হঠাৎ একটা পেঁচা উড়ে গেল। হ্যারি একটু অসতর্ক হলেই গাছ থেকে নিচে পড়ে যেত। হ্যারি নিজেকে সামলে নিল।
ঠিক আছে। স্নেইপ বললেন–আমরা পরে আবার কথা বলব। তখন তুমি আরো ভেবে দেখতে পারবে। তোমার আনুগত্য কোনদিকে–সেটাও ঠিক করতে পারবে।
হ্যারি দেখল অধ্যাপক কুইরেল ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেন।
১৪. নরওয়ের নর্বার্ট
কুইরেলকে যতটা মনে হয়েছিল আসলে তিনি তারও বেশি সাহসী। পরের সপ্তাহগুলোতে তিনি আরো বিষণ্ণ, আরো শীর্ণ হয়ে পড়লেও ভেঙে পড়েননি। যতবারই তারা চারতলার দরোজায় কান পেতেছে ততবারই তারা ফ্লাফির গর্জন শুনতে পেয়েছে। স্নেইপের মাথা এখন গরম। তার মানে পরশমণি এখনও নিরাপদ।
কুইরেলের সাথে হ্যারির দেখা হলেই তিনি উৎসাহব্যঞ্জক হাসি হাসেন। এতে হ্যারি অনুপ্রাণিত হয়।
পরশমণি ছাড়াও হারমিওনের মনযোগ দেয়ার অনেক বিষয় ছিল। সে তার লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করল এবং হ্যারি ও রনকে এ ব্যাপারে তাগিদ দিতে থাকলো।
পরীক্ষার তো অনেক সময় বাকি। হ্যারি আর রন বলল।
মাত্র দশ সপ্তাই। হারমিওন জবাব দিল। এটা অনেক কম সময়। আর নিকোলাস ফ্লামেলের কাছে এটা তো একটি মুহূর্ত মাত্র।
কিন্তু আমাদের বয়স তো ছশ বছর হয়নি। রন হারমিওনকে মনে করিয়ে দিল। তা যাই হোক–তুমি কী রিভাইজ দিচ্ছ? তোমার তো সবই জানা।
আমি কী রিভাইজ দিচ্ছি? তোমাদের কি মাথা খারাপ? আমার পড়া এখনো বাকি। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার জন্যে পরীক্ষায় পাস করতে হবে। আমার একমাস আগেই পড়া শুরু করা উচিত ছিল। একাধারে হারমিওনের উপদেশ ও ক্ষেদোক্তি।
শিক্ষকরাও যেন মনে হলো হারমিওনের সাথে একমত হয়ে অতিরিক্ত পড়া চাপাতে লাগলেন। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হ্যারি ও রন তাদের অবসর সময়টাও লাইব্রেরিতে কাটাতে লাগলো।
আমার কিছুই মনে থাকছে না। এই বলে বিরক্ত হয়ে একদিন বিকেলে রন বইপত্র ছুঁড়ে ফেলে লাইব্রেরির জানালায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার মনে হলো অনেকদিন পর সে একটা সুন্দর দিন প্রত্যক্ষ করলো। মুক্ত অপরাজিতা নীল আকাশ এবং বাতাসে গ্রীষ্মের হাতছানি।
হ্যারি এক হাজার জাদুকরী গাছপালা ও ছত্রাক নামক বইটি নেড়ে চেড়ে দেখছে, তখনি তার কানে গেল রন বলছে হ্যাগ্রিড, আপনি লাইব্রেরিতে কী করছেন?
হ্যাগ্রিডকে দেখে মনে হলো তিনি তার পেছনে কিছু লুকোচ্ছেন। গন্ধমুষিকের চামড়ার ওভার কোটটাতে তাকে বেখাপ্লাই দেখাচ্ছে।
এমনি দেখছি, হ্যাগ্রিডকে বিব্রত মনে হল। তা তোমরা এখানে কী করছ, তোমরা কি এখনও নিকোলাস ফ্লামেলকে খুঁজছো?
