হ্যাগ্রিড ঘুম থেকে উঠে বসলেন। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে আজকে অনেক কিছু করতে হবে। বললেন–লন্ডন যেতে হবে। লন্ডন যাবার আগে জাদুবিদ্যার স্কুলের দরকারি সব জিনিসপত্র কিনতে হবে।
হ্যারি হ্যাগ্রিডের উদ্দেশ্য বলল–আমার কোন টাকা পয়সা নেই। আর আপনিও শুনলেন জাদুবিদ্যার স্কুলে ভর্তি হবার জন্য আমার আঙ্কল আমাকে কোন টাকা দেবেন না।
এ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। হ্যাগ্রিড বললেন–তুমি কি মনে করেছো যে, তোমার বাবা তোমার জন্য কিছুই রেখে যাননি? তোমার বাবা তোমার জন্য প্রচুর ধন–সম্পদ রেখে গেছেন।
কিন্তু তাদের বাড়ি তো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল–হ্যারি বলল।
তারা তাদের সোনা–দানা বাসায় রাখেননি। আমাদের কাজ হবে প্রথমে গ্রিংগটস উইজার্ড ব্যাংকে যাওয়া। নাও সসেজ খাও। খুব বেশি ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি। তোমার জন্মদিনের কেকও খেতে পার… তোমার যা ইচ্ছে। হ্যাগ্রিড বললেন।
জাদুকরদের কি ব্যাংক থাকে? হ্যারি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ, তাদের একটাই ব্যাংক আছে। গ্রিংগটস উইজার্ড ব্যাংক।
বিকেলে হ্যাগ্রিড পাহাড়ে গেলেন। সাথে হ্যারিও গেল। আকাশ নির্মেঘ, পরিষ্কার, সমুদ্রে সূর্যাস্তের প্রতিফলন। ভাড়ার একটি নৌকা ঘাটে বাঁধা আছে। নৌকার তলায় বৃষ্টির পানি জমেছে।
অন্য একটি নৌকার সন্ধান করে হ্যারি হ্যাগ্রিডকে প্রশ্ন করল–আপনি এখানে এলেন কী করে?
উড়ে এসেছি। হ্যাগ্রিড বলল।
উড়ে এসেছেন–মানে? হ্যারি অবাক হলো।
হ্যাঁ–আমরা এটাতেই ফিরে যাব। হ্যাগ্রিড় বলল–আমি যখন এটা পেয়েছি এখন আর জাদুবিদ্যার সাহায্য দরকার নেই।
তারা দুজন নৌকায় উঠলেন। হ্যারি তখনও হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়েছিল এবং কল্পনা করছিল কিভাবে হ্যাগ্রিড উড়ছেন।
হ্যাগ্রিড বলেছেন নৌকা বাওয়াটা লজ্জার ব্যাপার। তাহলে কি নৌকাটা উড়বে–হ্যারি ভাবছিল।
হ্যাগ্রিড বললেন–আমি যেখানেই থাকি সেখানে সবকিছুর গতি বেড়ে যায়। তুমি কি হোগার্টসে গিয়ে এসব বিষয়ে গল্প করবে? হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকালেন।
অবশ্যই না। হ্যারি জবাব দিল।
হ্যাগ্রিড তার গোলাপী ছাতাটা বের করে দুভাগ করলেন। নৌকার পাশে ধরতেই নৌকাটা দ্রুতবেগে পাড়ের দিকে রওনা হলো।
আপনি গ্রিংগটস থেকে টাকা আনার জন্য এত ব্যস্ত হলেন কেন? হ্যারি জানতে চাইল।
জাদুবিদ্যা কাজে লাগিয়েছি। পত্রিকার ভাঁজ খুলতে খুলতে হ্যাগ্রিড বললেন–বলা হয় ড্রাগন নাকি ব্যাংকের ভল্টগুলো পাহারা দিচ্ছে। গ্রিংগটস লন্ডন থেকে শত শত মাইল দূরে। সমুদ্রের নিচ দিয়ে যেতে হবে। ওখানে যেতে হলে তুমি খিদেয় মারা যাবে। হ্যারি বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল। ডেইলি প্রফেটের পাতা ওল্টাতে ওল্টাভে হ্যাগ্রিড মন্তব্য করলেন জাদু মন্ত্রণালয় সব সময় গোল পাকায়।
