ভোলডেমর্টের কী হলো? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড বললেন–সে সেদিন পালিয়ে গেল। পরের রাতে সে তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। তবে ওর ব্যাপারটাও রহস্য রয়ে গেছে। কেউ বলে ও মারা গেছে। কেউ বলে ও এখনও জীবিত।
আন্তরিকতা ও উষ্ণতার সাথে হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকালেন। ওঁর কথায় হ্যারি খুশি ও গর্বিত হওয়ার পরিবর্তে বরং মনে করলো কোথাও বড় ধরনের ভুল হচ্ছে। সে জাদুকর! সে কীভাবে জাদুকর হয়? সে তো ডার্সলি পরিবারে আঙ্কল ভার্নন এবং আন্ট পেতুনিয়ার কাছেই প্রতিপালিত হয়েছে। সে যদি জাদুকরই হবে তাহলে তাকে কেন যাযাবরের জীবন কাটাতে হচ্ছে? কেন কাবার্ডের ওপর ঘুমোতে হয়। সে যদি খ্যাতিমানই হবে তাহলে ডাডলি কেন সব সময় তাকে ফুটবলের মতো লাথি মারে।
হ্যারি হ্যাগ্রিডকে বলল–আপনি বোধহয় ভুল করছেন। আমার মনে হয় না, আমি একজন জাদুকর।
হ্যারির কথায় হ্যাগ্রিড মৃদু হাসলেন।
তুমি জাদুকর হবে না কেন? জাদুবিদ্যাকে কি তুমি ভয় পাও?
হ্যারি আগুনের দিকে তাকাল। এখন সে ভাবতে লাগল ভার আঙ্কল আন্ট তার সাথে কেন দীর্ঘদিন এমন ওলট–পালট ও অস্বাভাবিক ব্যবহার করেছেন।
হ্যারি হাসিমুখে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে দেখল, হ্যাগ্রিডের মুখে তখনও স্মিত হাসি। আঙ্কল ভার্ননের উদ্দেশ্যে হ্যাগ্রিড বললেন–তুমি কি দেখতে চাও হ্যারি জাদু জানে কিনা।
আঙ্কল ভার্নন বলল–আমি তোমাকে বলেছি হ্যারি কোথাও যাবে না। ও স্টোনওয়াল হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। তোমাদের ফালতু চিঠি আমি পড়েছি।
হ্যারি হোগার্টসে যদি যেতে চায়। তোমার মত একজন বড় মাগলও কিছুতেই তাকে রুখতে পারবে না–হ্যাগ্রিড বললেন। তুমি কি পাগল, ভাবছো, লিলি ও জেমস-এর ছেলের হোগার্টস যাওয়া বন্ধ করতে পারবে। জন্মের পরেই ওর নাম এ স্কুলে লেখা হয়ে গেছে। সে সেখানে হোগার্টসের ইতিহাসে যার মত বড় শিক্ষক হননি সেই আলবাস ডাম্বলডোরের অধীনে পড়াশোনা করবে।
তাকে ম্যাজিকের কারসাজি শেখানোর জন্য কোন মাথা খারাপ বৃদ্ধকে আমি এক কানা কড়িও দিচ্ছি না। আঙ্কল ভার্ননের কণ্ঠে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
শেষ পর্যন্ত তিনি খানিকটা বেশিই বলে ফেললেন। হ্যাগ্রিড আবার ছাতাটি তরবারির মতো করে আঙ্কল ভার্ননের সামনে তার মাথার ওপর শূন্যে ঘুরালেন। আর বলল–হুঁশিয়ার আলবাস ডাম্বলডোরের বিরুদ্ধে তুমি একটা কথা বলবে না।
হিশ… শব্দ করে ছাতাটি যখন ডাডলির সামনে চলে এল, বেগুনি রঙের আলোর ঝলকানি, আতশবাজির মত একটা শব্দ, এক তীব্র চিৎকার এবং পরমুহূর্তেই ডাডলি তার নিতম্বে দু হাত চেপে তীব্র ব্যথায় বিকট শব্দ করে উঠল। হ্যারি দেখলো একটি শূকরের লেজ ডাডলির ট্রাউজার খুঁড়ে বের হচ্ছে। আঙ্কল ভার্নন আর্তনাদ করে উঠলেন। তিনি এত ভয় পেলেন যে তৎক্ষণাৎ আন্ট পেতুনিয়া আর ডাডলিকে দ্রুত টেনে অন্য ঘরে নিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় যখন দরোজা বন্ধ করছিলেন তখন তার চেহারায় ভীষণ আতঙ্কের ছাপ। হ্যাগ্রিড তার দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে ছাতার দিকে তাকিয়ে বললেন, মাথা গরম করা ঠিক নয়, কিন্তু অনেক সময় এটা কাজ করে। মানে… ওকে শূকর বানানো, তবে সে এমনিতেই দেখতে শূকরের মতো।
হ্যারি হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞেস করল–আপনি জাদু দেখান না কেন?
