হ্যারি পেছনে যেতে চাইল। কিন্তু তার পা চলছে না।
মুখটা বলছে–হ্যারি পটার, দেখতে পাচ্ছ আমার এখনকার রূপ। শুধু ছায়া আর ধোয়া দিয়ে অন্যের শরীর ধারণ করা যায়। ইউনিকর্নের রক্ত খেয়ে আমার শক্তি বহুগুণ বেড়ে গেছে। তুমি আগেই দেখেছ কুইরেলের রূপ ধরে, আমি অরণ্যে গিয়ে ইউনিকর্নর রক্তপান করেছি। এখন তুমি দয়া করে তোমার পকেট থেকে পরশমণিটা বের করে আমাকে দিয়ে দাও।
কুইরেল তা হলে সব জানে-এই কথা ভেবে হ্যারি পেছনে যেতে চাইল, কিন্তু তার পা চলছে না।
মুখটা হ্যারিকে বলল–বোকার মত কাজ করো না।
তোমার জীবন বাঁচাতে চাইলে আমার সাথে যোগ দাও। নতুবা তোমার বাবা–মার মতই তোমার পরিণতি হবে। তারা দুজনই মারা যাওয়ার সময় আমার অনুকম্পা চেয়েছিলেন।
মিথ্যুক। হ্যারি চিৎকার করে উঠল।
কুইরেল পেছন ফিরে হ্যারির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন যাতে ভোলডেমর্ট তাকে দেখতে পায়। শয়তানি মুখে মুচকি হাসি।
বড়ই মর্মস্পর্শী। শয়তানিমুখে উচ্চারিত হলো।
আমি সর্বদাই বীরত্বকে দাম দেই। তোমার বাবা–মাও সাহসী ছিলেন। প্রথমে আমি তোমার বাবাকে হত্যা করি। তিনি আমার সাথে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছেন। তোমার মায়ের মারা যাবার কথা ছিল না। তিনি তোমাকে বাঁচাবার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তার মৃত্যুকে ব্যর্থ করতে না চাইলে তুমি আমাকে পাথরটা দিয়ে দাও।
কখ্খনো না। হ্যারি জোর দিয়ে বলল।
হ্যারি লাফ দিয়ে আগুনের শিখার দিকে ধাবিত হল। ভোলডেমর্ট চিৎকার করে উঠল–তাকে পাকড়াও কর। পর মুহূর্তেই হ্যারি অনুভব করল যে কুইরেলের হাত তার মুষ্টির ওপরের অংশ স্পর্শ করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই হ্যারি তার কপালের কাটা দাগে তীব্র ব্যথা অনুভব করল। তার মনে হলো তার কপাল দুটুকরো হয়ে যাবে। সে তার সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে জোরে চিক্কার দিল। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল, কুইরেল তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তার ব্যথা অনেকটা কমে গেছে। কুইরেল কোথায় আছেন তা দেখার জন্য সে চারিদিকে তাকাল। কুইরেল ব্যথায় কুঁজো হয়ে তার আঙুল দেখছিলেন।
পাকড়াও কর। তাকে পাকড়াও কর। আবার ভোলডেমর্টের চিৎকার।
কুইরেল আবার উঠে হ্যারিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার গলা চেপে ধরেছে। হ্যারির কপালের কাটা দাগের ব্যথা অনেক বেড়ে গেছে। তারপরও সে দেখতে পেল যে কুইরেল নিজে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
কুইরেল চিৎকার করছেন–প্রভু, আমি তাকে আর ধরে রাখতে পারছি না–আমার হাত আমার হাত…।
কুইরেল হাটু দিয়ে হ্যারিকে মাটির ওপর চেপে রাখলেও সে তার গলা ছেড়ে দিলেন এবং বিস্ময়ে বিচলিত হয়ে নিজের হাতের ব্যথার প্রতি দৃষ্টি দিলেন।
তাহলে ওকে হত্যা কর, বোকা কোথাকার। ভোলডেমর্ট চিৎকার করে বলল।