না, আমরা বহু আগেই তাকে পেয়েছি। রন নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিল। এবং আমরা এটাও জানি কুকুরগুলো কি পাহারা দেয়। সেটা হচ্ছে পরশ…।
শ্শ্! হ্যাগ্রিড চারদিক সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে দেখে নিলেন, কেউ শুনছে কিনা। এটা নিয়ে এত চিৎকার করো না।
আমরা আসলে আপনাকে দুএকটা বিষয় জিজ্ঞেস করতে চাই। হ্যারি বললো, ফ্লাফি ছাড়াও ওই পাথরটা পাহারার আর কি ব্যবস্থা আছে, সে সম্পর্কে যদি বলেন।
শ্শ্…? হ্যাগ্রিড ভীত দৃষ্টিতে ফিস ফিস করে বললেন, ছাত্রদের এ বিষয়ে জানানো নিষেধ, এখানে এটা নিয়ে আলোচনা করনা, সাবধান! পরে আমার সাথে দেখা করো। হ্যাগ্রিড বিদায় নিলেন।
তিনি পেছনে কি লুকোচ্ছিলেন? এটা পরশমনির সাথে সম্পর্কিত কিছু নয়তো? চিন্তিত মনে হারমিওন বললো।
হ্যাগ্রিড যেখানে ছিলেন, এই জায়গাটা আমি একটু দেখে আসি। বলে রন এগিয়ে গেল। মিনিট খানেক পরেই ফিরে এল, হাতে একগাদা বই। সবাই বিস্মিত হলো এটা দেখে যে, বইগুলোর সবই ড্রাগন ও এদের লালন–পালন সম্পর্কিত।
হ্যাগ্রিড সব সময়ই একটা ড্রাগন চেয়েছেন, প্রথম সাক্ষাতের দিনই তিনি আমাকে তার ইচ্ছার কথা বলেছেন–হ্যারি বললো।
কিন্তু ১৭০৯ সালের ওয়ারলকস কনভেনশন অনুযায়ী ড্রাগন লালনপালন করাতো বেআইনি–রন বললো।
***
তাহলে হ্যান্ডি জেনেশুনে ড্রাগন চর্চা করছেন কেন? হারমিওনের প্রশ্ন।
ঘণ্টাখানেক পরে ওরা তিনজন যখন হ্যাগ্রিডের বাসায় পৌঁছুলো, অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ঘরের সব জানালায় পর্দা টানা। এই গরম কালেও আলাদাভাবে আগুন জ্বেলে ঘর গরম করা হচ্ছে। হ্যাগ্রিড ওদেরকে চা এবং বেজীর স্যান্ডউইচ খেতে দিতে চাইলেন, কিন্তু তারা তা খেল না।
হ্যাঁ, কি যেন তোমরা জিজ্ঞেস করবে বলছিলে?
কোন রকম ভুমিকা না করে হ্যারি সরাসরি প্রশ্ন করলো–ফ্লাফি ছাড়া আর কে বা কারা পরশমনি পাহারা দেয়–সে সম্পর্কে যদি কিছু বলেন তো আমরা খুশি হব।
হ্যাগ্রিড ভ্রূ কুঁচকে হ্যারির দিকে তাকালেন। আমি এটা বলতে পারব না। প্রথমতঃ আমি নিজেই জানি না। দ্বিতীয়তঃ জানলেও আমি বলতাম না। কারণ, পরশমনিটা এখানে একটা ভাল কাজে রাখা আছে। তাছাড়া তোমরা ফ্লাফি সম্পর্কেই বা কিভাবে জানলে?
হ্যাগ্রিড, আপনি শান্ত হোন। হারমিওন মিষ্টস্বরে হ্যাগ্রিডকে অনেকটা খুশি করার জন্য বললো, আপনি জানেন, এখানে যা কিছু ঘটছে, সবই আপনি জানেন, আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত। আপনি না বলতে চাইলে সেটা আলাদা কথা। হ্যাগ্রিডের দাঁড়ি নড়ে উঠছে, মনে হলো তিনি মুচকি হাসছেন। হারমিওন বলে চললো–আমরা জানি পাহারার আসল কাজটি কে করেন। আমরা এও জানি ডাম্বলঙের সব কাজে কার ওপর বেশি নির্ভরশীল, আপনি ছাড়া আর কে?