আরেকদিন আন্ট পেতুনিয়া ডাডলির একটা পুরনো ঢোলা জাম্পারের ভেতর হ্যারিকে ঢুকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু যতই তিনি হ্যারির মাথা ঢুকাতে চান ততই জাম্পারের মুখটা ছোট হয়ে আসে। আন্ট পেতুনিয়া ভাবলেন, হয়তো ধোয়ার পর ছোট হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত জাম্পারে হ্যারির মাথা ঢুকে এবং হ্যারি শাস্তি থেকে রেহাই পায়।
আরেকবার হ্যারি ভীষণ বিপদে পড়েছিল। তাকে একদিন স্কুল ভবনের ছাদে পাওয়া গেল। আসলে ছাদে সে স্বেচ্ছায় ওঠেনি। ডাডলির দুষ্টু বন্ধুরাই হ্যারিকে তাড়া করে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্ৰী ডার্সলি দম্পতিকে একটা চিঠি লিখে জানান যে, হ্যারি স্কুলের ছাদে উঠেছে। হ্যারি রান্নাঘরের বাইরে বড় শিম গাছের পেছনে লাফ দেয়ার চেষ্টা করেছিল। হ্যারির ধারণা বাতাস তাকে উড়িয়ে এত ওপরে তুলেছে।
কিন্তু আজ কোন গোলমাল হলো না। তার স্কুল, কাপ বোর্ড অথবা মিসেস ফিগ-এর বাঁধাকপির গন্ধভরা রুম থেকে ডাডলি ও পায়ার্স-এর সঙ্গে দিন কাটানো ভাল।
গাড়ি চালাতে চালাতে আঙ্কল ভার্নন আন্ট পেতুনিয়ার কাছে অভিযোগ করছিলেন। তিনি অভিযোগ করতে পছন্দ করেন। সচরাচর তার অভিযোগ হলো : কর্মরত লোকজন, হ্যারি, ব্যাংক, এরপর কাউন্সিল আবার হ্যারি বিষয়ক। আজ সকালে অভিযোগ হলো মোটরবাইক বিষয়ক।
…মোটরবাইক ক্ষেপাটে ও তরুণ মস্তানের মতো গর্জন করে চলে। একথা তিনি বললেন, যখন পাশ দিয়ে একটা মোটরবাইক অতিক্রম কর চলে গেল।
আমি মোটরবাইক নিয়ে একটি স্বপ্ন দেখছিলাম। হ্যারির হঠাৎ মনে পড়ল। সে বলল, মোটরবাইকটি উড়ছিল।
আরেকটু হলেই ভার্ননের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ত। তিনি ডানদিকে ঘুরে হ্যারির দিকে বিরক্তির সঙ্গে তাকালেন। তার মুখ তখন বৃহদাকার মূলার মত। বললেন মোটরবাইক উড়তে পারে না!
ডাডলি ও পায়ার্স হাসছিল।
আমি জানি এটি উড়তে পারে না। হ্যারি বলল, আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম।
এরপরই হ্যারি ভাবল, কিছু না বললেই ভাল হতো। সে কথা বলুক এটা ডার্সলি পরিবারের কেউ চায় না। তারা তাকে ঘৃণা করে। স্বপ্ন হোক বা কার্টুন হোক তাতে কিছু আসে যায় না। তারা মনে করবে এটা নিশ্চয়ই হ্যারির ভয়ঙ্কর কোন ব্যাপার।
দিনটি ছিল রোদ ঝলমলে শনিবার, ছুটির দিন। চিড়িয়াখানায় প্রচণ্ড ভিড়। ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক পরিবার এসেছে। ডার্সলি দম্পতি ডাডলি ও পায়ার্সের জন্য বড় সাইজের চকোলেট আইসক্রিম কিনে দিলেন। হ্যারিকে আড়াল করার আগেই যখন ভ্যানে বসা লাস্যময়ী মহিলা হ্যারির জন্য কি কেনা হবে জানতে চান, তখন একটি সস্তা লেমন আইস কিনে দেন। হ্যারি মনে মনে ভাবল, তাও মন্দ নয়।