একটা কঠিন অভিশাপ দেবার জন্য কুইরেল তার হাত ওপরে ওঠালেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই হ্যারি তার মুখ চেপে ধরল।
আহ…
কুইরেল মাটিতে পড়ে গেলেন। হ্যারি জানতো যে মারাত্নক যন্ত্রণায় কাতর হলে কুইরেল তার কেশ স্পর্শ করতে পারবেন না। সুতরাং অভিশাপ বন্ধ রাখতে কুইরেলকে কাবু করে রাখা ছাড়া উপায় নেই।
হ্যারি লাফ দিয়ে কুইরেলকে এমন শক্তভাবে জাপটে ধরল যে কুইরেল নড়তেই পারছিলেন না, শুধু চিৎকার করছিলেন। কুইরেল হ্যারিকে ঝেড়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। হ্যারির কপালের ব্যথা আবার বাড়তে লাগল। হ্যারি কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। কেবল কুইরেলের চিৎকার আর ভেলডেমর্টের তাকে হত্যা কর, তাকে হত্যা কর কথাগুলো শুনছে। সে অনুভব করল, কুইরেল তার বাহুবেষ্টনি থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন। সামনে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার।
মাথার ওপর সোনার মত কি যেন চকচক করছে। হ্যারি সেটা ধরতে গেল। তার হাত বেশ ভারি হয়ে যাওয়ায় সে এটা ধরতে পারল না।
হ্যারি ভালো করে তাকাল। দেখল, আসলে সেটা এক জোড়া চশমা। কী আশ্চর্য ব্যাপার।
শুভ অপরাহ্ন, হ্যারি ডাম্বলডোর তাকে বললেন।
হ্যারি তার দিকে তাকাল। তারপর সবকিছু মনে পড়ল। সে বলল স্যার, পরশমণিটা অধ্যাপক কুইরেল হস্তগত করে ফেলেছেন। তাড়াতাড়ি কিছু একটা করুন।
শান্ত হও বাছা। অধ্যাপক ডাম্বলডোর বললেন–তুমি সময়ের একটু পেছনে আছ। কুইরেল পরশমণি পাননি।
তাহলে? হ্যারি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
হ্যারি শান্ত হও। ডাম্বলডোর বললেন–নতুবা মাদাম পমফ্রে আমাকে এখান থেকে বের করে দেবেন।
হ্যারি ঢোক গিলে চারদিকে তাকাল। এতক্ষণে সে বুঝল, সে এখন হাসপাতালে সাদা বিছানার ওপর শুয়ে আছে। পাশেই একটা উঁচু টেবিল। টেবিলের ওপর এত মিষ্টি রাখা আছে, দেখে মনে হবে এটা বুঝি মিষ্টির দোকান।
এই দেখ তোমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা তোমার জন্য উপহার পাঠিয়েছে। ডাম্বলডোর বললেন–পাতাল পুরীতে বন্দিদশায় তোমার আর কুইবেলের ভেতর কী ঘটেছে-এটা কেউ জানে না। সবাই জানে তুমি অসুস্থ। হাসপাতালে তোমার চিকিৎসা হচ্ছে।
কতদিন ধরে আমি এখানে আছি? হ্যারি জানতে চাইল।
তিনদিন হবে। তুমি যে সুস্থ হয়েছ এটা শুনতে পারলে রোনাল্ড উইসলি ও মিস গ্রেঞ্জার খুব স্বস্তিবোধ করবে। তোমার ব্যাপারে তারা খুব উদ্বিগ্ন।
স্যার, পরশমণি কোথায়? হ্যারি জানতে চাইল।
ডাম্বলডোর বললেন–আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি এখনও পাথরের কথা ভুলতে পারনি। অধ্যাপক কুইরেল তোমার কাছ থেকে পরশমণিটা নিতে পারেননি, কারণ আমি যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে পড়েছিলাম। যদিও তুমি খুব ভালভাবে ওঁকে মোকাবিলা করছিলে।