সরীসৃপ ভবন থেকে পায়ার্সের বের হয়ে না আসা পর্যন্ত আঙ্কল ভের্নন অপেক্ষা করলেন।
সাপটা কারো কোন ক্ষতি করেনি। হ্যারির পায়ের পাশ দিয়ে সামনের দিকে চলে গেছে। কোন অঘটন ঘটেনি। তারা সবাই ভার্নন আঙ্কলের গাড়িতে উঠে পড়ল।
ডাডলি বলল–আরেকটু হলে সাপটা আমার পায়ে কামড় বসিয়ে দিত।
পায়ার্স বলল–আমাকে তো পাকে পাকে সাপটা জড়িয়ে ধরেছিল। আর সাপটা হ্যারির সাথে কথা বলেছিল। তাইনা হ্যারি?
আঙ্কল ভার্নন বারবার হ্যারির দিকে তাকালেন। তিনি হ্যারির ওপর খুবই অসন্তুষ্ট। রাগে আঙ্কল ভার্ননের মুখ থেকে কথা বেরুচ্ছিল না। তারপরও আদেশ দিলেন, যাও কাবার্ডে যাও… তোমার জন্য কোন খাবার নেই।
বাড়িতে ফিরে আঙ্কল ভার্নন একটি চেয়ারে এলিয়ে পড়লেন। আন্ট পেতুনিয়া ব্রান্ডি আনতে ছুটলেন।
হ্যারির ঠাঁই হলো অন্ধকার কাবার্ডে। সে ভাবছিল, তার যদি একটা ঘড়ি থাকত। ঘড়ি না থাকায় সে সময় জানতে পারল না। ডার্সলি পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা এটা তো সে বুঝতে পারছিল না। তারা না ঘুমোলে সে রান্নাঘরে যাবার কথা ভাবতেও পারে না।
প্রায় দশ বছর হ্যারি ডার্সলি পরিবারের সাথে কাটিয়ে দিয়েছে। দশটা বছর খুব বিরক্তিকর ও কষ্টকর সময়। ছোটবেলার কথা, তার যতদূর মনে পড়ে, তার বাবা–মা যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তখনকার কথা। যে গাড়িতে ওর বাবা–মা দুর্ঘটনায় মারা যান, সেখানে সেও ছিল কিন্তু সে সময়ের কোন কথাই তার স্মরণ নেই।
কাবার্ডে যখন সে দীর্ঘক্ষণ তার অতীত স্মরণ করার চেষ্টা করছে, তখন এক আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখল। এক তীব্র সবুজ আলোক রশ্মি দেখে সে কপালের কাটা দাগে ব্যথা অনুভব করে। কপালের ব্যথা থেকে সে দুর্ঘটনার কথা মনে করতে পারে। কিন্তু সবুজ আলো? ওটা কোথা থেকে আসে? বাবা–মার কথা একেবারেই তার স্মরণে নেই। তার বাবা–মা সম্পর্কে কোন কথা হ্যারির আঙ্কল বা আন্ট তার সাথে বলতেন না। এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করাও হ্যারির জন্য বারণ ছিল। এই বাসায় তার বাবা–মার কোন ছবিও নেই।
হ্যারির বয়স যখন আরো কম ছিল তখন সে প্রায়ই স্বপ্ন দেখত, একজন অচেনা আত্নীয় এসে তাকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তার একমাত্র পরিচিত বলতে এই ডার্সলি পরিবার।
একবার আন্টের সাথে দোকানে কেনাকাটার সময় একজন লোক এসে হ্যারিকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে তাকে চেনে কিনা। এ প্রশ্ন শুনে কোন কিছু না কিনেই আন্ট পেতুনিয়া দোকান থেকে বাইরে চলে এলেন।
