তোমাদের প্রত্যেকের পঞ্চাশ পয়েন্ট কাটা গেল। দীর্ঘ খাড়া নাকের মাধ্যমে নিঃশ্বাস নিতে নিতে ম্যাকগোনাগল বললেন।
প্রফেসর প্লিজ….
আমার কিছু করার নেই। ম্যাকগোনাগল জবাব দিলেন।
অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল বলে চল্লেন–আমি কি করবো, কি করবো না, এটা তোমার বলার দরকার নেই মি. পটার। এবার তোমরা সবাই ঘুমোতে যাও। গ্রিফিল্ডর হাউজের ছাত্র–ছাত্রীদের জন্য আমাকে আর কখনও এত লজ্জা পেতে হয়নি।
এক রাতেই ১৫০ পয়েন্ট কাটা যাওয়াতে গ্রিফিল্ডর হাউজ অনেক পেছনে পড়ে গেল। মনে হলো তুলাটা পড়ে গেছে, পাত্রে আর কিছু নেই। কীভাবে তারা এই ক্ষতি পূরণ করবে?
হ্যারি সারারাত ঘুমোতে পারেনি। সে সারারাত নেভিলের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। সে বুঝতে পারে নেভিলও তার মত শোকাভিভূত। ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা বা বলার কিছু হ্যারির নেই। গ্রিফিল্ডর হাউজ এত পেছনে পড়ে গেছে এ ক্ষতিটা কীভাবে তারা পূরণ করবে-এ নিয়ে নেভিল হ্যারির মতই খুব উদ্বিগ্ন। কি হবে, যখন গ্রিফিল্ডরের সবাই জানবে তারা কি করেছে?
হ্যারি পটার থাকতেও দলের এই দশা। সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় হ্যারি পটারকে সবাই হঠাৎ ঘৃণা করতে শুরু করল। এমনকি বাভেনক্ল এবং হাফলপাফস-এর সবাই তার ওপর ক্ষুদ্ধ। কারণ তারাও চায় স্লিদারিরা যেন হাউজ কাপ না পায়। স্লিদারিন হাউজ খুবই উৎফুল্ল। তারা এখন হ্যারিকে দেখলেই মস্করা করে–থ্যাংক ইউ হ্যারি পটার। তোমার কাছে আমরা ঋণী।
একমাত্র রনই হ্যারির পাশে এসে দাঁড়াল।
কয়েক সপ্তাহের ভেতর তারা এটা ভুলে যাবে। এখানে আসার পর ফ্রেড ও জর্জ আনেক পয়েন্ট হারিয়েছে। তবুও তাদের সবাই পছন্দ করে।
তারা একবারে দেড়শ পয়েন্ট হারায়নি, হারিয়েছে কি? রন বলল, না, কখনোই না।
যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে অনেক সময় লাগবে। হ্যারি ভাবল এখন থেকে তার দায়িত্ব বা এখতিয়ারের বাইরে কোন জিনিস নিয়ে সে মাথা ঘামাবে না। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো, অন্যের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা-এ ধরনের কাজে সে আর লিপ্ত হবে না। সে ভীষণ লজ্জিত হয়ে উডের কাছে গিয়ে বলল–আমি পদত্যাগ করতে চাই। পদত্যাগ। উড় হতভম্ব হয়ে বলে। কেন? পদত্যাগ করে কী লাভ হবে? উড পাল্টা প্রশ্ন করে-এতে কি তোমাদের দল জিতবে? যে পয়েন্ট খোয়া গেছে কিডিচ খেলায় না জয়লাভ করে তা কি করে ফেরত পাওয়া যাবে?