একথার কোন জবাব না দিয়ে হ্যাগ্রিড তাঁর কোটটা হ্যারির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, তুমি আমার কোটটি পরে নাও। খেয়াল রেখো। এর ভেতরে আরো কিছু জিনিস আছে।
০৫. ডায়াগন এলি
পরদিন খুব সকালেই হ্যারির ঘুম ভাঙল। যদিও সে জানে চারদিক ফরসা হয়ে গেছে। তবুও চোখ বন্ধ করে রইল।
তার মনে হলো রাতে সে স্বপ্ন দেখেছে যে হ্যাগ্রিড নামে এক দৈত্য এসে তাকে জাদুবিদ্যার স্কুলে ভর্তি হতে বলেছে। হ্যারি মনে মনে বলল, এখন আমি চোখ খুললেই দেখবো বাড়িতে আমি আমার কাবার্ডের ওপর শুয়ে আছি।
ঠিক এই সময় দরোজায় ঠক–ঠক আওয়াজ। মনে হচ্ছে আন্ট পেতুনিয়া দরোজায় শব্দ করছেন। তবুও সে চোখ বন্ধ করে থাকল। কারণ গত রাতে সে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে।
আবার দরোজায় ঠক–ঠক আওয়াজ।
হ্যারি বলল–আমি আসছি।
হ্যারি উঠতেই তার গা থেকে হ্যাগ্রিডের দেয়া কোটটা নিচে পড়ল।
চারদিকে সুর্যের আলো। ঝড় থেমে গেছে। হ্যাগ্রিড তখনও সোফায় ঘুমোচ্ছেন। একটা পেঁচা জানালায় ডানা ঝাপটাচ্ছে। ঠোঁটে একটা খবরের কাগজ। হ্যারি উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিল। পেঁচাটা ঘরে ঢুকে হ্যাগ্রিডের গায়ের ওপর খবরের কাগজটা ফেলে দিয়ে হ্যাগ্রিডের কোটে আক্রমণ করল। হ্যারি পেঁচাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করল। হ্যাগ্রিড চোখ না খুলেই হ্যারিকে বললেন–ওকে কিছু পয়সা দিয়ে দাও।
–কত দেব? হ্যারি জানতে চাইল।
–দেখ, আমার পকেটে কী আছে।
হ্যাগ্রিডের কোটের পকেটে চাবির গোছা, ব্রোঞ্জ মুদ্রা, টি–ব্যাগসহ নানা কিসিমের জিনিস পাওয়া গেল।
অবশেষে হ্যারি অদ্ভুত ধরনের কিছু মুদ্রা বের করল।
তাকে পাঁচটি নাট দিয়ে দাও। হ্যাগ্রিড হ্যারিকে বললেন।
নাট! অবাক হয়ে হ্যারি প্রশ্ন করল।
হ্যাগ্রিড বললেন–হ্যাঁ, ব্রোঞ্জের ছোট ছোট মুদ্রাগুলো। হ্যারি গুণে গুণে ব্রোঞ্জের পাঁচটি মুদ্রা বের করল। পেঁচা পা বাড়িয়ে দিতেই হ্যারি একটি পুটুলিতে মুদ্রাগুলো রেখে পুটুলিটি পেঁচার পায়ের সাথে বেঁধে দিল। পেঁচা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আকাশে উড়াল দিল।