ডাডলি মন্তব্য করল–ছত্রিশটা, তার মানে গতবারের জন্মদিনের তুলনায় দুটি কম।
আন্ট বললেন-এর সাথে মার্জ আন্ট আর আমার উপহার যোগ কর। এবার গুণে দেখো কত হয়?
ঠিক আছে। তাহলে সাইত্রিশটা হলো –ডাডলির জবাবের মধ্যে ভীষণ ক্রোধের গন্ধ পেয়ে আন্ট পেতুনিয়া বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তিনি বললেন–ঠিক আছে, আমরা আজ যখন বাইরে যাবো তখন তোমাকে আরো দুটা উপহার কিনে দেব।
ডাডলি মুহূর্তের জন্য কী যেন ভাবল। তারপর বলল–ঠিক আছে। তাহলে আমার উপহারের সংখ্যা হবে ত্রিশ।
আন্ট পেতুনিয়া কথা শেষ করলেন–লক্ষ্মীসোনা, সংখ্যা হবে ত্রিশ নয়, বেশি। ঊনচল্লিশ। আহ ডাডলি চেয়ারে বসে সবচে কাছের প্যাকেটটা হাতে তুলে বললো, তাহলে ঠিক আছে।
আঙ্কল ভার্নন মৃদু হাসলেন।
বাবার মতোই ডাডলি তার প্রাপ্যটা চাচ্ছে। এই বলে আঙ্কল ভার্নন ডাডলির চুলে আদরের হাত বুলিয়ে দিলেন। ঠিক এই সময় ফোন বেজে উঠল। আন্ট পেতুনিয়া ফোন ধরতে চলে গেলেন। হ্যারি আর আঙ্কল ভার্নন দেখলেন ডাডলি তার উপহার সামগ্রীর মোড়ক খুলছে। ডাডলি একটা রেসিং বাইক পেয়েছে। পেয়েছে একটা সিনে–ক্যামেরা। কম্পিউটারের ১৬টা নতুন খেলা, একটা ভিডিও রেকর্ডার। ডাডলি মোড়ক খুলে সোনালি হাতঘড়িটা বের করল। এই সময় আন্ট পেতুনিয়া হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এলেন। তাকে ক্রুদ্ধ ও চিন্তিত মনে হল।
তিনি বললেন–দুঃসংবাদ, ভার্নন। মিসেস ফিগের পা ভেঙে গেছে। তিনি ওকে নিতে পারবেন না। এই বলে তিনি হ্যারির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন।
ডাডলির চেহারায় অপ্রত্যাশিত আতঙ্ক দেখা গেল। হ্যারি অবশ্য হাফ ছেড়ে বাঁচল। প্রতি বছর ডাডলির জন্মদিনে তার বাবা–মা তাকে এবং এক বন্ধুকে নিয়ে সারাদিনের জন্য বাইরে যান। এ্যাডভেঞ্চার পার্ক, হামবার্গার বার বা সিনেমায়। প্রতি বছরই হ্যারিকে ফিগের কাছে রেখে যেতেন তাঁরা। ফিগ হচ্ছেন একজন উন্মাদ বৃদ্ধা, তিনি দুটো রাস্তার পরেই থাকেন। হ্যারি মিসেস ফিগকে একদমই পছন্দ করে না।
তাহলে এখন কি হবে? আন্ট পেতুনিয়া কথাগুলো বলে হ্যারির দিকে এমনভাবে তাকালেন যে মনে হল মিসেস ফিগের পা ভাঙার জন্য হ্যারিই দায়ী। ভার্নন বললেন–মার্জকে ফোন করা যেতে পারে।
বোকার মতো কথা বলো না ভার্নন। সে হ্যারিকে একেবারেই পছন্দ করে না–মিসেস ডার্সলির জবাব।
হ্যারির সামনেই ডার্সলি পরিবারে তাকে নিয়ে প্রায়ই এ ধরনের কথাবার্তা হতো। যেন হ্যারি ধারে–কাছেও নেই বা তারা যখন হ্যারি সম্পর্কে এমন অবজ্ঞার সুরে কথা বলতেন যে মনে হতো, তার এখানে কোন উপস্থিতিই নেই।
হ্যারি মনে মনে আশা করছিল একা থাকলে সে টেলিভিশনে তার খুশিমতো অনুষ্ঠান দেখতে এবং ডাডলির কম্পিউটার রুমেও যেতে পারবে।
তাদের কথাবার্তার মাঝখানে হ্যারি বলল–আমাকে তোমরা বাড়িতে রেখে যেতে পারো। আমি টিভি দেখে সময় কাটাব।
