প্রথমবারের মতো কুইরেলের চেহারায় একটা ভয়ের ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠল।
কুইরেল জবাব দিলেন–কখনও কখনও প্রভুর নির্দেশ মেনে চলা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি একজন উঁচু মাপের জাদুকর, আর আমি একজন মামুলী জাদুকর।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, তিনি ক্লাস রুমে আপনার সাথেই থাকেন? হ্যারি জানতে চাইল।
আমি যেখানেই যাই তিনি আমার সাথে থাকেন। কুইরেল শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন। আমি যখন বিশ্বভ্রমণে বের হই তখন তার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন ছিলাম বোকা। ভালো ও মন্দ সম্পর্কে আমার মনে উদ্ভট ধারণা ছিল। লর্ড ভোলডেমর্টই আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে আমার ধারণা কত অপরিপকু ছিল। তিনি আমাকে বোঝালেন যে ভালো বা মন্দ বলে কোন জিনিস নেই। যা আছে তা হলো শক্তি। তবে অনেকেই তা দেখতে পায় না। তারপর থেকেই আমি বিশ্বস্ততার সাথে তার সেবা করে যাচ্ছি। যদিও আমি তাকে বহুবার হতাশ করেছি। কোন ভুল তিনি সহজে ক্ষমা করেন না। আমার ভুলের জন্যই তিনি আমার সাথে কখনও কখনও কঠোর ব্যবহার করেন। আমি যখন গ্রিংগট থেকে পাথর চুরি করতে ব্যর্থ হই তখন তিনি আমার ওপর খুব অসন্তুষ্ট হন এবং আমাকে শাস্তি দেন। তারপর থেকেই তিনি আমাকে চোখে চোখে রাখা শুরু করেন। কুইরেলের কণ্ঠস্বর মিলিয়ে গেল। হ্যারির মনে পড়ল ডায়াগন এলির কথা। সে এত বোকা হল কী করে! সেই দিনই সে প্রথম অধ্যাপক কুইরেলকে দেখেছে এবং লিকি কলড্রেনে তার সাথে করমর্দন করেছে।
কুইরেলের নিঃশ্বাসে অভিশাপ।
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না পাথরটা কি আয়নার ভেতর? আমি কি আয়নাটা ভেঙে ফেলব?
হ্যারি দ্রুত ভাবছিল।
হ্যারি মনে মনে বললো–আমার এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে কাম্য কাজ হলো–কুইরেলের আগে পরশমণিটি হস্তগত করা। আমি যদি আয়নাটা দেখি তাহলে আমি নিজেই জানতে পারব পরশমণিটা কোথায়? কুইরেলকে বুঝতে না দিয়ে আমি এ কাজটা কীভাবে করব?
কুইরেলের দৃষ্টি এড়িয়ে আয়নার কাছে যাবার জন্য হ্যারি বাঁ দিকে বাঁক নিল। হ্যারির পায়ের গোড়ালিতে দড়ি এত শক্তভাবে বাঁধা ছিল যে তার পক্ষে বাঁধনমুক্ত হওয়া কঠিন। সে বাঁধন মুক্ত করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। কুইরেল এদিকে লক্ষ্য না করেই নিজে নিজে কথা বলছিলেন
এ আয়নাতে কী কাজ হয়। প্রভু, আমাকে সাহায্য কর।
সন্ত্রস্ত হয়ে হ্যারি এ প্রশ্নের উত্তর শুনতে পেল, আর উত্তরটাও ছিল কুইরেলের কণ্ঠস্বরে, ছেলেটাকে কাজে লাগাও! ছেলেটাকে কাজে লাগাও।
কুইরেল হ্যারির দিকে তাকালেন।
তারপর বললেন–পটার, এদিকে এসো।
