চিরকুটে লেখা—
যদি দরকার হয়।
১৬. দরোজার ফাঁদের ভেতর দিয়ে
সুদূর ভবিষ্যতে হ্যারি কখনও মনে করতে পারবে না এত সহজে কীভাবে সে সব পরীক্ষায় উতরে গেল। আর বিশেষ করে যখন ভলভেমর্টের আগমনের আশঙ্কা তার মাথার ওপর খাঁড়া হয়ে ঝুলছে।
এর মধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। কুকুর ফ্লাফি এখনও নিশ্চয়ই সেই তালাবদ্ধ দরোজাটা পাহারা দিচ্ছে।
বড় ক্লাসরুমটা অত্যন্ত গরম। পরীক্ষার জন্য তাদের পালকের কলম দেয়া হয়েছে। এই কলমগুলো জাদু করা যেন কেউ পরীক্ষায় নকল না করতে পারে।
ব্যবহারিক পরীক্ষায় অধ্যাপক ফ্লিটউইক ছাত্রদের এক এক করে ডাকলেন। তারপর বললেন ডেস্কের ওপর নৃত্যরত আনারস তৈরি করতে। অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল তাদের নির্দেশ দিলেন, ইঁদুরকে নস্যির কৌটা বানাতে। ভালো ফলাফলের জন্য পয়েন্ট দেবার ব্যবস্থা ছিল। বিস্মৃতির ওষুধ তৈরি করার নির্দেশ দিয়ে অধ্যাপক স্নেইপ তাদের অলক্ষ্যে পেছনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে শ্বাস ফেলে সবাইকে নার্ভাস করেন।
কপালের তীব্র ব্যথা সত্ত্বেও হ্যারি যথাসাধ্য ভালো করল। বনে যাওয়ার পর থেকে সে কপালের যন্ত্রণায় ভুগছে। নেভিল ভেবেছিল, হ্যারি পরীক্ষায় ভালো করবে না। কারণ, তার মত হ্যারিরও রাতে ঘুম হয়নি। নেভিলের ধারণা পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় ওর ঘুম হয়নি, কিন্তু আসলে প্রায়ই দুঃস্বপ্ন তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতো। মাঝে মাঝে সে ঘুমের ভেতর রক্তাক্ত ছায়ামূর্তি দেখতে পেতো।
হ্যারি বনে যা দেখেছে–তারা তা দেখেনি। অথবা এমনও হতে পারে যে তাদের কপালে হ্যারির মতো কাটা দাগ নেই। পাথর নিয়ে হ্যারি যতটা উদ্বিগ্ন রন বা হারমিওনকে তেমন উদ্বিগ্ন মনে হয় না। ভুলডেমর্টের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা তাদেরকেও ভাবনায় ফেলেছিল। অবশ্য ভলডের্ট তাদের কাছে স্বপ্নে এসে দেখা দিত না। তারা পরীক্ষার পড়া নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে–স্নেইপ বা অন্য কেউ কী করছেন বা কী করবেন-এ নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের হাতে ছিল না।
শেষ পরীক্ষাটা ছিল জাদুর ইতিহাসের ওপর। এক ঘণ্টার প্রশ্নোত্তর। অধ্যাপক রিনসের ভূত যখন তাদের বলল–কলম বন্ধ কর আর তোমাদের পার্চমেন্ট ভাঁজ কর তখন অন্যদের সাথে হ্যারিও ভীষণ খুশি না হয়ে পারলো না। পরীক্ষার ফলাফল বের হবার আগ পর্যন্ত তাদের ছুটি।
রৌদ্র করোজ্জ্বল মাঠে সবাইকে ডেকে হারমিওন বলল–আমি ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক সহজ।
হারমিওন সব সময় পরীক্ষার পর পরীক্ষার খাতাগুলো আবার দেখে। রন বলে যে এতে করে সে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই তারা মাঠে, হ্রদে, বৃক্ষের নিচে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে লাগল।
