তার পায়ে এটা কী? হারমিওন ফিসফিস করে প্রশ্ন করল।
বীণার মত মনে হচ্ছে। রন বলল নিশ্চয়ই অধ্যাপক স্নেইপ এটা ফেলে গেছেন। বাঁশি বাজানো শেষ হওয়া মাত্রই কুকুরগুলো জেগে উঠবে। হ্যারি বলল।
হ্যারি হ্যাগ্রিডের দেয়া বাঁশিটা ঠোঁটে লাগিয়ে বাজাতে শুরু করল। বাঁশিতে হ্যারি তেমন কোন সুর তুলল না। কিছুক্ষণের মধ্যে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বন্ধ হলো। হ্যারির বাঁশী শুনে কুকুর আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ল। গর্জন স্তিমিত হয়ে এলো। হাটু মুড়ে কুকুরটা বসে পড়ল। তারপরই মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।
অদৃশ্য হওয়ার পোশাক থেকে বেরিয়ে এসে ফাঁদের দরোজার দিকে যেতে যেতে রন বলল–বাঁশী বাজিয়ে যাও। এগিয়ে যেতে যেতে তারা যখন কুকুরের দানবীয় মাথার কাছাকাছি পৌঁছল তখন তারা কুকুরের নিঃশ্বাসের তাপ অনুভব করল।
রন বলল–আমার মনে হয়–চেষ্টা করলে আমরা দরোজাটা খুলতে পারব। হারমিওন, তুমি কি আমার সাথে যাবে?
না, আমি যাব না। হারমিওন বলল।
ঠিক আছে। দাঁতে দাঁত চেপে রন বলল। কুকুরের লেজ অতিক্রম করে রন ফাঁদের দরোজার হাতল চাপতেই দরোজাটা খুলে গেল।
তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ? হারমিওন উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করল।
রন বলল না, আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার। কিছু ধরে নিচে নামারও কোন উপায় নেই। আমাদেরকে লাফ দিতে হবে।
হ্যারির বাঁশি বাজানো তখনও শেষ হয়নি। তার দিকে তাকানোর জন্য হ্যারি রনকে ইশারা করল।
হ্যারিকে রন বলল–তুমি কি সবার আগে যেতে চাও? আমি জানি না স্থানটি কতটা গভীর। হ্যারি বাঁশি হারমিওনকে দিল, যাতে সে বাঁশি বাজিয়ে কুকুরটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারে।
কয়েক মুহূর্ত বাঁশি বাজানো বন্ধ থাকায় কুকুরটা মৃদু স্বরে ঘেউ ঘেউ করল। হারমিওন যখন আবার বাঁশি বাজানো শুরু করল তখন কুকুরটা আবার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
হ্যারি ওপরে উঠল। সেখান থেকে নিচে তাকিয়ে সে কোন খেই খুঁজে পেল না। হ্যারি মাথা নিচু করে তার হাতের আঙুলের ওপর ভর দিল। এবং দরোজার ফঁদের ভেতর দিয়ে ওপরে রনের দিকে তাকিয়ে বলল–আমার যদি কোন কিছু ঘটে তাহলে তোমরা আর আমার পেছনে আসবে না। সরাসরি পেঁচাঁদের কাছে চলে যাবে এবং হেডউইগকে অধ্যাপক ডাম্বলডোরের কাছে পাঠিয়ে দেবে।
ঠিক আছে। রন জবাব দিল। আশা করি এক মিনিটের ভেতর আবার দেখা হবে।
হ্যারি নিচে ঝাঁপ দিল।
গভীর, গভীর তলদেশ। সে নিচে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কোথায় এর শেষ কে জানে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস।
ধপ করে হ্যারি নরম কোন বস্তুর ওপর পড়ল। মনে হল নরম কোন উদ্ভিদ।
হ্যারি ওপরের দিকে চেঁচিয়ে বলল–রন, ঝাঁপ দাও। ভয় নেই। এখানে রম কিছু আছে।
রন লাফ দিয়ে হ্যারির কাছে চলে এলো।
জিনিসটা কী? রন প্রথমেই প্রশ্ন করল।
মনে হচ্ছে এক ধরনের উদ্ভিদ। তারপর হারমিওনের উদ্দেশ্যে বলল হারমিওন তুমিও চলে এসো।
দুরের বাঁশি বন্ধ হয়ে গেছে। বিকট আওয়াজে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা গেল। হারমিওনও ঝাঁপ দিয়ে তাদের কাছে চলে এল।
আমরা এখন স্কুল থেকে অনেক অনেক দূরে। হারমিওন মন্তব্য বলল।
আমাদের ভাগ্য ভালো, এখানে উদ্ভিদ ছিল। রন বলল।
ভাগ্যবান! শব্দটি উচ্চারণ করেই হারমিওন চিৎকার করে উঠল।
তোমরা দুজনেই নিজেদের দিকে লক্ষ্য কর।
কোন কিছু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হারর্মিওন লাফ দিয়ে একটি স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করল। সে কোন কিছু থেকে আত্নরক্ষার জন্য হাত পা ছুড়ছে। সে যখন উদ্ভিদের ওপর লাফ দেয় তখন উদ্ভিদটার লতা সাপের মত পেচিয়ে তার পা জড়িয়ে ধরেছে।
হ্যারি আর রনের অজান্তেই সাপ জাতীয় উদ্ভিদ তাদের পা জড়িয়ে ধরেছে।
হারমিওন কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে লতার বন্ধন থেকে মুক্ত করলেও হ্যারি আর রনকে লতা শক্ত করে জাপটে ধরেছে। তারা বাধন শিথিল করার জন্য যতই চেষ্টা করছে বন্ধন ততই শক্ত হচ্ছে।
হারমিওন বলল–তোমরা নড়াচড়া করো না। আমি জানি এটা কী। এটাকে বলা হয় ডেভিলস স্নেয়ার বা শয়তানের কাজ।
আমি খুশি হয়েছি যে, তুমি লতাটার নাম জানো। এটাও একটা বিরাট সাহায্য। এই বলে রন তার গলা থেকে লতার বাঁধন খোলার চেষ্টা করল।
চুপ করে থাক। এটাকে কীভাবে হত্যা করা যায় সেটা আমি মনে করার চেষ্টা করছি। হারমিওন বলল।
রন চিৎকার করল–আমাকে বাঁচাও। আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
শয়তানের কাজ। অধ্যাপক স্প্রাউট এ বিষয়ে ক্লাসে কি বলেছিলেন হারমিওন মনে করতে পারছে না।
হ্যারি বলল আগুন জ্বালাও।
আগুন তো জ্বালাব। কিন্তু কাঠ কোথায়? হারমিওন প্রশ্ন করল।
তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? রন চিৎকার করল। তুমি না জাদুকর?
ওহ! ঠিক বলেছ। বলে হারমিওন তার জাদুদণ্ড বের করল।
কিছু মন্ত্র উচ্চারণ করল। বহ্নিশিখা ছুঁড়ে দিল। এ শিখ সে অধ্যাপক স্নেইপের দিকেও ছুঁড়ে দিয়েছিল। নীল ধোঁয়া এসে তার বাধন ঢিলে করে দিল। হ্যারি ও রন বাঁধন খুলে নিজেদের মুক্ত করল।
এরপর থেকে তুমি হার্বোলোজিতে আরো বেশি মনোযোগ দিও। হ্যারি তার মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল।
আমিও তাই বলি। রন বলল, আর এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, কোন সঙ্কটের সময় হ্যারি মাথা গরম করে না।
এই পথে যেতে হবে। হ্যারি একটা পথের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।