কিন্ডিচ খেলায় আগের মত মজা নেই। অনুশীলনের সময় দলের কোন খেলোয়াড় হ্যারির সাথে কথা বলে না। হ্যারির সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে তারা তাকে তার নাম না বলে সিকার বলে ডাকে।
হারমিওন আর নেভিলও কষ্ট পাচ্ছিল। তবে তাদের কষ্ট হ্যারির মত এত বেশি নয়। কারণ, তারা হ্যারির মত এত পরিচিত নয়। তাদের সাথেও কেউ কথা বলছে না। ক্লাসে হারমিওনও আগের মতো শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না। সে মাথা নিচু করে নীরকে তার কাজ করে।
সামনে পরীক্ষা চলে আসায় হ্যারির খুব ভালো লাগল। কারণ পরীক্ষার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সহজেই তার কষ্টের কথা ভুলতে পারবে।
হ্যারি প্রতিজ্ঞা করেছিল যে অন্যের বিষয় নিয়ে সে আর মাথা ঘামাবে না। তার এই প্রতিজ্ঞা হঠাৎ এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলো।
স্কুলের পরীক্ষা শুরু হবার সপ্তাহখানেক আগে লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে সে অধ্যাপক কুইরেলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল।
কুইরেল বলছেন–না, না, আর নয় প্লীজ মনে হল কেউ তাকে ভয় দেখাচ্ছে। হ্যারি এগিয়ে গেল।
আবার কুইরেলের গলা–ঠিক আছে,.. ঠিক আছে।
একটু পরেই অধ্যাপক কুইরেল ফিরে এলেন। তিনি তার পাগড়ি ঠিক করলেন। তাকে বেশ মনমরা দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনই বুঝি তিনি চিৎকার করে উঠবেন।
হ্যারির মনে হল অধ্যাপক কুইরেল তাকে দেখতে পাননি। তার পায়ের শব্দ মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত হ্যারি অপেক্ষা করল। তারপর ক্লাসরুমে ঢুকল। সেখানে কেউই ছিল না। অবশ্য অপর প্রান্তের দরোজা খোলা ছিল। হ্যারি এগোচ্ছিল। হঠাৎ তার নিজের প্রতিজ্ঞার কথা মনে হলো। এসব নিয়ে ভাবা তো তার কাজ নয়।
লাইব্রেরিতে ঢুকে হ্যারি হারমিওন ও রনকে সব খুলে বললো। অভিযানের আগ্রহ রমের ভেতর আবার জাগতে শুরু করেছে, তার আগেই হারমিওন বললো–ডাম্বলডোরের কাছে যাও। অনেক আগেই তার কাছে আমাদের খাওয়া উচিত ছিল। এবার যদি আমরা কোন কিছু নিজেরাই করি তাহলে স্কুল থেকে নির্ঘাৎ আমাদের বের করে দেয়া হবে।
কিন্তু আমাদের হাতে তো কোন প্রমাণ নেই। হ্যারি বলল
আমাদেরকে সমর্থন করতে অধ্যাপক কুইরেলও ভয় পাবেন। অধ্যাপক স্নেইল্প বলবেন–হ্যালোইন দৈত্যটি কীভাবে এল তা তার জানা নেই। চতুর্থ তলায় যখন ঘটনা ঘটে তখন তিনি ধারে কাছে কোথাও ছিলেন। না। তাহলে কাকে বিশ্বাস করবেন–তাকে মা আমাদেরকে। ডাম্বলডোর ভাববেন তাকে পদচ্যুত করার জন্য আমরা গল্পটা বানিয়েছি। ঝুঁকি থাকলে ফিলও আমাদের সাহায্য করবেন না। আর এটাও মনে রেখো পরশমণি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানার কথা নয়। এটা জানাজানি হলে অনেক ব্যাখ্যা ও কৈফিয়ত দিতে হবে।
হারমিওন তার কথায় সন্তুষ্ট হলেও রন হলো না।
আমরা যদি এই নিয়ে একটু মাথা ঘামাই।
কোন প্রয়োজন নেই। হ্যারির সরাসরি উত্তর। আমরা বহু মাথা ঘামিয়েছি। এবার হ্যারি একটা মানচিত্র বের করল। জুপিটারের মানচিত্র। হ্যারি এর মধ্যেই জুপিটার গ্রহের চাঁদগুলোর নাম জেনে গেছে। পরদিন সকালে তারা যখন নাশতা করছিল তখন তাদের তিনজনের কাছেই একই বার্তা এল–