হারমিওন বলল-এ বইটা আমি কয়েক সপ্তাহ আগে লাইব্রেরি থেকে এনেছিলাম, কিন্তু পড়ার সময় পাইনি। তারপর হারমিওন রহস্যময় সুরে বলল–নিকোলাস ফ্লামেল কে জানো? ফ্লামেল হচ্ছে আমাদের জানা লোকদের মধ্যে পরশমণির একমাত্র আবিষ্কারক।
পরশমণি?
হ্যাঁ, পরশমণি। ফিলজোফার্স স্টোন।
সেটা কি?
আগে বইয়ের এ জায়গাটা পড়।
হ্যারি আর রন পড়তে লাগল। লেখা আছে–
রসায়নশাস্ত্রের প্রাচীন গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
তা হলো ফিলোসফারস স্টোন-এ রয়েছে
কিংবদন্তী মর্মবস্তু, বিস্ময়কর ক্ষমতা
যেকোন ধাতু সোনা হয়ে যাবে ছোঁয়ালে
সে পরশ পাথর; এ পাথর জীবনের অমরত্ব সুধা
যে পান করবে সে হবে চিরঞ্জীব।
ফিলোসফারস স্টোন নিয়ে বহু গল্প শুনেছি
শতকের পর শতক; কিন্তু এখন একটি পাথরই
আছে নিকোলাস ফ্লামেলের কাছে
যিনি নিজেও একজন রসায়নবিদ ও অপেরা প্রেমিক
যিনি গত বছর তার ৬৬৫তম জন্মদিন পালন
করেছেন; যিনি ডিভোন-এ সস্ত্রীক যাপন করেন
ধীরস্থির জীবন বর্ষব্যাপী (ছয়শত আটান্ন)।
রন ও হ্যারির পড়া শেষ হলে হারমিওন বলল–আমার ধারণা ওই কুকুরটাই ফ্লামেলের পরশমণি পাহারা দিচ্ছে। এটা ডাম্বলডোরেরও দায়িত্ব বটে। তারা দুজনে বন্ধু। তাই তিনি চান এটা গ্রিংগট থেকে বাইরে থাকুক।
হ্যারি বলল–যে পাথর সব ধাতুকে সোনা করে, মানুষকে অমর করে, এমন একটি পাথরের পেছনে স্নেইপ তো ছুটবেনই। এতে আশ্চর্যের কী আছে। যেকোন লোকই এই পাথরের পেছনে ছুটবে।
রন বলল–বইটাতে উল্লেখ আছে নিকোলাস ফ্লামেল সম্প্রতি তার ৬৬৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন।
পরদিন কালো জাদুর ক্লাসে ক্লাস লেকচার নোট করার সময়ও হ্যারি আর রন ভাবছিল যদি একটা পরশমণি পেয়ে যায় তাহলে তারা কী করবে। রম বলল–আমি নিজে একটা কিডিচ দল কিনে ফেলব। ব্যারির মনে পড়ল শিগগিরই কিডিচ প্রতিযোগিতা হবে যেখানে স্নেইপ রেফারি থাকবেন।
আমি খেলব। রন আর হারমিওনকে হ্যারি বলল। আমি যদি না খেলি তাহলে দিারিন হাউজের খেলোয়াড়গণ মনে করবে আমি খেলতে ভয় পাচ্ছি। আমরা যদি জিতি তাহলে তাদের মুখের হাসি শুকিয়ে যাবে।
যতক্ষণ না আমরা তোমাকে মাঠ থেকে তুলে আনছি। হারমিওন ফোড়ন কাটলো।
প্রতিযোগিতার সময় যতই ঘনিয়ে এল হ্যারি ততই অস্থির হয়ে উঠল। দলের মধ্যেও অস্থিরতা বাড়ছে। স্লিদারিনদের বিরুদ্ধে হাউজ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা গৌরবের বিষয়। গত সাত বছরে কেউ ওদের থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ নিতে পারেনি। কিন্তু প্রশ্নটা হলো–পক্ষপাতদুষ্ট রেফারির কাছে কি নিরপেক্ষ খেলা পরিচালনা আশা করা যায়?
