প্রথম পেনাল্টি ব্যর্থ হলে কিছুক্ষণ পর স্নেইপ বিনা কারণে হাফলপাফের অনুকূলে আরেকটি পেনাল্টি দিলেন।
দর্শকরা হইচই করে উঠলো। সমস্ত দর্শকের সহানুভূতি এবার হ্যারির প্রতি।
ম্যালফয় বলে চলল, এদের জন্য সকলের দুঃখ হয়। এই যে পটার, ওর মা–বাবা নাই, আর উইসলি গরিব, কোন টাকা–পয়সা নেই ওর। আর এই যে তুমি লংবটম, তোমার একটা ভাল টিমে থাকা উচিত ছিল, কারণ তোমার মত যাদের মাথায় কিছু নেই তদেরই তো টিমে থাকার কথা।
নেভিলের চেহারা রাগে লাল হয়ে উঠল। সে পেছন ফিরে ম্যালফয়ের মুখোমুখি হলো।
আমি তোমার মত বারোটার সমান, ম্যালফয় নেভিল বলল।
ম্যালফয়, ক্রেব ও গয়েল উচ্চস্বরে হেসে উঠল। রন খেলা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়েই নেভিলকে বলল–ঠিক বলেছ নেভিল, বলে যাও।
লংবটম, যদি মস্তিষ্ক সোনা হতো তাহলে তুমি উইসলির তুলনায় গরীব হতে। আজ এইটুকুই বললাম, যাও।
হ্যারির চিন্তায় রন এমনিতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। সে ম্যালফয়ের দিকে মুখ না ফিরিয়ে বলল–ম্যালফয়, আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। এরপর যদি তুমি আর একটি বাজে কথা বল তাহলে তোমাকে দেখে নেব।
রন হারমিওন হঠাৎ চিৎকার করে উঠল–হ্যারি, হ্যারি,..
কী হয়েছে?… কোথায়?
হ্যারি একটা চমৎকার ডাইভ দিয়ে বুলেটের মত ছুটে গেল। দর্শকরা হর্ষধ্বনি ও হাততালি দিয়ে বাহবা দিল হ্যারিকে। হারমিওন হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে তার মুখে ফিঙ্গার ক্রস করল। আর হ্যারি বুলেটের মত মাটির দিকে ছুটছে।
উইসলি তোমাদের ভাগ্য ভাল। হ্যারি নিশ্চয়ই মাঠের ভেতর কিছু পয়সার সন্ধান পেয়েছে। ম্যালফয় হ্যারির মাটির দিকে ছুটে যাওয়া দেখে তামাশা করে বলল।
ম্যালফয়কে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়েই রন তাকে মাটিতে ফেলে দিল। নেভিল কাছেই ছিল। কিছুক্ষণ দ্বিধা করে সে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেল।
শাবাশ হ্যারি খেলে যাও। তার আসন থেকে উঠে হারমিওন চিৎকার করল। হারমিওন লক্ষ্য করল যে, হ্যারি স্নেইপের দিকে ছুটে যাচ্ছে। হারমিওন ভীষণভাবে উত্তেজিত। হারমিওন এতক্ষণ লক্ষ্যই করেনি যে, তার পায়ের কাছে রন আর ম্যালফয় মারামারি করছে।
স্নেইপ তার ঝাড়ু সোজা করতে করতে অবাক হয়ে দেখলেন যে আকাশ থেকে একটি ঝাড়ু তার নাকের এক ইঞ্চি দূর দিয়ে তীরবেগে ছুটে গেল। আরেকটু হলেই…
ডাইভ থামিয়ে হঠাৎ হ্যারির চিৎকার। সে স্নিচটাকে ধরে ফেলেছে। এটা একটা রেকর্ড। সারা গ্যালারিতে হইচই। এর আগে কেউ কোন দিন এত তাড়াতাড়ি মিচ ধরে ফেলতে পারেনি।
হারমিওন চিৎকার করে বলল–রন, রন। কোথায় তুমি। খেলা শেষ। হ্যারি জিতেছে।
