হ্যারি হঠাৎই রনের দিকে ফিরে বললো পেয়েছি। রন, তোমার ভাই চার্লি রোমানিয়ায় থাকে না? চার্লিই পারবে নৰ্বার্টকে যত্নে রাখতে।
চমৎকার! রন বললো। হ্যাগ্রিড কি বলেন?
অবশেষে হ্যাগ্রিভ রাজি হলেন। সিদ্ধান্ত হলো চার্লিকে পেঁচা পাঠানো হবে তার মত জানার জন্যে।
পরের সপ্তাহ বুধবার পর্যন্ত গড়াল। সবাই যখন শুতে গিয়েছে তখন হারমিওন আর হ্যারি একান্তে কমনরুমে গিয়ে বসল। মধ্যরাত। হঠাৎ করে প্রতিকৃতির গর্তটা খুলে গেল। সেখান থেকে বেরিয়ে এল রন। সে গা থেকে হ্যারির ছদ্ম আবরণটা খুলে ফেলল। সে এতক্ষণ হ্যাগ্রিডের কুঁড়ে ঘরে নর্বার্টকে মরা ইঁদুর খাওয়াচ্ছিল।
ড্রাগনটা আমাকে কামড়ে দিয়েছে। রন তার হাত দেখিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তার হাত একটা রক্তাক্ত রুমাল দিয়ে বাঁধা।
রন বলল–আমার জীবনে আমি এ পর্যন্ত যত প্রাণী দেখেছি তার মধ্যে এই ড্রাগনটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। হ্যাগ্রিড যখন এটার কাছে যান, মনে হয় তিনি যেন তার পোষ খরগোশের কাছে যাচ্ছেন। আমাকে যখন কামড় দিল তখন হ্যাগ্রিড বললেন–ভয়ের কিছু নেই, তোমাকে ভয় দেখাল। আমি যখন চলে আসি তখন শুনতে পেলাম হ্যাগ্রিড দিব্যি গান গাচ্ছেন।
অন্ধকার জানালায় টোকা পড়লো।
এটা হেডউইগ। হ্যারি বলল–ওকে ঢুকতে দাও। ও হয়তো চার্লির জবাব নিয়ে এসেছে।
তিনজন একত্র হয়ে চিঠি পড়তে শুরু করল–
প্রিয় রন,
তুমি কেমন আছ? তোমার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। নরওয়ের প্রাণীটি নিজে আনতে পারলে আমি খুশিই হতাম। তবে তাকে এখানে নিয়ে আসার কিছু ঝামেলা আছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আমার কয়েকজন বন্ধুর সাথে তাকে পাঠিয়ে দাও। তারা আগামী সপ্তাহে আমার এখানে আসছে। তবে তাকে এমনভাবে আনতে হবে যাতে এটা বাইরে থেকে দেখা না যায়।
তুমি কি শনিবার মধ্যরাতে তাকে নিয়ে সবচেয়ে উঁচু চুড়ায় আসতে পারবে? আমার বন্ধুরা তোমার সাথে সেখানে দেখা করবে। অন্ধকার থাকতেই তাকে সরিয়ে দিও।
যত দ্রুত সম্ভব জবাব দিও। ভালবাসা রইল।
চার্লি
তারা পরস্পরের দিকে তাকাল।
এটা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। হ্যারি বলল–আমাদেরও অদৃশ্য হওয়ার পোশাক আছে। নর্বার্টকে নিয়ে আমরা দুজন অনায়াসে ওই পোশাকের ভেতর ঢুকে পড়তে পারব।
তারা একমত হল যে, গত সপ্তাই তাদের বেশ খারাপ গেছে। তাই তারা যেকোন মূলোই নর্বার্ট ও ম্যালফয়ের কাছ থেকে মুক্তি চায়।
পরদিন সকালে বেশ সমস্যা দেখা দিল। রনের হাত দ্বিগুণ ফুলে গেছে। সে ভাবছিল মাদাম পমফ্রের কাছে যাবে কিনা। তিনি কি বুঝতে পারবেন যে, এটা ড্রাগনের কামড়। নিরুপায় হয়ে বিকেলে তাকে পমফ্রের কাছে যেতেই হল। তার হাতে কামড়ের জায়গাটা অনেকটা সবুজ হয়ে গেছে। তার মনে হল নবার্টের দাঁত খুব বিষাক্ত। দিনশেষে হ্যারি আর হারমিওন হাসপাতালে গিয়ে দেখে রনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সে বিছানায় শুয়ে আছে।
