তার দিকে তাকাতেই, গুড আফটারনুন, অদ্ভুত ধরনের হাসি হেসে স্নেইপ বললেন-এমন একটি দিনে তো তোমাদের এখানে থাকার কথা নয়।
আমরা হ্যারি কী বলতে কী বলবে, গুছিয়ে নিতে না পারায় তার কিছু বলা হলো না।
সাবধানে থেকো। এইভাবে ঘোরাফেরা করলে লোকে সন্দেহ করবে। আর তোমরা নিশ্চয়ই এটা চাইবে না যে, গ্রিফিল্ডর হাউজ আরো পয়েন্ট হারাক।
তারা বাইরে যেতে উদ্যত হলো। ঠিক তখনি স্নেইপ আবার তাদের ডাকলেন।
হ্যারি, আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আবার যদি তোমাকে এভাবে রাতে ঘোরাঘুরি করতে দেখি, তাহলে তোমাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
স্নেইপ স্টাফরুমের দিকে অগ্রসর হলেন।
হ্যারি রন ও হারমিওনের দিকে তাকাল।
আমাদের এখন যা করতে হবে। হ্যারি ফিস ফিস করে বলল আমাদের একজনকে অন্তত স্নেইপকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে। স্টাফ রুমের বাইরে তাকে ফলো করতে হবে। হারমিওন, তোমাকেই এ দায়িত্বটা নিতে হবে।
আমি কেন? হারমিওন প্রশ্ন করে।
কারণ, তুমি এ কাজটা ভালো করতে পারবে। ভান করবে, যেন তুমি ফ্লিটউইকের জন্য অপেক্ষা করছ। কেননা ফ্লিটউইকের সাথে তোমার পরিচয় আছে।
প্রথমে আপত্তি করলেও হারমিওন এই প্রস্তাবে রাজি হলো। হ্যারি বলল–আমাদের এখন চার তুলার করিডোরের বাইরে যাওয়া উচিত। রন, চলে এসো।
কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যে দরোজাটা ফ্লাফি থেকে স্কুলটাকে পৃথক করেছে, সেই দরোজায় তারা হাজির হওয়া মাত্র সেখানে উপস্থিত হলেন অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল। তিনি তাদের দেখে রেগে আগুন, তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।
তিনি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন–মনে হচ্ছে, তোমরা কাউকেই তোয়াক্কা করার প্রয়োজন মনে করছ না। তোমরা তো একেবারেই সীমা ছাড়িয়ে গেছ। আমি যদি তোমাদের কাউকে এখানে আবার দেখি, আমি গ্রিফিল্ডর হাউজ থেকে আরো পঞ্চাশ পয়েন্ট কেটে নেব। হ্যাঁ, গ্রিফিল্ডর আমার নিজের হাউজ হওয়া সত্ত্বেও
হ্যারি আর রন কমনরুমে ফিরে এলো। হ্যারি শুধু এইটুকু বলেছে–যা হোক হারমিওন স্নেইপের ওপর নজর রাখছে। ঠিক তখনি মোটা মহিলার প্রতিকৃতিটি উন্মুক্ত হলো এবং হারমিওনও এসে উপস্থিত হলো।
হ্যারি, আমি দুঃখিত। হারমিওন বলল–স্নেইপ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি করছি। আমি বললাম–আমি ফ্লিটউইকের জন্য অপেক্ষা করছি। ফ্লিটউইককে আনার জন্য স্নেইপ চলে গেলেন। আমিও চলে এসেছি। আমি জানি না স্নেইপ আসলে কোথায় গেছেন।
ঠিক আছে। হ্যারি জবাব দিল।
অন্য দুজন তার দিকে তাকিয়ে রইল। তার মুখমণ্ডল বিবর্ণ ও চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে।
হ্যারি বলল–আমি আজ রাতে বেরিয়ে পরশমণির খোঁজ করব।
তুমি কি পাগল হয়েছ? রন বলে উঠল।
না তুমি যেতে পারবে না। হারমিও বলল–বিশেষ করে অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল আর স্নেইপের সাবধানের পর। তোমাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে দেবে।
হ্যারি জবাব দিল–বহিষ্কারই তো হবে আর কী? তোমরা কি বুঝতে পারছ না–স্নেইপ যদি পাথরটা পেয়ে যান তাহলে ভোলডেমর্ট ফিরে আসবে। সে তার ক্ষমতা ফিরে পেতে চায়। সে এলে হোগার্টসকে কালো জাদুর বিদ্যালয়ে পরিণত করবে। তোমরা কী মনে কর, গ্রিফিল্ডর হাউজ কাপ পেলেও তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারকে সে নিশ্চিন্তে থাকতে দেবে। আমার পরশমণি পাবার আগে ওরা যদি আমাকে ধরে ফেলে, আমার কোন দুঃখ থাকবে না। আমি বাড়ি ফিরে যাব। আজ রাতে আমি গোপন দরোজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করব। কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবে না। মনে রেখো ভোলডেমট আমার বাবা–মাকে হত্যা করেছে।
তুমি ঠিকই বলেছ, হ্যারি। হারমিওন নিচু কণ্ঠে বলল।
হ্যারি বলল–আমি আমার অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা ব্যবহার করবো। ভাগ্য ভালো, পোশাকটা পাওয়া গেছে।
রন বলল-এ পোশাকটা কি আমাদের তিনজনকে ঢাকবে?
তিনজন কেন? হ্যারি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।
তুমি কি ভেবেছ–আমরা তোমাকে একা যেতে দেব?
অবশ্যই নয়। হারমিওন সাথে সাথে করল–তুমি কি করে ভাবলে, আমাদেরকে বাদ দিয়ে তুমি পরশপাথরের খোঁজে যাবে? আমি এক নজর বইগুলো দেখে আসি। হয়ত সেখানে জরুরী কিছু পেয়েও যেতে পারি। যদি আমরা ধরা পড়ি তাহলে তোমাদেরকেও তো স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে। হ্যারি বলল।
না, আমার বেলায় তা হবে না। হারমিওন বলল–ফ্লিটউইক আমাকে গোপনে বলেছেন যে, আমি তার পরীক্ষায় ১১২% নম্বর পেয়েছি। এরপর তারা আমাকে আর স্কুল থেকে বের করে দেবে না।
***
ডিনারশেষে তারা তিনজন কমনরুমে গিয়ে বসলো, তারা চিন্তিত। কেউ তাদের ধারে কাছেও ভিড়লো না। গ্রিফিন্ডারের কারো যেন হ্যারির সঙ্গে কোন কথা বলার প্রয়োজন নেই। এই প্রথমবারের মতো হ্যারি এ ধরনের উপেক্ষা নিয়ে মাথা ঘামালো না।
হারমিওন আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, বইয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা। হ্যারি আর রন তেমন কোন কথাবার্তা বলেনি। তাদের দুজনেরই মাথায় চিন্তা–আজ রাতে তারা যে কাজে বেরুবে সেটা নিয়ে।
এক সময় কমনরুম খালি হয়ে গেল। প্রায় সবাই শুতে গেছে।
অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা নিয়ে এসো। রন আস্তে আস্তে বলল।
হ্যারি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ডর্মিটরিতে গেল। পোশাকটা নেবার সময় বাঁশির ওপর হ্যারির দৃষ্টি গেল। বাঁশিটি হ্যাগ্রিড তাকে তার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন। এই বাঁশিটা ফ্লাফির ওপর প্রয়োগ করলে কেমন হয়!