আন্ট পেতুনিয়া হ্যারির দিকে এমনভাবে তাকালেন যে মনে হলো যেন এইমাত্র তিনি তেতো কিছু মুখে দিয়েছেন।
তিনি মন্তব্য করলেন–ঘরে ফিরে দেখা যাবে সব তছনছ হয়ে গেছে।
আমি বাড়ির কোন কিছুর ক্ষতি করব না। হ্যারি বলল। কিন্তু কেউই তার কথা কানে তুললেন না।
আন্ট পেতুনিয়া বললেন–চলো চিড়িয়াখানায় যাই। এক গাড়িতে বসিয়ে রাখা যাবে।
গাড়িটা নতুন। নতুন গাড়িতে ও একা থাকতে পারবে না।
ডাডলি কাঁদতে শুরু করল। আসলে কাঁদা নয়। কাঁদার অভিনয়। ডাডলি জানে কাঁদলেই সে যা চায় তাই পায়।
দুষ্ট ছেলে এভাবে কাঁদে না। তার মা বললেন, তোমার মা কখনোই চাইবে না যে সে তোমার জীবনের এই দিনটা নষ্ট করে দিক।
আমি চাই না, একদম চাই না সে আমাদের সঙ্গে যাক। ডাডলি বলল–সে সবকিছু নষ্ট করে দেয়। এই বলে সে হ্যারির দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকাল।
ঠিক তখনই দরোজায় বেল বেজে উল। আন্ট পেতুনিয়া উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠলেন, ওহ ঈশ্বর, তারা এসেছে। কিছুক্ষণ পর মাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল ডাডলির ঘনিষ্টতম বন্ধু পায়ার্স পলকিস। ডাডলির কান্না থেমে গেল। পায়ার্সের চেহারাটা যেন অনেকটা ইঁদুরের মতো। পায়ার্স পলকিস ডাডলির মজার বন্ধু। ডাডলি যখন লোকজনকে আঘাত করে তখন সে তাদের হাত পেছনে আধমোড়া করে বেঁধে ফেলে।
আধঘণ্টা পরেই হ্যারি গিয়ে বসল ডার্সলিদের গাড়িতে। হ্যারি ভাবতেও পারেনি তার এমন সৌভাগ্য হবে। গাড়িতে ডাডলি এবং পায়ার্সও আছে। তারা সকলেই যাবে চিড়িয়াখানায়।
আঙ্কল ভার্নন তারিকে সতর্ক করে দিলেন–সাবধান। কোনপ্রকার গগুগোল করবে না। গণ্ডগোল করলেই বড়দিন পর্যন্ত তোমাকে কাবার্ডে কাটাতে হবে।
সত্যি বলছি। আমি কোন রকম গণ্ডগোল করব না। হ্যারি আশ্বাস দিল।
আঙ্কল ভার্ননের মতো কেউই হ্যারির কথা বিশ্বাস করল না।
হ্যারিকে নিয়ে প্রায়ই অঘটন ঘটে। এর আগেও হ্যারি তাদের বিরক্ত করেছে।
সমস্যা হলো হ্যারিকে নিয়ে প্রায়ই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। তাকে নিয়ে ডার্সলি পরিবার মোটেই খুশি নন।
একবার সেলুন থেকে চুল কেটে হ্যারি বাড়িতে ফিরে আসতে আসতেই তার চুল আগের মত হয়ে যায়। আন্ট পেতুনিয়া দেখতে পান তার মাথার চুল আগের মতোই। যেন চুল কাটাই হয়নি। এতে তিনি বিরক্ত হলেন এবং রান্নাঘর থেকে কাঁচি এনে হ্যারির মাখা মুড়িয়ে দিলেন। কেবল কপালের দাগ ঢেকে রাখার জন্য সামনের দিকে কিছু রেখে দেয়া হলো। ডাডলি তাকে দেখে হাসছিল। সারারাত তার ঘুম হলো না। সে স্কুলের কথা ভাবছিল। সকালে উঠে দেখে হ্যারির মাথাভর্তি চুল, আন্ট কেটে দেয়ার আগে যে অবস্থা ছিল। এ কারণে আন্ট তাকে সাত দিন কার্ডের মধ্যে আটকে রাখলেন। যদিও হ্যারি বোঝাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে যে সে এর কারণ জানে না।