আজ রাত ১১টা থেকে তোমাদের ডিটেনশন শুরু হবে।
প্রবেশ কক্ষে গিয়ে ফিলচের সাথে দেখা করো।
–অধ্যাপক এস. ম্যাকগোনাগল।
হ্যারি ভুলেই গিয়েছিল যে পয়েন্ট খোয়ানোর জন্য তাদেরকে ডিটেনশনের মুখোমুখি হতে হবে। ওই রাতে তারা রনের কাছ থেকে বিদায় নিল। রাত ১১টায় তারা প্রবেশ কক্ষে গেল। ফিলচ সেখানেই ছিলেন। সেখানে ম্যালফয়কেও দেখা গেল। হ্যারি ভুলে গিয়েছিল যে ম্যালফয়েরও ডিটেনশন হয়েছে।
ফিলচ বললেন–আমার পেছন পেছন এসো। তারা তার পেছনে পেছনে গেল। ফিলচ বললেন–স্কুলের আইন–কানুন ভাঙার আগে তোমাদেরকে দুবার করে ভাবতে হবে। আমি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে আরও কঠিন শাস্তি দিতে পারতাম। কয়েকদিন তোমাদেরকে এ ঘরে বন্দি করে রাখতে পারতাম। শিকল দিয়ে বেঁধেও রাখতে পারতাম। আমার অফিসেই শিকল আছে। কিন্তু এবারের মতো ওদিকে যাচ্ছি না। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কোন কাজ করবে না। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না। করলে তোমাদেরই বেশি ক্ষতি হবে।
তারা অন্ধকার মাঠ দিয়ে এগিয়ে গেল। হ্যারি ভাবছিল তাদের কী শাস্তি হবে। নিশ্চয়ই ভয়ঙ্কর কিছু।
চাঁদ ছিল উজ্জ্বল। তবে মেঘ চাঁদকে খানিকটা ঢেকে রেখেছিল। একটু এগিয়ে যেতেই হ্যারি গ্রিডের কুটিরের জানালায় আলো দেখতে পেল। তারা দূর থেকে কিছু কথাবার্তার শব্দ শুনতে পেল। এটা কে? তুমি ফিলচ? তাড়াতাড়ি এসো। আমি কাজ শুরু করতে চাই।
হ্যারি ভাবছিল তারা যদি হ্যাগ্রিডের সাথে কাজ করে, তাহলে খুব খারাপ হবে না। হ্যারি বেশ আশস্ত বোধ করল। কারণ ফিল তাকে বলল নিশ্চয়ই ভাবছ বন্ধুটার সাথে তুমি তোমার সময় আনন্দেই কাটাতে পারবে। ভালো করে ভাব, তোমরা ঠিকমতো ফিরে আসতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
এই কথা শুনে নেভিল কাদো কাঁদো হল আর ম্যালফয় পথে পাথরের মত দাঁড়িয়ে গেল।
এই বনে। সে বার বার বলল–রাতের বেলায় যাওয়া নিষেধ। এছাড়া ওখানে অনেক কিছু আছে। আমি শুনেছি সেখানে নেকড়ে বাঘ আছে। উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর।
নেভিল হাৱির জামার আস্তিন ধরে ফুঁপিয়ে উঠল।
সেটা তোমাদের দেখার ব্যাপার। ফিলচ বললেন–
যদি নেকড়ে থেকে থাকে তাহলে তোমাদের আগেই ভেবে দেখা উচিত ছিল। তাই নয় কি?
