হঠাৎ আ–র–র–র—
হ্যারি লাফ দিয়ে উঠল। আরে পাপোসের ওপরে কি যেন! আরে এ যে জীবন্ত প্রাণী।
হ্যারির মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেল। এ কী, এ যে আঙ্কল ভার্নন। তিনি দরোজার গোড়ায় একটি স্লিপিং ব্যাগে ঘুমিয়ে আছেন। হ্যারি এমন কিছু একটা করবে তার মনে আগেই সন্দেহ হয়েছিল। আঙ্কল ভার্নন স্লিপিং ব্যাগ থেকে বের হয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা হ্যারিকে বকাঝকা করলেন। তারপর হুকুম দিলেন চা বানাবার জন্য। হ্যারিকে রান্নাঘরে ঢুকতে হল। চা নিয়ে এসেই হ্যারি দেখে যে ডাকপিয়ন এসে গেছে এবং চিঠিগুলো আঙ্কল ভার্ননের কোলে। হ্যারি লক্ষ্য করল তিনটা চিঠিই সবুজ কালি দিয়ে লেখা।
হ্যারি বলল–আমার চিঠি কোথায়?
এর মধ্যে আঙ্কল ভার্নন সব চিঠির খাম খুলে ফেলেছেন।
তোমাকে আবার কে চিঠি লিখবে? আঙ্কল ভার্নন প্রশ্ন করলেন। তোমাকে কেউই চিঠি লিখবে না। আঙ্কল ভার্নন আবার বললেন–ওই চিঠিতে ভুল করে তোমার নাম লেখা হয়েছিল।
আমার চিঠি কোথায়? হ্যারি প্রশ্ন করল। প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আঙ্কল ভার্নন হ্যারির সামনেই সবগুলো চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললেন।
তিনি সেদিন আর অফিসে গেলেন না। সারাদিন বাসায় কাটালেন। ডাকবাক্সটাতে এমনভাবে পেরেক ঠুকে দিলেন যাতে এখানে কেউ চিঠি ফেলতে না পারে।
ভালোই হলো। আন্ট পেতুনিয়া মন্তব্য করলেন-এখন তারা আর চিঠি দিতে পারবে না। চিঠি দিতে হলে তাদেরকে ওপরে উঠতে হবে।
আঙ্কল ভার্নন ততটা আশ্বস্ত হতে পারলেন না। তিনি বললেন-এসব লোক আমাদের মত নয়। সব সময়ই এরা নতুন নতুন ফন্দি–ফিকির বের করতে জানে।
***
শুক্রবারে হ্যারির নামে কম করে হলেও বারোটা চিঠি এলো।
ডাকবাক্সে ফেলা সম্ভব হয়নি বলে চিঠিগুলি এবার দরোজার নিচের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু চিঠি বাথরুমের জানালা দিয়েও ভেতরে ফেলা হয়েছে। আঙ্কল ভার্নন এদিনও অফিসে গেলেন না। বাসাতেই কাটালেন। তিনি হাতুড়ি, পেরেক আর ছোট ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে দরোজা ও জানালার সবগুলো ফাঁক বন্ধ করলেন।
শনিবারে আরো বড়ো অঘটন ঘটল। হ্যারির নামে চব্বিশটা চিঠি এলো। চিঠিগুলো দুডজন ডিমের বাক্সের ভেতর পাঠানো হয়েছিল। ডেইরির লোকেরা কিছু বুঝতে না পেরেই শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে ডিমগুলোর সাথে চিঠিগুলো আন্ট পেতুনিয়ার কাছে দিয়েছিল। ক্ষিপ্ত হয়ে আঙ্কল ভার্নন ডাকঘর আর ডেইরিতে বার বার ফোন করলেন। আর আন্ট পেতুনিয়া চিঠিগুলো টুকরো টুকরো করে ফুড মিক্সচারে দিয়ে নষ্ট করে ফেললেন।
ডাডলি বিস্ময়ের সাথে হ্যারিকে প্রশ্ন করল–তোমার সাথে কথা বলার জন্য কে এমন উতলা হল?