দীর্ঘদিন পর হ্যারির একটা সুন্দর সকাল কাটল। ডাডলি এবং পিয়ার্স থেকে একটু ব্যবধান রেখেই হ্যারি হাঁটাহাঁটি করল। চিড়িয়াখানার রেস্তোরাঁয় তারা খাওয়া–দাওয়া সারল। দুপুরে খাবারের পর তারা সাপজাতীয় প্রাণীদের ঘর দেখতে গেল। ঘরটা ছিল খুব ঠান্ডা ও অন্ধকার। তবে দেয়ালের পাশের জানালাগুলোতে আলো জ্বালানো ছিল। ঘরে ছিল টিকটিকি, সাপ ও অনান্য সরীসৃপ। বিশাল আকারের বিষধর কোবরা, এমনকি মানুষকে পিষে মেরে ফেলতে পারে এমন মোটা একটি অজগর।
একটা বিশাল সাপ ঘুমিয়ে ছিল। ডাডলি ওর বাবাকে ফিস ফিস করে বলল–ওটাকে জাগাও।
আঙ্কল ভার্নন কাঁচে টোকা দিলেন, কিন্তু কোন কাজ হলো না। সাপটা একটুও নড়ল না। কিছুক্ষণ পর সাপটা মাথা তুলল। মনে হলো সাপটা হ্যারির দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যারি সাপটাকে লক্ষ্য করল এবং আর কেউ সাপটাকে লক্ষ্য করছে কিনা এটাও দেখে নিল। না আর কেউ লক্ষ্য করছে
সাপটা তার মাখা আঙ্কল ভার্নন ও ডাডলির দিকে বাড়াল। চোখ তুলে ওপরের দিকে তাকাল। তারপর হ্যারির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে চাইল আমি তো সব সময় এরকমই ব্যবহার পেয়ে থাকি।
আমি তা জানি। হ্যারি বিড় বিড় করে বলল।
সাপটি জোরে জোরে মাথা নাড়াচ্ছে।
তুমি কোথা থেকে এসেছো?–হ্যারি জানতে চাইল।
সাপ লেজ দিয়ে কাঁচের গায়ের লেখা দেখাল–বোয়া কনসট্রিকটর, ব্রাজিল।
জায়গাটা কি বেশ ভালো? হ্যারি প্রশ্ন করল। সাপটা লেজ দিয়ে আবার গ্লাসের ওপর লেখা দেখাল। হ্যারি পড়তে পারল। এই সাপটাকে এই চিড়িয়াখানায় বড় করা হয়েছে।
হ্যারি বলল–তাহলে তুমি কখনও ব্রাজিল দেখনি? সাপ মাথা নেড়ে জানাল। সঙ্গে সঙ্গে হ্যারি সজোরে চিৎকার করে উঠল ডাডলি। মিস্টার ডার্সলি। শিগগির এদিকে এসো। অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা দেখে যাও।
সবাই দৌড়ে এলো। ডাডলি সুযোগ পেয়ে হ্যারির পাঁজরে একটি ঘুষি বসিয়ে দিল।
হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে গেল। এরপর যা ঘটল তা আরো আশ্চর্যজনক। ডাডলি এবং পায়ার্স যখন কাঁচের দিকে তাকাল তখন তারা উডয়ে ওরে বাপরে বলে মাটিতে ছিটকে পড়ল।
হ্যারি বসে হাপাতে লাগল। একটু পর হ্যারি তাকিয়ে দেখে কাঁচের খাঁচাটা নেই। সাপটা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সরীসৃপ ভবনে হৈচৈ ও শোরগোল পড়ে গেল। যে যেদিকে পারে ছুটতে লাগল। সাপটা যখন হ্যারির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন হ্যারি সাপের কণ্ঠে শুনল–আমি ব্রাজিল থেকে এসেছি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
সরীসৃপ ভবনের কীপার স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
চিড়িয়াখানার পরিচালক আন্ট পেতুনিয়াকে এক কাপ মিষ্টি চা তৈরি করে খাওয়ালেন। তিনি বারবার তার কাছে মাফ চাইলেন।