা আমাকে এ পোশাকটা দিয়ে গিয়েছিলেন। আমার মনে হলো, পোশাকটা তোমার পছন্দ হবে। তোমার বাবা এই অদৃশ্য হওয়ার পোশাক পরে রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি করতেন।
আমার আরো কিছু প্রশ্ন আছে।
বল।
কুইরেল বলছিলেন স্নেইপ–… হ্যারি বলল।
অধ্যাপক স্নেইপ ডাম্বলডোর জিজ্ঞেস করল!
জী স্যার… কুইরেল আমাকে জানালেন যে স্নেইপ–আমাকে ঘৃণা করেন কারণ তিনি আমার বাবাকে ঘৃণা করতেন।
হ্যাঁ, তারা দুজন দুজনকেই ঘৃণা করতেন। ডাম্বলডোর ব্যাখ্যা করলেন–তবে তাদের অপছন্দ তোমার আর ম্যালফয়ের অপছন্দের মত নয়। তোমার বাবা এমন একটা কাজ করেছিলেন, যা অধ্যাপক স্নেইপ কখনোই ক্ষমা করতে পারেননি।