একবার এক অচেনা মহিলা চলন্ত বাস থেকে হ্যারিকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছিলো। মহিলার গায়ে সবুজ পোশাক। চেহারাটা একটু বুনো ধরনের। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো–হ্যারি যখনই তাদের সাথে কথা বলতে চাইতো তারা অদৃশ্য হয়ে যেত। স্কুলে হ্যারির কোন বন্ধু ছিল না। সবাই জানতো এই ঢোলা জামা ও ভাঙা চমশা–পরা হ্যারি পটারকে ডাডলি এবং তার দুষ্টু বন্ধুরা কেউই পছন্দ করে না।
কেউ হ্যারির সাথে মিশতো না, কারণ ডাডলিকে চটাবার মতো সাহস কারোরই ছিল না।
০৩. যে চিঠি কেউই লেখেনি
ব্রাজিলিয়ান বোয়া সাপটা বের হয়ে যাওয়ার কারণে হ্যারিকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।
শাস্তিভোগের পর যখন সে কাবার্ড থেকে মুক্তি পেল তখন গরমের ছুটি চলছে। এরই মধ্যে ডাডলি তার নতুন সিনেমা ক্যামেরাটা ভেঙে ফেলেছে। নষ্ট করেছে রিমোট কন্ট্রোল এরোপ্লেন। তাছাড়া মিসেস ফিগ যখন ক্রাচে ভর করে প্রিভেট ড্রাইভের রাস্তা পার হচ্ছিলেন তখন ডাডলি তার রেইসিং সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়।
স্কুল ছুটি থাকায় হ্যারির বেশ ভালো লাগছে। তবে ডাডলির সাঙ্গপাঙ্গদের অত্যাচার থেকে কোন মুক্তি নেই। তারা প্রতিদিন এই বাসায় বেড়াতে আসে। পায়ার্স, ডেনিস, ম্যালকম এবং গর্ডন এরা সবাই নির্বোধ। ডাডলি ছিল এই নির্বোধদের দলপতি। তাদের প্রধান খেলা ছিল হ্যারির ওপর নির্যাতন চালানো।
এই কারণে হ্যারি ইচ্ছে করেই বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে কাটাতো। এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াত। শিগগিরই ছুটি শেষ হয়ে যাবে। সেপ্টেম্বর মাসে হ্যারি সেকেন্ডারি স্কুলে যাবে। তখনই সে প্রথমবারের মতো ডাডলির হাত থেকে ছাড়া পাবে। ডাডলি ভর্তি হবে আঙ্কল ভার্ননের পুরনো স্কুলে। পায়ার্সও সেখানে ভর্তি হবে। হ্যারি ভর্তি হবে স্টোনওয়াল হাই-এ।
ডাডলি হ্যারিকে বললো–স্টোনওয়ালে কি হয় জানিস? প্রথমদিনই তোদের মাথা টয়লেটে ঢুকিয়ে রাখবে। একবার ওপর তলায় গিয়ে প্র্যাকটিস করে দেখ কেমন লাগে?
না, ধন্যবাদ। হ্যারি জবাব দিল। এই খারাপ টয়লেটে মাথা ঢোকাবার মতো নোংরা আর কিছু হতে পারে না। এই বলে হ্যারি দৌড়ে পালিয়ে গেল যাতে ডাডলি তাকে দিয়ে এ ধরনের প্র্যাকটিস না করাতে পারে।
জুলাই মাস। স্কুলের ইউনিফর্ম কেনার জন্য আন্ট পেতুনিয়া ডাডলিকে নিয়ে লন্ডন গেলেন। হ্যারিকে রেখে গেলেন মিসেস ফিগের কাছে। তার অবস্থা তখন এত খারাপ ছিল না। জানা গেল তিনি তার পোষা বিড়ালের একটাকে ডিঙোতে গিয়ে পড়ে গিয়ে এক পা ভেঙে ফেলেছেন। এর পর থেকে বিড়ালের প্রতি তার ভালোবাসার ঘাটতি পড়েছে। তিনি হ্যারিকে টিভি দেখতে দিলেন এবং বছরের পর বছর রেখে দেয়া কিছু বাসি চকোলেট কেকও খেতে দিলেন।