শোকাভিভূত হ্যাগ্রিড বললেন–বেশ কিছু ইঁদুর ও কিছুটা ব্রান্ডি বাক্সে রেখে দিয়েছি। খিদে পেলে খেয়ে নেবে। তাছাড়া ওর টেডি বিয়ারটা দিয়ে দিয়েছি, যাতে সে একজন সঙ্গী পায়, নিঃসঙ্গ অনুভব না করে।
বাক্সের ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে। মনে হচ্ছে ড্রাগন বোধহয় টেডি বিয়ারের মুও উড়িয়ে দিচ্ছে।
বাক্স বন্ধ করা হলে হ্যাগ্রিড ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। হ্যারি আর হারমিওন অদৃশ্য হওয়ার পোশাক দিয়ে বাক্সটা ঢেকে দিল এবং তারা দুজনও ওই পোশাকের নিচে ঢুকে গেল! কীভাবে দুর্গের চূড়ায় বাক্সটা ওঠানো হলো তা তারা জানতেও পারলো না।
এখন কেউ তাদের দেখতে পাচ্ছে না। কারণ তারা অদৃশ্য পোশাকে। তবে তারা একটু পরেই প্রায় দশফুট দূরে প্রদীপের আবছা আলোয় দুটা ছায়ামূর্তি দেখল। তারা হলেন অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল এবং ম্যালফয়। ম্যাকগোনাগল ড্রেসিং গাউন পরেছেন। তিনি ম্যালফয়ের কান টেনে চিৎকার করছেন–ডিটেনশান। মাঝরাতে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এত বড় স্পর্ধা। স্লিদারিন হাউজের বিশ পয়েন্ট কাটা গেল।
ম্যালফয় বলল–অধ্যাপক, আপনি বুঝতে পারছেন না। হ্যারি পটার আসছে। তার কাছে একটা ড্রাগন আছে।
বাজে কথা বল না। অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল বললেন–চল অধ্যাপক স্নেইপের কাছে।
তারা ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন।
যখন রাতের শীতল হাওয়া গায়ে কাঁটার মত বিধছে ঠিক তখনি টাওয়ারের চূড়ায় পৌঁছে তারা তাদের অদৃশ্য হওয়ার পোশাক খুলে ফেলল। হারমিওন বলল–ম্যালফয় শাস্তি পেয়েছে। আমার একটা গান গাইতে খুব ইচ্ছে করছে।
হ্যারি তাকে চুপ থাকতে বলল।
ম্যালফয়ের শাস্তির কথা চিন্তা করে তারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। নর্বার্ট বাক্সের ভেতর ছটফট করছে। ঠিক দশ মিনিট পর হঠাৎ চারটা ঝাড়ু তাদের সামনে উপস্থিত হলো। চার্লির বন্ধুরা খুব হাসি খুশি মেজাজের। নর্বার্টকে ওরা ঝুলিয়ে নিয়ে যাবে। হারমিওন ও হ্যারিকে ওরা দেখালো কি ভাবে ওকে ঝোলাবে এবং ওরা সবাই ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
নর্বার্ট চলে গেল। অবশেষে তারা নৰ্বার্ট থেকে অব্যাহতি পেল।
তারা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছে তখন তারা ফিলচকে দেখল।
সামনে বোধহয় আমাদের বিপদ আছে। তারা টাওয়ারের ওপর ভুল করে তাদের অদৃশ্য হওয়ার পোশাক ফেলে এসেছে।
১৫. নিষিদ্ধ বাগান
পরিস্থিতি এর চেয়ে আর খারাপ হতে পারে না।
ফিলচ তাদেরকে নিয়ে দোতলায় অধ্যাপক মাকগোনাগলের কক্ষে গেলেন। ওরা চুপচাপ বসে আছে। হারমিওন ভয়ে কাঁপছে। হ্যারি নানা রকম অজুহাত খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
