শেষ কথাগুলোতে হ্যাগ্রিডের বক্ষ স্ফীত হলো, হ্যারি ও রন হারমিওনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
হ্যাঁ, তোমাদেরকে বললে আর কি ক্ষতি হবে!
অধ্যাপক ডাম্বলডোর ফ্লাফিকে আমার কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। এরপর সকল শিক্ষক মিলে ফ্লাফিকে জাদু দিয়ে বশ করে এই পরশপাথর পাহারায় বসান। তাদের মধ্যে অধ্যাপক স্নেইপও ছিলেন। হ্যাগ্রিড ব্যাখ্যা করলেন।
স্নেইপ? হ্যারি অবাক হয়।
হ্যাঁ–হ্যাঁ, তোমরা এই ব্যাপারটা জান না, তাই না? স্নেইপ পরশপাথর রক্ষা করতে চান, তার পক্ষে এটা চুরি করা সম্ভব নয়। হ্যান্ডি বললেন।
ওরা তিনজনই ভাবছে–যদি স্নেইপ পরশমনি রক্ষার পক্ষে থাকেন তাহলে অন্যান্য শিক্ষকগণ কিভাবে এটা রক্ষা করেন তা জানা সহজ হবে। হ্যাগ্রিড সবই জানেন।
অন্ততঃ অধ্যাপক কুইরেলের জাদুশক্তি ও কিভাবে ফ্লাফিকে ফাঁকি দেয়া যাবে–সবই জানা যাবে।
গরমে সিদ্ধ হওয়ার দশা সকলের। একটা জানালা খুলে দিলে হয়, মি. হ্যাগ্রিড! হ্যারি জানালা খুলতে উদ্যত হয়।
খোলা যাবে না, হ্যারি আমি দুঃখিত। বলেই হ্যাগ্রিড আগুনের দিকে তাকালেন। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে হ্যারিও আগুনের দিকে দৃষ্টি দিল। নজরে এল আগুনের মধ্যে কেতলির নিচে বিশাল কালো একটা ডিম। হ্যাগ্রিডকে বিচলিত মনে হলো।
কোথায় পেলেন এটা মি. হ্যাগ্রিড? রন আগুনের আরো কাছে গিয়ে দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে।
জিতেছি–হ্যাগ্রিড বললেন। গত রাতে পাশের গ্রামে গিয়ে একজনের সাথে তাস খেলায় বাজি ধরে এটা জিতেছি। লোকটা যেন এটা দিতে পেরে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। হ্যাগ্রিডের চোখে মুখে গর্বের হাসি দেখা গেল।
কিন্তু বাচ্চা ফুটে বেরুলে আপনি কি করবেন। হারমিওন জিজ্ঞেস করলো।
এ বিষয়ে কিছুটা পড়াশোনা করছি। হ্যাগ্রিড বালিশের নিচ থেকে একটা বড় বই বের করলেন। বইটার নাম আনন্দ ও লাভের জন্য ড্রাগন প্রজনন। এর মধ্যেই লেখা আছে, কীভাবে আগুনে দিয়ে ডিম ফুটাতে হবে, কীভাবে ড্রাগনের বাচ্চাকে আধঘণ্টা পর পর মুরগির রক্ত মিশিয়ে পাতিল ভর্তি ব্রান্ডি খাওয়াতে হবে। এবং দেখো, আরও লেখা আছে, কীভাবে বিভিন্ন ধরনের ডিম চিনতে হবে। আমার এটা নরওয়েজিয়ান রিজব্যাক। খুবই দুর্লভ এগুলো।
হ্যাগ্রিড খুশি হলেও ওদের দুশ্চিন্তা গেল না। তারা ভেবে পেল না হ্যাগ্রিডের এই কাঠের ঘরে কেউ যদি এই অবৈধ ড্রাগনের বাচ্চা দেখে ফেলে তাহলে হাগ্রিডের কী হবে।
রাতের পর রাত ওরা পড়ায় ব্যস্ত রইলো। হারমিওন হ্যারি ও রনকে রিভাইজ দেয়ার সময়সূচি বানিয়ে দিল। পড়ার চাপে তারা পাগলপ্রায়।
এমনি একদিন নাস্তার সময় হেডউইগ এল হ্যাগ্রিডের ছোট চিরকুট নিয়ে। হ্যাগ্রিড মাত্র দুটো শব্দ লিখেছেন : বাচ্চা ফুটছে।