সবাই শুনল হেরমিওনের উল্লাস। আমরা জিতেছি, আমরা জিতেছি। গ্রিফিল্ডর এখন এগিয়ে।
হারমিওন আনন্দে নাচছে। সামনের সারির পার্বতী পাতিলকে জড়িয়ে ধরল।
মাটি থেকে মাত্র এক ফুট ওপরে থাকতেই হ্যারি ঝাড়ু থেকে লাফ দিল। এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, সে জিতেছে। একটু আগেই খেলা শেষ হয়েছে।
শাবাশ। ভালো খেলেছ। তুমি নিশ্চয়ই এখন আর আয়না নিয়ে চিন্তা করছ না। ডাম্বলডোর তাকে বললেন খুব ধীরে যাতে অন্য কেউ না শোনে।
স্নেইপ খুব তিক্ত বদনে মাটিতে থুথু ফেলল।
হ্যারি প্রসাধন কক্ষ থেকে একটু পরেই বের হয়ে এলো। এরপর নিম্বাস ২০০০ নিয়ে সে ঝাড়ুশালার দিকে রওনা হল। আজ তার মত আনন্দিত পৃথিবীতে আর কেউই নেই। সত্যিই সে গর্বিত হওয়ার মত কাজ করেছে। তার সুনাম এখন চতুর্দিকে। ক্লান্তি কাটাবার জন্যে হ্যারি কিছুক্ষণ ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ালো।
সে ঝাড়ু রাখার শেডে পৌঁছে শেডের কাঠের দরোজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। সে হোগার্টসের দিকে তাকাল। অস্তাচলগামী সূর্যের কিরণে জানালার কাঁচ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। গ্রিফিল্ডরে এখন অগ্রগামী। আর এই কৃতিত্বের দাবিদার হ্যারি নিজে। স্নেইপকে বুঝিয়ে দেয়া গেছে।
হ্যারি স্নেইপের কথা ভাবতেই, দেখল.
একটি সারা শরীর আবৃত মূর্তি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল। যেন চুপি চুপি কোথাও যাচ্ছে যাতে তাকে কেউ দেখতে না পায়। যাচ্ছে নিষিদ্ধ বনের দিকে। হ্যারির মাথায় এবার আর জয়ের আনন্দ নেই। জয়ের পরিবর্তে এখন উৎকণ্ঠা। এ যে স্নেইপ। সবাই যখন ডিনারে যাচ্ছে তখন তিনি বনে যাচ্ছেন কেন?
হ্যারি আবার নিম্বাস ২০০০ এর ওপর চড়ে বসল। কাছে গিয়ে দেখল স্নেইপ বনে ঢুকে গেছেন।
বিরাট বিরাট গাছ হ্যারিকে বাধা দিচ্ছে। সে স্নেইপকে দেখতে পেয়ে নীরবে একটি বা গাছে আশ্রয় নিল। সেখান থেকে স্নেইপ কি করছেন দেখতে থাকলে।
গাছের ঠিক নিচেই স্নেইপ দাঁড়িয়ে আছেন। তার সাথে অধ্যাপক কুইরেল। তবু তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। হ্যারি শুনতে পাচ্ছে কুইরেল তোতলাতে তোতলাতে বলছেন–আ… আ… আমি জানি… না তুমি কেন আমাকে এখানে কেন। …. সেভেরাস…. স্নেইপ শীতল কণ্ঠে বললেন–আমি বিষয়টি গোপন রাখতে চাই। আমার ধারণা ছাত্ররা এখনও পরশমণি সম্পর্কে কিছুই জানে না।
হ্যারি আরেকটু সামনে ঝুঁকল। কুইরেল কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। স্নেইপ তাকে থামিয়ে দিলেন। স্নেইপ বললেন–হ্যাগ্রিডের কুকুরটাকে কীভাবে এড়ানো যায়, ভেবে দেখেছ কি?
কুইরেল বললেন–আ… আ… আমি কিছুই জানি না। তুমি কী বলতে…. চাইছ।
তুমি ভালোভাবেই জানো আমি কী বলতে চাইছি।