***
রোববার সকালে আঙ্কল ভার্নন নাশতার টেবিলে বসলেন। তিনি পরিশ্রান্ত। তবে তাকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছিল।
তিনি বললেন–আজ রোববার, ছুটির দিন। আজ আর কোন চিঠি আসবে না।
কিন্তু হঠাৎ রান্নাঘরের চিমনিতে শব্দ শোনা গেল। কিছু যেন গড় গড় করে চিমনি বেয়ে নিচে পড়ছে। তিনি যা দেখলেন তাতে স্তম্ভিত হয়ে পড়লেন। উনুনের চিমনি দিয়ে তিরিশ চল্লিশটা চিঠি বুলেটের মত বেরিয়ে এল। ডার্সলি পরিবারের সবাই অবাক। আর চিঠিগুলো ধরার জন্য হ্যারি লাফ দিল।
বের হও! এখান থেকে বের হও!
আঙ্কল ভার্নন হ্যারির কোমর জড়িয়ে ধরে উঁচু করে তাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরে ছুঁড়ে ফেললেন। আন্ট পেতুনিয়া আর ডাডলি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বাইরে চলে গেল। আঙ্কল ভার্নন দড়াম করে দরোজা বন্ধ করে দিলেন। চিঠিগুলো দেয়াল এবং মেঝেতে এসে পড়েছে-এ শব্দ তাদের কানে আসছিল। রাগে ক্ষোভে টান দিয়ে গোঁফ ছিঁড়তে ছিঁড়তে আঙ্কল ভার্নন বললেন–তোমাদেরকে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে তোমরা তোমাদের গুটি কয়েক জামা–কাপড় নিয়ে নিচে নেমে আসবে। আমরা এখান থেকে চলে যাব। এই বিষয়ে আর কোন কথা নয়।
আঙ্কল ভার্ননের অর্ধেক গোঁফ উড়ে যাওয়ায় তাকে খুবই ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। তাই কেউ তাকে কোন প্রশ্ন করতে সাহস করল না। সবাই গিয়ে গাড়িতে বসল। ডাডলি পেছনে বসে ফুঁসছিলো। কারণ সে তার টেলিভিশন, ভিডিও আর কম্পিউটার সাথে নেয়ার জন্য প্যাক করছিলো। আঙ্কল ভার্নন তার মাথার চারদিক চেপে তাকে জোর করে উঠিয়ে দেন।
গাড়ি চলছে তো চলছেই। আন্ট পেতুনিয়ারও সাহস হলো না প্রশ্ন করে, গাড়ি কোথায় যাচ্ছে। আঙ্কল ভার্নন একটু পর পরই ডানদিকে বামদিকে কঠিন মোড় নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলেন।
খাওয়া–দাওয়ার জন্যও গাড়ি কোথাও থামল না। সন্ধ্যা হতেই ডাডলির বিলাপ শোনা যেতে লাগল। তার জীবনে কোন দিন এত খারাপ যায়নি। সে খুবই ক্ষুধার্ত। সে টেলিভিশনের পাঁচটা প্রোগ্রাম মিস করেছে যা সে দেখতে চেয়েছিল। তাকে এত খেসারত দিতে হবে জানলে সে গাড়িতেই উঠত না। অবশেষে আঙ্কল ভার্নন এক শহরতলীতে এসে একটা হোটেলের সামনে তার গাড়ি থামালেন। একটা ঘরে দুটো নোংরা বিছানায় হ্যারি আর ডাডলিকে খাকতে হল। ডাডলি বিছানায় পড়েই নাক ডাকা শুরু করল। হ্যারির চোখে কোন ঘুম নেই। হ্যারি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চলন্ত গাড়িগুলোর আলোর দিকে তাকিয়ে রইল।
পরদিন সকালের নাশতায় তারা খেলো বাসি কর্নফ্লেক ও টোস্টের সাথে টিনের টমেটো। নাশতা খাবার পর পরই হোটেলের মালিক তাদের টেবিলে এলেন।