এসব হ্যারির কল্পনা না সত্যি, তা সে জানে না। শুধু জানে সে যেখানেই যায় সেখানেই সে স্নেইপের কথা ভাবতে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় স্নেইপ তার পিছু লেগেছেন। স্নেইপের ওষুধ তৈরির ক্লাসটা ছিল যেন নরক যন্ত্রণা। শেইপ কি জানেন যে, তারা পরশমুণির সন্ধান পেয়েছে?
***
পরের দিন বিকালে ওরা হ্যারিকে গুডলাক জানিয়ে বিদায় নিল, কিন্তু হ্যারি জানে হারমিওন ও রন ফিরে এসে হ্যারিকে জীবিত দেখতে পাবে কিনা সে ব্যাপারে ওদের সন্দেহ আছে। তবে হ্যারিকে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। তাই সে কিডিচ খেলার পোশাক পরে নিল এবং নিম্বাস ২০০০ ঝাড়ু হাতে তুলে নিল।
রন ও হারমিওন নেভিলের কাছাকাছি একটা জায়গা করে নিল। নেভিল কিছুতেই বুঝতে পারছিল না ওরা এত গম্ভীর কেন। ওরা দুজন জাদুদণ্ড নিয়ে কেনই বা মাঠে এল তার বোধগম্য হচ্ছিল না। হ্যারিও জানত না যে হারমিওন ও রন স্নেইপের ওপর পা–অচল হওয়ার অভিশাপ প্রয়োগ করবে যদি তিনি রেফারি হিসেবে পক্ষপাতিত্ব দেখান।
ভুলে যেও না-এটা লোকোমোটর মর্টিস। হারমিওন নিচুস্বরে হ্যাবিকে বলল।
রন তার আস্তিনে জাদুদণ্ডটি রেখে বলল–আমি তা জানি। প্রসাধন কক্ষে উড হ্যারিকে পৃথকভাবে নিয়ে বলল–হ্যারি, তোমার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। তবে আমাদের যদি জিততে হয় তাহলে এটাই সুযোগ। অধ্যাপক স্নেইপ পক্ষপাতিত্ব করার আগেই খেলা শেষ করতে হবে। ফ্রেন্ড উইসুলি এসে বলল–স্কুলের সবাই খেলা দেখতে এসেছে। এমন কী অধ্যাপক ডাম্বলডোরও এসেছেন।
ডাম্বলডোর! হ্যারি বিস্মিত কণ্ঠে বলল। একটু পরে নিজে গিয়েই দেখে এল যে ফ্রেড মিথ্যে বলেনি।
হ্যারি অনেকটা স্বস্তি বোধ করল। কারণ ডাম্বলডোর খেলা দেখলে স্নেইপ কোন পক্ষপাতিত্ত্ব দেখাতে পারবেন না এবং হ্যারিকে কোন ক্ষতি করতে পারবেন না।
খেলোয়াড়রা যখন মাঠে নামছে তখন স্নেইপকে খুব ক্ষুব্ধ দেখাল। রন বুঝতে পারল ডাম্বলডোরের উপস্থিতিই তার ক্ষোভের কারণ।
স্নেইপ যে এত নিচে নামতে পারেন তা আমি কখনোই ভাবিনি। রন হারমিওনকে বলল।
কে যেন রনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিল। সে পেছন ফিরে দেখে ম্যালফয়।
দুঃখিত, উইসলি। আমি খেয়াল করিনি। ম্যালফয় বলল।
এবার দেখা যাবে হ্যারি কতক্ষণ ঝাড়ুর ওপর থাকতে পারে। কেউ কি আমার সাথে বাজি ধরবে? উইসলি তুমি ধরবে? ম্যালফয় প্রস্তাব দিল।
রন কোন জবাব দিল না। খেলা শুরু হল।
স্নেইপ জর্জের একটা ফাউলকে কেন্দ্র করে হাফলপাফের অনুকূলে পেনাল্টি দিলেন। হ্যারি সারা মাঠ চষে স্নিচ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কয়েক মিনিট পর মালয় উচ্চকণ্ঠে বলল–দেখেছ গ্রিফিল্ডর হাউজ কেমন খেলোয়াড় বেছে নিয়েছে।