না। হ্যারি বলল।
হ্যাগ্রিড একটু ধাক্কা খেলেন মনে হলো; তিনি হ্যারির এই উত্তর আশা করেনি।
আমি দুঃখিত। হ্যারি দুঃখ প্রকাশ করল।
এবার হ্যাগ্রিড ডার্সলি পরিবারের অন্য সবার দিকে তাকাল। হ্যারি, তোমার দুঃখিত হবার কোন কারণ নেই। দুঃখিত হবার কারণ তো ওদেরই। আমি জানি–তোমাকে লেখা একটি চিঠিও ওরা তোমাকে দেয়নি। হোগার্টসের ব্যাপারেও তারা তোমাকে কিছু জানায়নি। তোমার বাবা–মার ব্যাপারেও ওরা তোমাকে কিছু বলেনি।
আমার বাবা–মার সম্পর্কে কী? হ্যারি আগ্রহ ভরে জানতে চাইল।
তুমি কিছুই জানো না! হ্যাগ্রিড বিস্ময় প্রকাশ করল। বলল–ঠিক আছে, এক সেকেন্ড অপেক্ষা করো।
হ্যাগ্রিড এত ক্ষেপে গেলেন যে মনে হল মুহূর্তেই বাড়িটা লন্ডভণ্ড করে ফেলবেন। ডার্সলি ভয়ে পেছনে হটে দেয়ালে পিঠ ঠেকালেন।
হ্যাগ্রিড হুংকার দিয়ে বললেন–তোমরা আমাকে বল, ছেলে-এই ছেলেটা–মানে হ্যারি কি কিছুই জানে না?
হ্যারির মনে হলো–হ্যাগ্রিড একটু বাড়াবাড়ি করছেন। সে তো স্কুলে পড়ছে। লেখাপড়ায় সে খুব একটা খারাপ নয়।
হ্যারি বলল–আমি পড়াশোনা করি। আমি অঙ্কে ভালো।
হ্যাগ্রিড হ্যারির কথায় কান না দিয়েই ডার্সলি পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রশ্ন করলেন আপনারা কি ওকে ওর পরিবার, ওর বাবা–মার ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানাননি?
হ্যাগ্রিড যেন উত্তেজনায় ফেটে পড়ছিলেন।
আঙ্কল ভার্নন ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে পড়লেন। হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–তোমার বাবা–মা সম্পর্কে তোমার জানা উচিত। তারা খ্যাতিমান ব্যক্তি ছিলেন। তুমিও সেই হিসেবে খ্যাতিমান।
কী বললেন? আমার বাবা–মা খ্যাতিমান ছিলেন? হ্যারি বিস্ময়ে হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞেস করল।
তুমি একেবারে কিছুই জানো না? হ্যাগ্রিড বিস্ময়ে হ্যারির দিকে তাকালেন।
অনেকক্ষণ পর আঙ্কল ভার্নন কিছু বলার সাহস পেলেন। তিনি বললেন–হ্যারির বাবা–মা সম্পর্কে কিছু না বলার জন্য তোমাকে অনুরোধ করছি।
এতে হ্যাগ্রিডের রাগ কমল না। হ্যাগ্রিড রাগের সাথেই বললেন আপনি তো কখনো তাকে বলেননি চিঠিগুলোতে কী লেখা ছিল? ডাম্বলডোর হ্যারিকে এই চিঠিগুলো পাঠিয়েছিলেন আমার সামনেই। আপনি এতগুলো বছর হ্যারির কাছ থেকে সবকিছু গোপন রেখেছেন। তাই না?