ঘাসের ওপর হাঁটতে হাঁটতে রন বলল–আবার এত রিভিসনের দরকার কি। পরীক্ষার চিন্তা বাদ দাও হাসিখুশি থাক হ্যারি। এখনও এক সপ্তাহ হাতে আছে। এক সপ্তাহ পর জানা যাবে আমাদের পরীক্ষা কেমন হলো। অতএব এখন চিন্তা করার কোন কারণ নেই। হ্যারি তার কপালে হাত বুলাচ্ছিল।
হ্যারি ক্রুদ্ধ স্বরে বলল–আমার এই কপালের কাটা দাগ সব সময় আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমি যদি জানতে পারতাম-এর অর্থ কী। এর আগেও কষ্ট দিয়েছে তবে এত কষ্ট দেয়নি কখনও।
মাদাম পমফ্রের কাছে যাও। হারমিওন পরামর্শ দিল।
আমি অসুস্থ নই। হ্যারি জবাব দিল–আমার মনে হয় এটা একটা সতর্ক সংকেত, মনে হয় সামনে বিপদ আসছে।
রনও কাজ করতে পারছিল না, কারণ তখন খুব গরম আবহাওয়া ছিল।
রন আর হারমিওন হ্যারিকে সান্তুনা দিয়ে বলল–হ্যারি এত অস্থির হয়ো না। ঘাবড়াবার এত কি আছে, যেখানে ডাম্বলডোর রয়েছেন সেখানে পরশমণি নিরাপদ। আর অধ্যাপক স্নেইপ কখনোই ফ্লাফিকে কোন অবস্থাতেই কাবু করতে পারবেন না।
হ্যারি মাথা নাড়াল, কিন্তু একটা চিন্তা মাথা থেকে কিছুতেই দূর করতে পারছিল না। তার বার বার মনে হচ্ছিল, একটা কাজ তার করা উচিত ছিল কিন্তু করা হয়নি। যখন সে বিষয়টা হারমিওনের কাছে ব্যাখ্যা করল, হারমিওন বলল–সামনে পরীক্ষা। আমি রাত জেগে পড়ছিলাম। পড়ার মাঝখানে আমার মনে হল যে কাজটা আমরা শেষ করেছি।
হ্যারি জানে, তার অস্থির মনের সাথে কাজের কোন সম্পর্ক নেই। হঠাৎ সে দেখলো একটা পেঁচা স্কুলের দিকে উড়ে আসছে। ঠোঁটে একটা চিঠি। আকাশটা উজ্জ্বল, নীল। হ্যাগ্রিড ছাড়া আর কেউ হ্যারিকে চিঠি লেখে না। অবশ্য হ্যাগ্রিড কখনোই ডাম্বলডোরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। হ্যাগ্রিড কখনোই বলবেন না, কীভাবে ফ্লাফিকে কাবু করা যায়–হ্যারি দ্রুত লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। রন জানতে চাইল–কোথায় যাও।
আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। আমাদেরকে এখুনি হ্যাগ্রিডের কাছে যেতে হবে।
কেন? হারমিওন প্রশ্ন করল।
তুমি তো জানো, হ্যাগ্রিড কি চান? হ্যারি বলল–তিনি সবার আগে একটা ড্রাগন চান। অনেকেই পকেটে ড্রাগনের ডিম রাখে। এটা কিন্তু জাদু আইনের পরিপন্থী।
তুমি কী করতে চাও? রন জানতে চাইল। এ প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে হ্যারি বনের দিকে রওনা হল, রন ও হারমিওন তার পেছনে পেছনে গেল।
হ্যাগ্রিড বাইরে আরাম কেদারায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার ট্রাউজার আর জামার আস্তিন গুটানো। মটরশুটি ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে পাশে রাখছিলো।
হ্যালো মুচকি হেসে হ্যাগ্রিড তাদের স্বাগত জানিয়ে বললেন পরীক্ষা তো শেষ। কি, একটু পানীয় পানের সময় হবে কী?