হঠাৎ পানির ছলাৎছল আওয়াজ।
কিছু শুনতে পাচ্ছ?
পাচ্ছি।
কোন ভূত প্রেত নয় তো।
বলা মুশকিল। তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা নড়ছে।
হঠাৎ সামনে পড়ল উজ্জ্বল আলোকিত একটা ঘর। উঁচু সিলিং? আর্চের মতন। এক ঝাঁক পাখি উড়ছে। নানা রঙের পাখি। একদিকে একটা মোটা কাঠের দরোজা।
রন বলল–ঘরটা পেরোতে গেলে কি তারা আমাদেরকে আক্রমণ করবে?
হতেও পারে! হ্যারি বলল। তবে ওদের খুব খারাপ মনে হচ্ছে না। ওরা যদি সত্যিই আমাদেরকে আক্রমণ করে আমি দৌড় দেব।
হ্যারি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকল। তারপর ঘরের ভেতর দিয়ে দৌড় দিল।
হ্যারির আশঙ্কা ছিল পাখিরা তাদের তীক্ষ্ণ ঠোই বা নখ দিয়ে যেকোন সময় তাকে আক্রমণ করতে পারে।
কিন্তু ভাগ্য ভাল তেমন কিছু ঘটেনি। হ্যারি নির্বিঘ্নে দরোজার কাছে গিয়ে হাতল ধরে টান দিল, দরোজা খুলল না। দরোজাটা তালাবদ্ধ।
রন ও হারমিওন হ্যারিকে অনুসরণ করল। দরোজার সামনে এসে তারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তারা দরোজাটাকে একটুও নড়াতে পারল না। হারমিওনের মন্ত্রোচ্চারণও কোন কাজে আসল না।
এখন কি হবে? হ্যারি প্রশ্ন করল।
এ পাখিগুলো নিশ্চয়ই সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়। হারমিওন মন্তব্য করল।
তারা পাখিগুলোকে লক্ষ্য করলো।
এগুলো পাখি নয়। এগুলো উড়ন্ত চাবি। হ্যারি মন্তব্য করল।
দেখ, ঝাড়ু পাওয়া যায় কিনা।
ঝাড়ু নিয়ে উড়ে গিয়ে তারা চাবিগুলো ধরতে গেল, কিন্তু জাদু করা চাবি তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেল।
হ্যারি ছিল শতাব্দীর কনিষ্ঠতম সিকার। অন্যান্য লোকের তুলনায় কোন কিছু চেনার তার ক্ষমতা ছিল বেশি। মিনিটখানেক পরই রঙধনুর মতো পালকের ভেতর একটা চাবি হ্যারির নজরে পড়ল। রূপালী রঙের চাবি। হ্যারি দ্রুত চাবি ছিনিয়ে নিয়ে নিচে নেমে এল।
হ্যারি চাবি নিয়ে তালায় ঢুকাল, কিন্তু কোন কাজ হলো না।
হ্যারি বলল–রন, ওই চাবিটা আন তো। ওই পাশের বড় বাঁকা চাবিটা।
আমাদের সবাইকে কাছাকাছি থাকতে হবে। হ্যারি বলল–রন তুমি ওপরে থাকে। আর হারমিওন, তুমি নিচে।
রন দ্রুতগতিতে হ্যারির দেখানো স্থানে উঠতে গিয়ে তার মাথা ছাদে ধাক্কা খেল এবং অল্পের জন্য ঝাড়ু থেকে পড়ে যেতে যেতে রক্ষা পেল।
আর নিচে যেও না। আমি চেষ্টা করছি। তুমি এটা ধর। ঠিক আছে। এখনই আমদের এটা ধরতে হবে।
ওপর থেকে রন নিচে ঝাঁপ দিল। হারমিওন গেল ওপরের দিকে। কিন্তু চাবিটা তাদের দুজনকেই ফাঁকি দিয়ে দেয়ালের দিকে চলে গেল। এরপর হ্যারি ওষ্টার পেছনে ছুটলো। চাবিটা কেবল দেয়ালের দিকে ছুটে যাচ্ছে। হ্যারি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। চাবিটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। এবার আর চাবি তাকে ফাঁকি দিতে পারল না। ধরা দিতেই হল। নিচে রন আর হারমিওনের উল্লাস শোনা গেল।
ওরা নিচে নেমে দরোজার দিকে দৌড় দিল। তালায় চাবি ঢুকিয়ে ঘোরাতেই দরোজা খুলে গেল। তালা খোলার সাথে সাথেই চাবিটা আবার উড়ে চলে গেল।
তোমরা প্রস্তুত? হ্যারি রন আর হারমিওনকে জিজ্ঞেস করল। হ্যারি দরোজার হাতলে হাত রাখল। তারা দুজন মাথা নাড়িয়ে জানাল তারা প্রস্তুত।
হ্যারি দরোজা খুলে ফেলল।
ভেতরের ঘরটি অন্ধকার। এত অন্ধকার যে এ ঘর থেকে তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। কিন্তু যখন ঘরে প্রবেশ করল ঠিক তখনই আলোর বন্যা পুরো ঘরটিকে উদ্ভাসিত করে দিল। আলোতে তারা যা দেখল তা সত্যিই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
বিশাল এক দাবাবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো পাথরের এক দাবা খেলোয়াড়। কিন্তু দড়ির কোন মুখ নেই।
এখন কী করা? হ্যারি ফিসফিস করে বলল।
এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। রন জবাব দিল-এখন আমাদের ঘরের ভেতর ঢুকে আমাদের কাজ সারতে হবে।
তারা পেছনে আরেকটা দরোজা দেখতে পেল।
এখন কী হবে? নার্ভাস হয়ে হারমিওন প্রশ্ন করল।
আমার মনে হচ্ছে রন বলল–আমাদেরকে দাবাড়ু সাজতে হবে। তারা ব্ল্যাক নাইটের ঘোড়া স্পর্শ করার সাথে সাথেই পাথরে প্রাণ এল। ব্ল্যাক নাইট তাদের অভিবাদন জানাল! দাবার ছকের ঘুটি সব জীবন্ত হয়ে উঠল।
এই স্থান অতিক্রম করার জন্য আমাদেরকেও কি দাবা খেলায় যোগ দিতে হবে?
ব্ল্যাক নাইট মাথা নাড়াল। হ্যারি রন ও হারমিওনের দিকে তাকাল।
হ্যারি আর হারমিওন চুপ করে অপেক্ষা করছিল, রন যেন কি ভাবছে। অবশেষে সে বলল–আমার কথায় তোমরা কেউ কষ্ট পেয়ো না। আসলে তোমাদের দুজনেরই কেউই দাবা খুব ভালো খেলতে পারো না।
আমরা কিছু মনে করিনি। হ্যারি বলল–আমাদের কি করতে হবে কেবল সেটা বলে দাও।
ঠিক আছে, হ্যারি তুমি বিশপ হও। আর হারমিওন তুমি কিস্তির পরিবর্তে হ্যারির পাশে দাঁড়াও।
আর তুমি কী হবে?
রন বলল–আমি নাইট হব।
দাবা খেলা জমে উঠল।
রন আটকা পড়ে গেছে। সে বলল–আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও।
–না, তা হতে পারে না। হ্যারি আর হারমিওন দুজনেই চিৎকার করে উঠল।
আরে এটাই তো দাবা খেলা। এখানে কাউকে না কাউকে ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। সাদা রানী আমাকে গ্রাস করবে। হোয়াইট কুইন। ফাঁকা জায়গা। তোমরা পালাও। হ্যারি, তোমার রাজাকে বাঁচাও।
কিন্তু।
তুমি কী স্নেইপকে আটকাতে চাও, না চাও না?
রন–
দেখ, যদি দেরি করো, তাহলে স্নেইপ পাথর পেয়ে যাবে। আর পরশমণি চিরকালের জন্য আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।
তোমরা প্রস্তুত? রন প্রশ্ন করল-এই আমি যাচ্ছি। তোমরা জেতার পর আর অপেক্ষা করবে না।