কী লুকিয়ে রেখেছেন? হ্যারি কৌতূহলী হয়ে উঠলো।
চুপ কর, এসব কথা বলতে আমি কি তোমাকে নিষেধ করিনি? আঙ্কল ভার্নন বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
আন্ট পেতুনিয়ার চেহারায়ও আতঙ্কের ছাপ দেখা গেল।
আপনারা দুজন মাথা গরম করলেও কিছু হবে না। হ্যারি তুমি একজন জাদুকর। হ্যাগ্রিড বলল।
ঘরের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। শুধু কেবল সাগরের গর্জন আর বাতাসের শির শির আওয়াজ ভেসে আসছে।
আমি একজন কী? হ্যারি আরো কৌতূহলী হলো।
তুমি একজন জাদুকর। হ্যাগ্রিড বললেন–তোমার কাছে পাঠানো চিঠিগুলো তোমার পড়া উচিত ছিল। এই বলে হ্যাগ্রিড একটি হলুদাভ খাম হ্যারির হাতে দিলেন।
হ্যারি খামটি হাতে নিল। খামের ওপর হালকা সবুজ কালিতে লেখা ছিল
মি, এইচ পটার
দি ফ্লোর, হার্ট অন দি রক
সমুদ্র
হ্যারি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো–
হোগার্টসের জাদু বিদ্যালয়
প্রধান শিক্ষক : আলবুস ডাম্বলডোর
প্রিয় মি. পটার,
আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আমাদের জাদু বিদ্যালয়ে তোমার জন্য একটি আসন রাখা আছে। চিঠির সাথে প্রয়োজনীয় বইপত্র ও সরঞ্জামাদির তালিকা দেয়া হলো।
আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে কোর্স শুরু হবে। ৩১শে জুলাইয়ের ভেতর তোমার কাছে পেঁচা প্রত্যাশা করছি।
ইতি
মিনার্ভা ম্যাকগোনাগল
উপ–প্রধান শিক্ষক
হ্যারির মাথায় একগাদা প্রশ্ন কিলবিল করছিল। সে ভেবে পাচ্ছিল না, কোন প্রশ্নটা আগে করবে। কয়েক মিনিট পর অস্ফুটস্বরে বলল, তারা আমার পেঁচার জন্য অপেক্ষা করবে, এর অর্থ কী? একহাতে নিজের কপাল চেপে হ্যাগ্রিড বলল, এতক্ষণে মনে পড়েছে তার অপর হাতটি ওভারকোটের পকেটে ঢুকিয়ে একটি জীবন্ত পেঁচা, একটি লম্বা পালকের কলম ও মোটা কাগজের রোল বের করলেন। হ্যাগ্রিড তার দাঁতে পাখির পালক চেপে কাগজে কিছু লিখলেন যা বুঝতে হ্যারির একটুও অসুবিধে হলো না।
হ্যাগ্রিড লিখলেন :
প্রিয় মি, ডাম্বলডোর,
হ্যারিকে তার চিঠি দেয়া হয়েছে। তার জিনিসপত্র কেনার জনা আমি আগামীকাল বেরুব। আবহাওয়া দুর্যোগময়। আশা করি আপনি ভালো আছেন।
ইতি
হ্যাগ্রিড
লেখাটা ভাঁজ করে হ্যাগ্রিড পেঁচাকে দিলেন। পেঁচা এটা ঠোঁটে চেপে ধরল। এবার পেঁচাটিকে জানালা দিয়ে হ্যাগ্রিড আকাশে উড়িয়ে দিলেন। এমন স্বাভাবিকভাবে হ্যাগ্রিড ফিরে এসে বসলেন, যেন এইমাত্র ফোনে কথা বলে এলেন। এরপর আঙ্কল ভার্নন হুংকার দিয়ে উঠলেন–হ্যারি তুমি কোথাও যাবে না। হ্যাগ্রিড রেগেমেগে আগুনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবং বললেন–আমি দেখতে চাই তোমার মতো একটা মাগল তাকে কীভাবে আটকায়।
মাগল। মাগল কী? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–মাগল হলো যে সব লোক জাদুর মর্ম বোঝে না। তোমার দুর্ভাগ্য এরকম একটি মাগল পরিবারে তুমি বড় হয়েছে।
এবার আঙ্কল ভার্নন এগিয়ে এসে বললেন–আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা তাকে এ ধরনের ভোজবাজি থেকে দূরে রাখব। তার ওই ধরনের জাদু–টাদু শেখার ইচ্ছা চিরকালের জন্য আমরা শেষ করে দেব।