অন্ধকার ভেদ করে হ্যাগ্রিড তাদের দিকে এগিয়ে এলেন। সাথে তার কুকুর ফাং। আর কাঁধে ছিল বড় ধনুক ও তীর।
হ্যাগ্রিড বললেন–হ্যারি আর হারমিওন, আমি তো আধঘণ্টা ধরেই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।
ফিলচ শীতল কণ্ঠে বললেন–তাদের সাথে তোমার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা ঠিক হবে না, হ্যাগ্রিড। তাদেরকে এখানে আনাই হয়েছে শাস্তি দেবার জন্য।
এ জন্যই বুঝি তোমার দেরি হয়েছে? হ্যাগ্রিড প্রশ্ন করলেন। ফিলচের প্রতি কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হ্যাগ্রিড বললেন–তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণ বক্তৃতা দিচ্ছিলে। তুমি তোমার কাজ করেছ। এবার আমি আমার কাজ শুরু করব।
ফিলচ বললেন–কাল সকালে আমি খবর নেব। এদের কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে আমি দেখব।
হাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে ম্যালফয় বলল–আমি এই বনে যাব না। ম্যালফয়ের স্বরে ভয় পাওয়ার ভাব দেখে হ্যারি বেশ খুশি হলো।
হ্যাগ্রিড বললেন–হোগার্টসে থাকতে হলে তোমাকে ওখানে যেতেই হবে। তুমি অন্যায় করেছ। এখন তার শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এগুলো তো চাকরবাকরের কাজ। ছাত্রদের নয়। আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরকে কিছু লেখালেখি বা এ ধরনের কিছু করতে হবে।
হ্যাগ্রিড তার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললেন–হোগার্টসে তাই করতে হয়। যদি না করতে ইচ্ছে হয় তাহলে দুর্গে ফিরে যাও এবং বহিস্কৃত হয়ে বাড়িতে ফিরে যাও।
ম্যালফয় একটুও নড়ল না। কঠোর ভঙ্গিতে হ্যাগ্রিডের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিল।
এবার হ্যাগ্রিড তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন–মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনা, আমি আজ রাতে ফে কাজটা করতে যাচ্ছি–তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমি চাই না তোমরা কেউ বিপদে পড়। এসো, আমার পেছনে পেছনে এসো।
হ্যাগ্রিড তাদেরকে বনের এক প্রান্তে নিয়ে এলেন। হাতে একটা লণ্ঠন ধরে একটা আঁকাবাকা পথ তাদের দেখালেন। পথটা বনে মিলিয়ে গেছে। মৃদুমন্দ বাতাসে তাদের চুল উড়ছিল।
এদিকে তাকাও। হ্যাগ্রিড বললেন–মাটির ওপর ঝলমলে জিনিসটা দেখ। রূপালী রঙ। এটা ইউনিকর্নের রক্ত। এখানে একটা ইউনিকর্ন আছে যে আঘাত পেয়েছে। এ সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের ঘটনা ঘটল। গত বুধবারে আমি একটা ইউনিকর্নকে মৃত অবস্থায় দেখেছি। আমাদের চেষ্টা হবে আহত প্রাণীটাকে খুঁজে বের করে তাকে কষ্ট থেকে বাঁচানো।
নিজের ভয় গোপন না করে ম্যালফয় প্রশ্ন করল–ইউনিকর্ন যদি প্রথমেই আমাদেরকে আক্রমণ করে বসে।
যতক্ষণ তোমরা আমার সাথে অথবা আমার কুকুর ফ্যাঙের সাথে থাকবে ততক্ষণ তোমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।
ফ্যাঙের দীর্ঘ দাঁত দেখে ম্যালফয় বলে উঠল–আমি ফ্যাঙকে চাই।
হ্যাগ্রিড বলল–ফ্যাঙকে নিতে চাও নাও। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি ফ্যাঙ নিজেই খুব ভীরু। আমার দিকে তাকাও। হ্যারি আর হারমিওন বাম দিকে যাবে। ম্যালফয়, নেভিল আর ফ্যাঙ ডানদিকে যাবে। যদি আমাদের কেউ ইউনিকর্ন দেখতে পায় সে বা তার দল সবুজ আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবে। ঠিক আছে তোমরা তোমাদের জাদুদণ্ড বের কর। এখনই এটা নিয়ে অনুশীলন কর। যদি আমাদের কেউ বিপদে পড়ে সে লাল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবে। আমরা সবাই তার খোঁজে চলে আসব। সাবধানে থেকো। চলে, যাওয়া যাক।