পড়া রেখে রন হাগ্রিডের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। হারমিওনের যাওয়ার কোন আগ্রহ নেই।
হারমিওন, সারাজীবনে আমরা কটা দিন ড্রাগনের বাচ্চা ফোঁটা দেখার সুযোগ পাব বলতো? রনের জিজ্ঞাসা।
আমাদের পড়াশোনা আছে। আমরা বিপদে পড়ব, তাছাড়া কেউ যদি হাগ্রিডের ব্যাপারটা জেনে ফেলে, তখন কিছুই করার থাকবে না। হেমিওন জবাব দিল।
চুপ? হ্যারি ফিসফিসিয়ে বললো।
কয়েক গজ দূরে ম্যালফয়কে দেখা গেল সন্তর্পণে ওদের কথা শুনছে। কতটা শুনে ফেলো কে জানে। ম্যালফয়ের চাহনিটা মোটেই ভাল ঠেকল না।
আপত্তি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত হারমিওন ওদের সঙ্গী হতে রাজি হলো এবং কোনাকুনি মাঠের ওপর দিয়ে হ্যাগ্রিডের বাসায় হাজির হলো ওরা। আনন্দে–উত্তেজিত হ্যাগ্রিড ওদের অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রায় ফুটে বেরুল বলে। তিনি ওদেরকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিলেন।
ডিমটা টেবিলের ওপর রাখা। ডিমের চারপাশে ফাটল দেখা যাচ্ছে। ভিতরে কি যেন নড়ছে। একটা মজার শব্দ নির্গত হচ্ছে।
সবাই আগ্রহভরে টেবিলের চারপাশে জড় হলো। বন্ধ নিঃশ্বাসে সবার দৃষ্টি একমাত্র ডিমের দিকে।
অকস্মাৎ সশব্দে ডিম ফেঁটে গেল। বাচ্চা ড্রাগন টেবিলের ওপর পড়ল। দেখতে যে খুব সুন্দর তা নয়। হ্যারির মনে হলো যেন একটা কালো ছাতা। ভানা দুটা জেট প্লেনের ডানার সাথে তুলনা করা যায়। উন্নত নাশা, তীক্ষ্ণ শিং যুগল, উজ্জ্বল কমলা রঙের চোখ। মুখ দিয়ে দু দুবার আগুনের রশ্মি বেরিয়ে গেল।
কি সুন্দর তাই না?–হ্যাগ্রিড বিড়বিড় করে বললেন–ওকে আশীর্বাদ কর, দেখ, ও কিন্তু ওর মাকে চেনে।
মি. হ্যাগ্রিড, একটা নরওয়েজিয়ান রিজব্যাক কতদিনে বড় ইয়?–হারমিওন জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাগ্রিড জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তার চেহারা মলিন হয়ে গেল। দ্রুত জানালায় গিয়ে উঁকি দিলেন।
একটা বাচ্চামত কেউ পর্দা সরিয়ে আমাদের দেখে গেল। স্কুলের দিকে দৌড় দিয়েছে। হ্যাগ্রিড বললেন। হ্যারি দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখে নিঃসন্দেহ হলো। আর কেউ নয়–ম্যালফয় ড্রাগন দেখে ফেলেছে।
পরের সপ্তাহে ম্যালফয়ের হাসি হাসি মুখ দেখে ওরা তিনজন বেশ উদ্বিগ্নতার সাথে কাটালো।
হারমিওন, রন ও হ্যারি তাদের অবসর সময় হ্যাগ্রিডের অন্ধকার কুটিরেই কাটালো।
এটাকে আটকে রাখবেন না, হ্যারি বলল, এটাকে মুক্ত করে দিন।
একে ছাড়ব না, এ অত্যন্ত ছোট। হ্যাগ্রিড বললেন। আমি এটাকে নর্বার্ট বলে ডাকবো।
কিন্তু প্রধান চিন্তা হলো, হ্যাগ্রিড তো সারাজীবন এটাকে রাখতে পারবেন না। ম্যালফয়ের মাধ্যমে এ কথা প্রচার হবেই।