হ্যারি আবার কমনরুমে ফিরে এলো।
আমরা এখানেই পোশাকটা পরে দেখি তিনজনের হয় কিনা। আবার ফিলচ আমাদের কাউকে দেখে ফেলে–সে ভয়ও রয়েছে।
তোমরা কী করছ? ঘরের কোন থেকে একটি কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
নেভিলের কণ্ঠস্বর।
পোশাকটা পেছনে ভাল করে হ্যারি তাড়াতাড়ি বলল–না, কিছু না।
তাদের অপরাধী অপরাধী মুখের দিকে তাকিয়ে নেভিল বলল–তোমরা নিশ্চয়ই আবার বাইরে যাচ্ছো? তোমরা আবারও ধরা পড়বে। আবার গ্রিফিল্ডর হাউজের পয়েন্ট কাটা যাবে।
হ্যারি জবাব দিল–তুমি বুঝতে পারবে না। আমাদের কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নেভিলও ওদের থামাবার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে বলল আমি তোমাদের যেতে দেব না। প্রতিকৃতির গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে নেভিল বলল–আমি তোমাদের বাধা দেব।
নেভিল রন বলল–সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। বুদ্ধুর মত কাজ করো না।
আমাকে বুন্ধু বলল না। নেভিল বলল–আমি তোমাদেরকে আর নিয়ম ভাঙতে দেব না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা তোমরাই আমাকে শিখিয়েছ।
আমাদের বিষয়ে তোমাকে একথা বলা হয়নি। রন হতাশার সুরে বলল–নেভিল তুমি বুঝতে পারছ না তুমি কি করছ?
রন এক পা আগে বাড়ল। নেভিল তার ব্যাঙ ট্রেভরকে মাটিতে ফেলে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাঙটি অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমাকে আঘাত করে যেতে পারলে যাও। নেভিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলল–আমি তোমাদের বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
হ্যারি হারমিওনের দিকে তাকাল।
কিছু একটা করো। অস্থির হয়ে হ্যারি বলল।
হারমিওন আগে বাড়ল।
নেভিল, হারমিওন বলল–সত্যিই আমি তোমার ব্যবহারে খুবই দুঃখ পেয়েছি।
হারমিওন এবার তার জাদুদণ্ড ওঠাল।
পেট্ৰিফিকাশ টোটালাস। নেভিলের প্রতি ইঙ্গিত করে সে এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করল।
নেভিলের মুষ্টিবদ্ধ হাত শিথিল হয়ে ঝুলে পড়ল। সারা পা–শরীর পাথর হয়ে গেল। তারপর একটু নড়ে উঠে দুম করে মেঝের ওপর পড়ে গেল।
হারমিওন দৌড়ে নেভিলের কাছে গেল। তার দাঁতে খিল লেগে গেছে। তাই সে কথা বলতে পারছে না। কেবল তীর চোখ কাজ করছে। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নেভিল শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।
তাকে তুমি কী করেছ? হ্যারি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
আমি তার শরীর নিশ্চল করার জাদু করেছি। হারমিওন জবাব দিল নেভিলের ওপর এ জাদু প্রয়োগ করতে হয়েছে বলে আমার খুব খারাপ লাগছে।
নেভিল, আমরা এটা করতে বাধ্য হয়েছি। ব্যাখ্যা করার মতো সময়ও। আমার হাতে নেই। হ্যারি বলল।
নেভিল তুমি পরে এটা বুঝতে পারবে। নেভিলের দেহের ওপর দিয়ে যেতে যেতে রন বলল। তারা অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা পরে ফেলো।
নেভিলকে এভাবে বেহুশ অবস্থায় ফেলে যাওয়াও ঠিক হচ্ছে না। এই নিয়ে তারা তিনজনই খুব উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় প্রতিটি ছায়ামূর্তিকেই তারা ফিলচ বলে মনে করতে লাগল। আর প্রতি মুহূর্তে ভয় করছিল-এই বুঝি পিভিস তাদের ওপর লাফিয়ে পড়বে। সিঁড়ির গোড়ায় তারা মিসেস নরিসকে দেখতে পেল।
তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেই। রন হ্যারির কানে কানে বলল। হ্যারি মাথা নাড়িয়ে না বলল। নরিস তার উজ্জ্বল চোখ দিয়ে তাদের দিকে তাকালেও সে কিছু করেনি।
চার তলার সিঁড়িতে ওঠার আগে তারা কাউকেই দেখেনি। চার তলায় এসে পেল পিভসকে। পিভস কার্পেটটা ঝাড়ুছিল। পিভস চিৎকার করে উঠল–কে ওখানে?
সে তার কালো চোখ ছোট করে বলল–আমি দেখতে না পেলেও আমি জানি তোমরা এখানে আছে। সে ছন্দ করে প্রশ্ন করলো, তোমরা কারা? তোমরা কী ভূত না পেত্নি, না ছাত্র না জন্তু…।
সে বাতাসে ভর করে তাদের কাছে চলে এলো।
আমি কি ফিলচকে ডাকব? পিভস বলল। কোন কিছু যদি অদৃশ্য হয়ে আমার চারদিকে ঘোরে তাহলে আমাকে তাই করতে হবে।
হঠাৎ হ্যারির মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল। ধমকের স্বরে বলল, ব্লাডি ব্যারনের প্রয়োজন হলে সে অদৃশ্য হবেই। পিভস হ্যারিকে ব্যারন মনে করে ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো।
নরম তল তলে স্বরে পিভিস বলল, জ্বী স্যার, জ্বী স্যার।
নিজেকে ব্লাডি ব্যারন বলে পরিচয় দিয়ে হ্যারি অনায়াসে ছাড়া পেয়ে গেল।
পিভস। হ্যারি একটু কর্কশকণ্ঠে বলল–আমাদের এখানে কিছু কাজ আছে। আজ রাতটার জন্য এখান থেকে একটু দূরে সরে থাকো।
আমি অবশ্যই দূরে থাকব স্যার। পিভস খুব বিনয়ের সাথে বলল আশা করি আপনার কাজ ঠিকভাবে হবে। পিভস তৎক্ষণাৎ বিদায় নিল।
চমৎকার হ্যারি। রন ফিসফিস করে বলল।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারা চার তলার করিডোরে পৌঁছলো। দরোজা আগে থেকেই খোলা ছিল।
আমরা এসে গেছি। হ্যারি নিচু কণ্ঠে বলল–স্নেইপ ইতোমধ্যেই ফ্লাফিকে অতিক্রম করেছেন।
দরোজা খোলা দেখে তাদের তিনজনেরই ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারিত হয়ে গেল।
পোশাকের ভেতরে থেকেই হ্যারি অন্য দুজনের উদ্দেশ্যে বলল তোমরা যদি ফিরে যেতে চাও যেতে পার, আমি তোমাদের দোষ দেব না। ফিরে যাওয়ার সময় অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা নিয়ে যেতে পারো। এটার প্রয়োজন আমার আর নেই।
বোকার মত কাজ করো না। রন বলল।
আমরা তোমার সাথেই আছি। হারমিওন বলল।
হ্যারি ধাক্কা দিয়ে দরোজাটা খুলল।
দরোজা খোলার সাথে সাথে কুকুরের গর্জন তাদের কানে ভেসে এলো।
কুকুরটা এর তিনটি নাক দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করছে। যদিও কুকুরের দৃষ্টি ছিল তাদের দিকে কিন্তু তাদেরকে দেখেনি।