আমার হাতের সমস্যা বড় সমস্যা নয়। রন ফিস ফিস করে বলল এ ব্যথা বেশিক্ষণ থাকবে না। ম্যালফয় মাদাম পমফ্রেকে জানিয়েছে সে আমার কাছে বই ধার চাইতে আসবে। সুতরাং সে আসতে পারে। আমাকে নিয়ে সে কৌতুক করবে। সে বার বার আমাকে চাপ দিচ্ছিল–আমাকে কোন প্রাণী কামড় দিয়েছে তা মাদাম পমফ্রেকে জানাই। আমি মাদাম পমফ্রেকে বলেছি এটা কুকুরের কামড়। আমার মনে হয় তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেননি। কিডিচ খেলায় ম্যালফয়কে মারা আমার ঠিক হয়নি। এখন সে প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে।
হ্যারি আর হারমিওন রনকে সান্ত্বনা দিল।
শনিবার মাঝরাতের ভেতরই সব ঠিক হয়ে যাবে। হারমিওন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। এতে রনের উদ্বেগ কাটলো না। রন হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল–সর্বনাশ হয়ে গেছে। চার্লির চিঠিটা তো সেই বইয়ের ভেতরই রয়ে গেছে। ম্যালফয় যদি চিঠি পড়ে ফেলে তাহলে তো সে বুঝে ফেলবে যে আমরা নর্বার্টকে সরাবার চেষ্টা করছি। ঠিক সেই মুহূর্তে মাদাম পমফ্রে হাজির হলেন। তিনি বললেন–তোমরা এখন যাও। রনের নিদ্রা প্রয়োজন।
***
হেরমিওনকে হ্যারি বলল-এখন তো পরিকল্পনা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ভাগ্য ভালো ম্যালফয় আমাদের অদৃশ্য হওয়ার পোশাক সম্পর্কে কিছুই জানে না। আমাদেরকে সাবধানে এগোতে হবে। হ্যাগ্রিডকে তারা চার্লির চিঠির কথা বললে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তার অশ্রুর কারণ হতে পারে নৰ্বার্ট তার পায়ে কামড় দিয়েছে।
ও কিছু না! সে আমার জুতো নিয়ে খেলছিল। নর্বার্ট তো এখনও শিশু। হ্যাগ্রিড বললেন।
ড্রাগনটা তার লেজ দিয়ে দেয়ালে আঘাত করলে দেয়াল এত জোরে কেঁপে ওঠে যে জানালার কাঁচ চুরমার হয়ে। হ্যারি আর হারমিওন দূর্গে ফিরে এল। কিন্তু তাদের বারবার মনে হচ্ছিল–শনিবার হনুজ দূর অস্ত। শনিবার এখনও অনেক দূর।
নর্বার্টকে বিদায় দেবার সময় হ্যাগ্রিডের জন্য তাদের দুঃখ হলো। তারা এতটা উদ্বিগ্ন না হলে হয়ত কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারতো। রাতটা ছিল মেঘলা ও গাঢ় অন্ধকার। হাগ্রডের কুঁড়ে ঘরে সবকিছু প্রস্তুত করতে একটু বেশি সময় লাগলো। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, তারাও একটু দেরিতে এসেছে। কারণ পিভস প্রবেশ কক্ষে দেয়াল জুড়ে টেনিস খেলছিল। পিভস সেখান থেকে খেলা শেষ করে চলে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। একটা বড় বাক্সে নৰ্বার্টকে রাখা হলো।