কুইরেল হাতে তালি দিলেন। সাথে সাথে হ্যারির বাঁধন শিথিল হয়ে গেল। হ্যারি নিজের পায়ে দাঁড়াল।
এদিকে এসো। কুইরেল আবার তাকে ডাকলেন, বললেন–আয়নায় তাকিয়ে আমাকে বল কী দেখছ।
হ্যারি হেঁটে হেঁটে কুইরেলের কাছে এল।
আমাকে মিথ্যে বলতে হবে। হ্যারি মনে মনে বলল–আমি অবশ্যই দেখব, কিন্তু দেখার ব্যাপারে মিথ্যে বলব।
কুইরেল হ্যারির পেছনে এসে দাঁড়ালেন। কুইরেলের পাগড়ির বিশেষ গন্ধ হ্যারির নাকে এল। হ্যারি চোখ বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়াল এবং আবার চোখ খুলল।
আয়নাতে হ্যারি প্রথমে তার প্রতিবিম্ব দেখল। প্রথমে তার চেহারা বিবর্ণ দেখা গেলেও পর মুহূর্তেই দেখা গেল প্রতিবিম্বটা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। প্রতিবিম্ব পকেট থেকে একটা রক্ত–রাঙা পাথর বের করল। এ দৃশ্য দেখার পর তার পকেটে সে একটা ভারী বস্তুর অস্তিত্ব অনুভব করল। অবিশ্বাস্যভাবে পাথরটা হ্যারির নাগালের ভেতর চলে এল।
কুইরেল জানতে চাইলেন–তুমি কী দেখতে পেলে?
সাহস সঞ্চয় করে হ্যারি বলল–আমি দেখলাম আমি ডাম্বলডোরের সাথে করমর্দন করছি। আমি গ্রিফিল্ডর হাউজের জন্য হাউজ কাপ জয়লাভ করেছি।
কুইরেল আবার অভিশাপ দিলেন।
কুইরেল বললেন–আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যাও। হ্যারি একটু সরে গেল এবং পকেটে পরশমণির স্পর্শ অনুভব করল। সে কি পরশমণিটি বের করে ফেলবে?
হ্যারি পাঁচ কদমও এগোতে পারল না। কুইরেলের ঠোঁট নড়ছে না, কিন্তু তার কণ্ঠস্বরে শোনা গেল–সে মিথ্যা বলেছে। সে মিথ্যা বলেছে।
কুইরেল আবার বললেন–পটার তুমি ফিরে এসো। তুমি আসলে কী দেখেছ তা সত্যি করে বল।
কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি হলো।
আমি তার সাথে মুখোমুখি কথা বলতে চাই।–কুইরেলের সেই কণ্ঠস্বর।
প্রভু, তোমাকে আজ রাতে তত শক্তিশালী মনে হচ্ছে না।
এর জন্য আমার যথেষ্ট শক্তি আছে।
হ্যারির মনে হল সে শয়তালের জাদুর চক্রান্তে আটকে গেছে। সে তার পেশী নাড়াতে পারছে না। ভয়ে আর আতঙ্কে সে কুইরেলের দিকে তাকাল। কুইরেল তার পাগড়ি খুললেন। পাগড়িবিহীন তার মাথা অস্বাভাবিক রকম ছোট মনে হলো। পাগড়ি মাটিতে পড়ে গেল। এবার তিনি ধীরে ধীরে তার ঘাড় নাড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলেন
হ্যারির চিৎকার করে ওঠার কথা, কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোন শব্দই বেরুচ্ছে না। যেখানে কুইরেলের পিঠ তার সামনে থাকার কথা, সেখানে সামনে থেকে দেখা গেল তার বিকট চেহারা। এত ভয়ঙ্কর চেহারা হ্যারি এর আগে কখনোই দেখেনি। এ চেহারাটা চর্কের মত শাদা, তীক্ষ্ণ লাল চোখ আর সাপের মত নাক দিয়ে পানি বেরুচ্ছে। চেহারার দুপাশে দু রকম! দুজনের। কুইরেল আর ভোলমেট।
হ্যারি পটার। ফিসফিস শব্দ শোনা গেল।