এই বিপদ থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসবে তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। তারা এত নির্বোধের মত কাজ করল কীভাবে। অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলের কাছে কোন অজুহাতই টিকবে না। তারা রাতে চুপিচুপি বেডরুম ছেড়ে বাইরে চলে গেছে। আর টাওয়ারে ওঠার অপরাধ, এটা তো মাফ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। টাওয়ার নিষিদ্ধ এলাকা। শুধু ক্লাসের জন্য টাওয়ারে যাওয়া যায়। এর সাথে যোগ হয়েছে নর্বার্টকে পার্সেল করা। সবচে বড় বোকামি তারা করেছে অদৃশ্য হওয়ার পোশাক ছেড়ে এসে।
একটু পরই ম্যাকগোনাগল এলেন। পেছনে নেভিল। নেভিল চিৎকার করে বলল–হ্যারি, আমি তোমাকে সাবধান করার জন্য খুঁজতে গিয়েছিলাম। ম্যালফয় বলেছিল ও তোমাকে ধরতে যাচ্ছে। তোমার কাছে নাকি একটা ড্রাগ…
হ্যারি জোরে মাথা নেড়ে ইশারা দিয়ে নেভিলকে থামাতে চাইল। ম্যাকগোনাগল সেটা দেখে ফেলেছেন। তার প্রশ্বাসে যেন নবার্টের চেয়েও বেশি আগুনের হলকা বেরুচ্ছে। তিনি বললেন–আমি বিশ্বাসই করতে পারি না যে তোমরা এ রকম একটা কাজ করবে। মি. ফিল বলেছেন, তোমরা নাকি এস্ট্রোনমি টাওয়ারে উঠেছিলে রাত একটার সময়। জবাব দাও।
এই প্রথমবারের মতো হারমিওন তার শিক্ষকের কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না। সে মাথা নিচু করে নীরব মূর্তির মতো তার চটি জুতোর দিকে তাকিয়ে রইল।
ম্যাকগোনাগল বলে চললেন-এই ব্যাপারটি বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার দরকার হয় না। আমি বুঝতে পেরেছি। তোমরা একটা গাঁজাখুরি গল্প তৈরি করেছো। তোমরা ম্যালফয়কে এই মিথ্যা গল্প শুনিয়েছ যাতে সে বিছানা ছেড়ে ওখানে যায় ও বিপদে পড়ে।
হ্যারি নেভিলের চোখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে বলতে চাইল যা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। এসব শুনে নেভিলকে হতভম্ব ও ব্যথিত মনে হচ্ছিল। অন্ধকারে তাদেরকে সাবধান করতে গিয়ে নেভিলকে কী খেসারত দিতে হবে তা হ্যারি বুঝতে পারছিল।
ম্যাকগোনাগল বললেন–জঘন্য ব্যাপার। চার চার জন মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে বাইরে চলে গেছে। এ রকম কখনো আগে ঘটেনি। মিস গ্রেঞ্জার, আমি ভেবেছিলাম তোমার বেশ বুদ্ধিশুদ্ধি আছে। ঠি, পটার, আমি ভেবেছিলাম এসবের তুলনায় তোমার কাছে গ্রিফিল্ডর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা তিনজনেই এখন ডিটেনশনে যাবে–মি. লংবটম, তোমাকেও যেতে হবে। তোমারও মুক্তি নেই। মাঝরাতে স্কুলের আশপাশে ঘুরে বেড়াবার অধিকার তোমাকে কেউ দেয়নি। বিশেষ করে এই সময়ে যখন পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। গ্রিফিল্ডর হাউজ থেকে পঞ্চাশ পয়েন্ট কাটা হল।
পঞ্চাশ। হ্যারি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তাহলে তো গ্রিফিল্ডর আর এগিয়ে থাকতে পারবে না। গত কিডিচ প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে তারা এক ঈর্ষান্বিত অবস্থানে এসেছিল।