জাদুর জন্য কি আবার একটি মন্ত্রণালয় আছে নাকি? হ্যারি বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
অবশ্যই আছে। হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–সরকার চাচ্ছিলেন ডাম্বলডোর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিক। কিন্তু ডাম্বলডোর হোগার্টসের জাদুবিদ্যার স্কুল ছেড়ে মন্ত্রী হতে আগ্রহী নন।
জাদুবিদ্যা মন্ত্রণালয়ের কাজ কী? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–মাগলদের হাত থেকে জাদুবিদ্যা শাস্ত্রকে রক্ষা করা।
নৌকা ঘাটে ভিড়ল। তারা নৌকা থেকে নেমে সড়কপথে হাঁটতে লাগল। পথচারীরা অবাক দৃষ্টিতে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে রইল। তাদের দোষ দেওয়া যায় না। হ্যাগ্রিড এত লম্বা যে, তিনি সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
লন্ডন যাওয়ার জন্য তারা স্টেশনে পৌঁছল। পাঁচ মিনিটের ভেতরই লন্ডনের জন্য ট্রেন পাওয়া যাবে। মাগলদের টাকার ব্যাপারে হ্যাগ্রিডের কোন ধারণা ছিল না। সে টাকাকে মাগল টাকা বলে থাকে। তাই টিকিট করার জন্য হ্যারিকে টাকা দিলেন। ট্রেনের দিকে না তাকিয়ে সবাই শুধু হ্যাগ্রিডের দিকে তাকায়। হ্যাগ্রিড দুটো আসন নিয়ে বসলেন।
তোমার চিঠি কি তোমার সাথে আছে? হ্যাগ্রিড হ্যারিকে জিজ্ঞেস করলেন।
হ্যারি হলুদ খামের চিঠিটা পকেট থেকে বের করলো।
ঠিক আছে। হ্যাগ্রিড বললেন, তোমার কী কী লাগবে তার একটা বিস্তারিত তালিকা চিঠিতে লেখা আছে।
হ্যারি কাগজের দ্বিতীয় অংশটার ভাঁজ খুলল। রাতে সে কাগজটা লক্ষ্যও করেনি এবং পড়েওনি। হ্যারি পড়তে শুরু করল–
হোগার্লস স্কুল অফ উইচক্রাফট এবং উইজারডি
ইউনিফর্ম
প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবশ্যক
১। তিন সেট স্বাভাবিক কাজের পোশাক (কালো)
২। দিনে পরার জন্য একটা সাধারণ চোখা হ্যাট (কালো)
৩। একজোড়া দস্তানা (ড্রাগন ও অনুরূপ প্রাণীর চামড়ার তৈরি)
৪। শীতের একটা পোশাক (কালো–রূপালী এবং টিলা)
লক্ষ্য করুন–প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর পোশাকে নেইম–ট্যাগ থাকতে হবে।
নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক
প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তালিকাভুক্ত প্রত্যেকটা বইয়ের একটা করে কপি রাখতে হবে
(ক) The Standard Book of Spells (Grade–1) by Miranda Goshawk
(খ) History of Magic by Bathilda Bagshot
(গ) Magical Theory by Adalbert Wafting
(ঘ) A Beginners Guide to Transfiguration by Emeric Switch
(ঙ) One Thousand Magical Herbs and Fungi by Phyllida Spore
(চ) Magical Drafts and Potions by Arsenius Jigger
(ছ) Fantastic Beasts and Where to Find Them by Newt Scamander
(জ) The Dark Forces–A Guide to Self–Protection by Quentin Trimble