হ্যাঁ, তা হতে পারে। : বন বলল, কিন্তু হ্যারি ওর কথা থামিয়ে বললো–না, আমাদের একটু তাড়া আছে, হ্যাগ্রিড। আমরা একটা বিশেষ কারণে এখানে এসেছি। আপনার মনে আছে, আপনি যে রাতে নর্বার্টকে ডিমটা পেয়েছিলেন, তখন আপনি যে লোকটার সাথে তাস খেলছিলেন, সে লোকটি দেখতে কেমন।
আমার মনে নেই। হ্যাগ্রিড নির্লিপ্তভাবে জবাব দিল।
হ্যাগ্রিডের কথা শুনে তারা তিনজনই হতভম্ব হয়ে গেল। হ্যাগ্রিড বললেন, এখানে কত রকম লোক আসে। গ্রামের শেষ প্রান্তের পাবে মদ খেতে কত কিসিমের আজব লোক আসে। কেউ কেউ ড্রাগন ডিলার। ওই লোকটার মুখটাও তো আমি দেখতে পাইনি, মাথার টুপিটা এমন নিচু করে মুখ ঢেকে রেখেছিল। হ্যারি মটরশুটি বৌলের কাছে বসে পড়ল।
হ্যাগ্রিড, আপনি তার সাথে কি কথা বলেছেন। আপনি কি কখনও হোগার্টসের কথা উচ্চারণ করেছেন?
হয়ত বলে থাকতে পারি। হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন তাকে আমি এটা বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে হোগার্টসে আমি একজন গেইম কীপার। তিনি আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন আমি কী ধররে প্রাণী দেখাশোনা করি। আমি তাকে বলেছিলাম যে ড্রাগন আমার প্রিয় প্রাণী।
সে কি ফ্লাফির ব্যাপারে কোন আগ্রহ প্রকাশ করেছে?
হ্যারি জানতে চাইল।
হতে পারে, বলে হ্যাগ্রিড মনে করার চেষ্টা করলেন। বলল, হ্যা মনে পাড়েছে, আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ
আচ্ছা, হোগার্টসে তোমরা কটা তিন মাথাওয়ালা কুকুর দেখেছ? তাই আমি তাকে বলেছিলাম–তুমি যদি ওকে শান্ত করতে জান, তা হলে ফ্লাফি একটি কেকের মতো। গান বাজালেই সে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়বে।
হ্যাগ্রিড হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন-এসব তোমাদের বলা আমার উচিত হয়নি। যা বলেছি সব ভুলে যাও। তাকে চিন্তিত মনে হল উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে গিয়ে আবার ঘরে ফিরে এলেন। হ্যারি, রন আর হারমিওন কেউ কোন কথা বললো না।
বিষয়টা ডাম্বলডোরকে জানাতে হবে। হ্যারি বলল–ফ্লাফিকে কীভাবে বশ করা যায়, হ্যাগ্রিড ওই লোককে বলে দিয়েছেন। আমার ধারণা লোকটা–ছদ্মবেশে হয় স্নেইপ নতুবা ভোলাডেমর্ট। আমার ধারণা, ভালভোর আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন, আমার এটাও বিশ্বাস, ফিরে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন যদি বেন তাকে বাধা না দেয়।
ডাম্বলডোরের অফিস কোথায়?
তারা চারিদিকে দেখতে লাগলো, ডাম্বলডোরের অফিসে যাওয়ার কোন নির্দেশনা দেখা যায় কিনা। ডাম্বলডোর কোথায় থাকেন তারা জানে না কেউ তাদের বলেওনি। ডাম্বলডোরের বাসভবনে কেউ গিয়েছে কখনো, এমন কথাও তারা শোনেনি।
আমাদের করতে হবে… হ্যারি যখন কথা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই একটা কণ্ঠস্বর হল ঘর থেকে তাদের কানে ভেসে এল।
তোমরা তিনজন এখানে কী করছ? কণ্ঠস্বরটা ছিল অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলের। তার হাতে একগাদা বই।
আমরা অধ্যাপক ডাম্বলডোরের সাথে দেখা করতে চাই। হারমিওন সাহসের সাথে বলল। হ্যারি, আর রন চুপ রইল।
ম্যাকগোনাগল বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করলেন–ডাম্বলডোরের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাও, কিন্তু কেন? একটু ঢোক গিলে হ্যারি বলল–বিষয়টা গোপনীয়।
অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলের চেহারায় বিরক্তির চিহ্ন স্পষ্ট।
তিনি বললেন–দশ মিনিট আগে ডাম্বলডোর বের হয়েছেন। তিনি জাদু মন্ত্রণালয় থেকে জরুরী পেঁচা পেয়ে লন্ডন গেছেন।
তিনি চলে গেছেন? হ্যারি হতাশার সাথে মন্তব্য করল–তাহলে এখন কী হবে?
অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল বললেন–হ্যারি, অধ্যাপক ডাম্বলডোর খুব উঁচু মাপের জাদুকর। তার সময়ের মূল্য আছে।
কিন্তু এটাও তো খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়।
মি. পটার। জাদু মন্ত্রণালয়ের কাজের চাইতে কি তোমার কথা বলাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
কলড্রনটা বাতাসের দিকে ঠেলতে ঠেলতে হ্যারি বলল–প্রফেসর, বিষয়টা পরশমণি সংক্রান্ত।
অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল প্রত্যাশা কেন, কল্পনাও করতে পারেননি যে, তিনি এ রকম একটা কথা শুনবেন। অবাক বিস্ময়ে পাথরের মত তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং হাতের বইগুলো হাত থেকে পড়ে গেল। কিন্তু তিনি একটা বইও মাটি থেকে তুললেন না।
তোমরা এসব জানো কীভাবে? ম্যাকগোনাগল প্রশ্ন করলেন।
প্রফেসর–আমার মনে হয়–আমি জানি–অধ্যাপক স্নেইপ এটা চুরি করতে চাচ্ছেন। এই পাথরটা। তাই এ ব্যাপারে ডাম্বলডোরের সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে।
সন্দেহ আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ম্যাকগোনাগল হ্যারির দিকে তাকালেন। তারপর একটু থেমে বললেন–অধ্যাপক ডাম্বলডোর আগামীকাল ফিরে আসবেন। আমি বুঝতে পারছি না তোমরা কীভাবে পাথরটার খোঁজ পেলে। তবে নিশ্চিত থেকো–কেউই এটা চুরি করতে পারবে না। এটা এখন নিরাপদেই আছে।
কিন্তু প্রফেসর…
আমি কী বিষয়ে কথা বলছি সেটা আমি জানি। ম্যাকগোনাগল এই কথা বলে মাটি থেকে বইগুলো কুড়িয়ে নিলেন। তারপর একটু থেমে বললেন–তোমরা সবাই একটু বাইরে গিয়ে রোদ উপভোগ কর।
ম্যাকগোনাগল তাদের চোখের আড়ালে চলে যেতেই হ্যারি বলল আজ রাতেই স্নেইপ দরজার ফাঁদ পার হবেন। তার যা যা দরকার সবই তিনি হাতে পেয়ে গেছেন। ডাম্বলডোরকে কৌশলে বাইরে পাঠানো হয়েছে। আমি নিশ্চিত, ডাম্বলডোরের লন্ডন পৌঁছানোর পর জাদু মন্ত্রণালয়ও বিরাট ধাক্কা খাবে।
তাহলে আমরা কী করতে পারি?
হারমিওন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। হ্যারি ও রন একটু ঘুরে তাকাতেই দেখে স্নেইপ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে।