বনটা অন্ধকার ও নীরব। কিছুদূর যাবার পর পথ দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। স্যরি, হারমিওন আর হ্যাগ্রিড বাঁদিকের রাস্তা ধরল। ম্যালফয়, নেভিল আর ফ্যাঙ ডানদিকের রাস্তায় আগে বাড়ল।
মাটির ওপর দৃষ্টি রেখে তারা নীরবে কিছুদূর অগ্রসর হল। একটু পরই তারা চাঁদের আলোতে ঝড়ে পড়া পাতার ওপর রূপালী নীল রক্ত দেখতে পেল। হ্যারি দেখল, হ্যাগ্রিড খুবই উদ্বিগ্ন।
নেকড়েবাঘ কি কোন ইউনিকর্নকে হত্যা করেছে? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড বললেন–ইউনিকর্ন ধরা খুব সহজ নয়। তারা শক্তিশালী ঐন্দ্রজালিক প্রাণী। ইউনিকর্ন আহত হয়েছে-এর আগে আমি কখনো শুনিনি।
তারা একটি পিচ্ছিল শেওলাপড়া গাছ পার হলো। হ্যারি জল গড়িয়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল। বুঝতে পারল কাছাকাছি কোথাও জলাশয় আছে। আঁকাবাঁকা পথের এখানে সেখানে তারা ইউনিকর্নের রক্ত দেখতে পেল?
হারমিওন তুমি ঠিক আছো তো, কোন অসুবিধা হচ্ছে? হাড়ি বললেন।
যদি এটা আহত ইউনিকর্ন হয় তাহলে এটা খুব বেশি দূর যেতে পারেনি।
তারপর হ্যাগ্রিড হঠাৎ বলে উঠলেন, তোমরা এই গাছটার পেছনে চলে যাও।
হ্যাগ্রিড, হ্যারি ও হারমিওনকে হাতে ধরে তাদেরকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়ে একটা বিশাল ওক গাছের পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তিনি একটা তীর বের করে ধনুতে লাগালেন। তীর ছোঁড়ার জন্য তিনি প্রস্তুত। কাছাকাছি শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একটা পোশাক যেন শুকনো পাতার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পর শব্দটি কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
আমি জানি। তিনি বিড়বিড় করে বললেন-এখানে এমন কেউ আছে যার এখানে থাকার কথা নয়।
নেকড়ে? হ্যারি প্রশ্ন করে।
এখানে কোন নেকড়ে বাঘ নেই, নেই কোন ইউনিকর্ন। হ্যাগ্রিড বললেন–ঠিক আছে। এবার তোমরা আমার পেছনে পেছনে এসো। তবে সাবধান থেকো।
কিছুক্ষণ পর তারা একটা অদ্ভুত জীব দেখল। কোমর পর্যন্ত মানুষ। লালচুল–দাঁড়ি। কিন্তু কোমরের নিচ থেকে ঘোড়া। এমন কী একটা লাল লেজও রয়েছে!
হ্যাগ্রিড জানালেন যে এর নাম রোনান।
আর রোনান হচ্ছে একজন সেন্টর। গ্রীক পুরানে–তোমরা নিশ্চয়ই এর কথা শুনেছ। অর্ধমানব আর অর্ধ অশ্বদেহধারী।
ও তুমি রোনান। হ্যাগ্রিড নিরুদ্বেগে জানতে চাইলেন–তুমি কেমন আছ?
রোনান সামনে এগিয়ে গিয়ে হাত নাড়ল।
গুড আফটারনুন হ্যাগ্রিড। রোনান বলল। তার কণ্ঠে একটা করুণ আর্তি ছিল।
রোনান হ্যাগ্রিডকে প্রশ্ন করল–তুমি কি আমাকে মারতে চেয়েছিলে?
তীরের ওপর হাত বোলাতে বোলাতে হ্যাগ্রিড বললেন–নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারি না। বনে এমন কেউ ছিল যার থাকার কথা ছিল না। থাক সে কথা। এরা ইল হ্যারি পটার আর হারমিওন গ্রেঞ্জার। তারা দুজনেই ছাত্র। আর ও হল রোনান। একজন সেন্টর।
আমরা দেখেছি। হারমিওন স্তিমিত কণ্ঠে বলল।
গুড আফটারনুন। রোনান বলল–তোমরা কি ছাত্র? তোমরা কি স্কুলে অনেক কিছু শিখেছো?
অল্প-সল্প। বিনীত কণ্ঠে হারমিওন জবাব দিল।
অল্প-সল্প। তবুও কিছু শিখছ রোনান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল। মাথা পেছনে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ও মন্তব্য করল–আজ মঙ্গলগ্রহ বেশ উজ্জ্বল।
তুমি ঠিকই বলেছ। আকাশের দিকে তাকিয়ে হ্যাগ্রিড সায় দিলেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে হ্যাগ্রিড বললেন–আমি আনন্দিত যে আমরা একত্রিত হয়েছি। একটা ইউনিকর্ন আহত হয়েছে। তুমি কি তাকে কোথাও দেখেছ?
রোনান কোন জবাব দিল না। সে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল–সর্বত্রই দেখা যায় যে নিরীহ ব্যক্তিরাই সবার আগে শাস্তি পায়। এখানেও তাই দেখছি।
হ্যাগ্রিড বললেন–রোনান, তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু তুমি কি কোন অস্বাভাবিক কিছু দেখেছ?
মঙ্গলগ্রহ আজ উজ্জ্বল। রোনান বলল। হ্যাগ্রিড অধীরভাবে রোনানকে লক্ষ্য করছিলেন।
রোনান আবার বলল–আজ রাতে মঙ্গলগ্রহটা অস্বাভাবিক রকম উজ্জ্বল।
হ্যাগ্রিড বললেন–তাহলে তুমি অদ্ভুত কিছু দেখনি?
এবারও জবাব দিতে রোনান অনেক সময় নিল।
তারপর বললেন–বনে অনেক জিনিস লুকিয়ে থাকতে পারে।
রোনানের পেছনে গাছে মৃদু আন্দোলন দেখা গেল। হ্যাগ্রিড তার তীর ধনুক প্রস্তুত করতে উদ্যত হলেন। এবার দ্বিতীয় সেন্টর সামনে এল। তার চুল কালো। সে রোনান থেকেও বেশি হৃষ্ট–পুষ্ট।
হ্যালো বেইন। হ্যাগ্রিড বললেন–তুমি কি ভালো আছো?
গুড আফটারনুন হ্যাগ্রিড, আশা করি ভালো আছো।
ভালো। হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন। দেখো, আমি রোনানকে জিজ্ঞেস করছিলাম তুমি কি সম্প্রতি এখানে অদ্ভুত কিছু দেখেছ? এখানে একটি ইউনিকর্ন আহত হয়েছে। তুমি কি এ ব্যাপারে কিছু জানো?
বেইন উঠে রোনানের পাশে বসল। আকাশের দিকে তাকাল। তারপর শুধু বলল–আজ রাতে মঙ্গলগ্রহ উজ্জ্বল।
একথা তো আমরা আগেও শুনেছি। হ্যাগ্রিড একটু বিরক্তির সাথে বললেন–ঠিক আছে, তোমাদের দুজনের কেউ যদি কোন অদ্ভুত জিনিস দেখ তাহলে আমাকে জানিও। এবার আমি উঠি।
হ্যারি আর হারমিওনও উঠল। কয়েকটা বৃক্ষ তাদের পথরোধ না করা পর্যন্ত তারা হাঁটতে লাগল।
সেনটরের কাছ থেকে কখনো সরাসরি উত্তর আশা করো না। হ্যাগ্রিড হ্যারি আর হারমিওনের উদ্দেশ্যে বললেন।
এখানে কি অনেক সেন্টর আছে? হারমিওন জানতে চায়।
না, খুবই কম। তারা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখতে চায়। তবে তারা মাঝে মাঝে বেশ উপকারী হয়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানা যায়। তারা অনেক কিছুই জানে কিন্তু বলতে চায় না।