হ্যারি বলল–তোমরাও কি জানো যে আমি একজন–জাদুকর।
অবশ্যই জানি। পেতুনিয়া জবাব দিলেন-এটা কী করে হয় যে আমি আমার বোন সম্পর্কে কিছু জানবো না। সেও সেই স্কুল থেকে এরকম চিঠি পেয়েছিল এবং একদিন উধাও হয়ে গিয়েছিল। ছুটির সময় সে বাড়িতে আসতো–তার পকেটে থাকতে ব্যাঙের পা, চায়ের কাপকে সে ইঁদুর বানাতো। একমাত্র আমিই জানতাম, সে একটি ভণ্ড! কিন্তু আমার মা–বাবার কাছে সে ছিল প্রিয়–সবকিছুতেই তারা লিলিকে নিয়ে গর্ব করতো। সবসময় বলতে লিলি এটা… লিলি ওটা…। তারপর তোমার বাবার সাথে স্কুলে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে ঘনিষ্টতা এবং বিয়ে। ওরা দুজনেই পাগল, অদ্ভুত, অস্বাভাবিক। তারপর তোমার জন্ম হয়। আমি জানতাম তুমি তাদের মত হবে। তারা একদিন বিস্ফোরণে শেষ হয়ে গেল। তারপর থেকে তুমি আমাদের কাছে।
কথাগুলো শুনে হ্যারির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। একটু পর হ্যারি মুখ খুলল–বিস্ফোরণ! তোমরা না বলেছিলে, আমার বাবা–মা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে?
গাড়ি দুর্ঘটনায়! হ্যাগ্রিড গর্জন করে উঠলেন। ডার্সলি পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হ্যাগ্রিড প্রশ্ন করলেন-এটা কি বিশ্বাস করা যায় যে লিলি আর জেম্স্ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এটা অসম্ভব। এটা নিছক গুজব। বানোয়াট গল্প। এটা বদনাম। আমাদের জগতের প্রতিটা শিশুই হ্যারি পটারের নাম জানে। এটা কি করে হয় যে সে নিজেই তার সম্পর্কে জানে না। কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা ঘটলো। হ্যাগ্রিড কঠিন ভাষায় প্রশ্ন করলেন।
হ্যাগ্রিডের ক্রোধ খুব দ্রুতই উদ্বেগে পরিণত হলো। উদ্বিগ্ন স্বরে হ্যাগ্রিড বললেন–আমি এটা কখনোই আশা করিনি। আমি তখন বুঝতে পারিনি ডাম্বলভোর কেন আমাকে বলেছিলেন তোমাকে নিতে অনেক বাধা–বিপত্তি পেরুতে হবে। তুমি যে অনেক কিছু জানো না-এটাও আমার জন্য কম বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। তোমাকে আমার অনেক কিছুই বলার আছে। তবে সবটুকু এখন বলা যাবে না। আমি ততটুকুই বলব যতটুকু আমার পক্ষে বলা সম্ভব।
ডার্সলি পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হ্যাগ্রিড হ্যারিকে বলতে লাগলেন–বিষয়টি এই, আমার মনে হয় একটা লোক, নাম–কিন্তু আশ্চর্য তুমি তার নাম জানো না! পৃথিবীর সকলে তার নাম জানে।
লোকটা কে? হ্যারি প্রশ্ন করে বসে।
তার নাম …বলতে গিয়ে হ্যাগ্রিড থেমে গেলেন। হ্যাগ্রিডের মুখ থেকে নামটি বেরুল না।
আমি তার নাম বলতে পারব না। কেউই তার নাম উচ্চারণ করে না হ্যাগ্রিড বললেন।
কিন্তু কেন? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড বললেন–ঘটনার সাথে আরেকজন জড়িত। তার নাম গালপিন গারগোয়েলেস। সে একজন ভেলকিবাজ ও বদমায়েশ। খুবই জঘন্য, জঘন্যের চেয়েও জঘন্য। তার নাম বলা… আচ্ছা ঠিক আছে, তার নাম ভোলডেমর্ট। দ্বিতীয়বার তার নাম নিতে বলবে না। তার জগতটাই ছিল জাদুলীলা, ডাইনি আর ভেলকিবাজদের নিয়ে। প্রায় বিশ বছর আগে সে তার অনুসারী বানাবার জন্যে লোকজন খুঁজতো। সে বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে। সে কয়েকজনকে খুন করেছে। বিশেষ করে তার বিরোধী মতের লোকদেরকে। একমাত্র ডাম্বলডোরকেই সে ভয় পেতো। তার স্কুলটাকে সে নিতে সাহস পায়নি।
হ্যাগ্রিড বলে চললেন–তোমার বাবা মা খুব ভাল জাদুকর ছিলেন। তাদের তুলনা হয় না। ছাত্রাবস্থায় হোগার্টস স্কুলে তারা হেড বয় ও হেড গার্ল ছিলেন। তবে এটা অজানাই থেকে গেল যে কেন ভোলডেমর্ট তাদেরকে পক্ষে নেয়ার চেষ্টা কখনো করেনি। এর কারণ হতে পারে যে তোমার বাবা–মা ডাম্বলডোরের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তখন তোমার বয়স মাত্র এক বছর। ভোলডেমর্ট তোমাদের বাড়ি যায়। তোমার বাবা–মাকে হত্যা করে। এ সময় ইউ–নো–হু তোমাকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। তাই তোমার কপালের এই দাগ দেখে আমি বিস্মিত হইনি। এটাও তো কম কষ্ট নয়। এটা একটি শক্তিশালী অভিশাপের পরিণাম। শাপটা তোমার ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এজন্যই তুমি খ্যাতিমান হ্যারি। কারণ সে যাকে মারতে চাইতো তার বাঁচার কোন উপায় থাকত না। একমাত্র তুমিই তার ব্যতিক্রম।
গ্রিডের কথা শুনে হ্যারির মন বিষাদে ভরে গেল।
করুণ দৃষ্টিতে হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকালেন।
হ্যাগ্রিড বলনেল–ডাম্বলডোরের নির্দেশেই আমি তোমাকে সেই ভাঙা বাড়ি থেকে উদ্ধার করি। তবে শেষ পর্যন্ত তুমি যেখানে আছ–অর্থাৎ ডার্সলিদের পরিবারে–সেটাও তো তোমার জন্য ভালো হয়নি। এটা তো তোমার জন্য একটি নরক।
ইতোমধ্যে আঙ্কল ভার্নন তার সাহস কিছুটা ফিরে পেয়েছেন। তিনি বললেন–আমি স্বীকার করি হ্যারির ভেতর অদ্ভুত কিছু জিনিস আছে। সে ডাইনি জগতের লোক। হয়ত শাসন করে তাকে বশে আনা যাবে অথবা যাবে না। তবে আমি চাই না সে ওই জগতের সাথে কোন সম্পর্ক রাখুক।
আঙ্কল ভার্ননের কথা শুনে হ্যাগ্রিড সোফা থেকে লাফ দিয়ে উঠলেন। তার প্যান্ট থেকে একটা ভাঙা ছাতা বের করে সেটাকে তরবারির মতো করে আঙ্কল ভের্ননের সামনে উঁচিয়ে ধরলেন। তারপর বললেন–ডার্সলি, আমি তোমাকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, তুমি আর একটি কথাও বলবে না।
ছাতার খোঁচা খাবার ভয়ে আঙ্কল ভার্নন একেবারে চুপসে গেলেন।
হ্যাগ্রিড পুনরায় সোফায় বসলেন।