আমি সম্প্রতি একটি অস্বস্তিকর বাস্তব তথ্যের কথা জেনেছিঃ কিছু প্রভাবশালী বিজ্ঞানীরা আছেন বিভিন্ন প্রকাশনার সাথে তাদের নিজেদের জুড়ে দেবার যাদের অভ্যাস আছে, যে প্রকাশনায় তাদের যখন কোনো অবদানই নেই। আপাতদৃষ্টিতে বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের বিজ্ঞানী একটি প্রকাশনার জন্য যৌথ লেখক হিসাবে স্বীকৃতি দাবী করেন, যখন সেখানে তাদের অবদান হয়তো ল্যাবের জায়গা যোগান দেয়া, গ্রান্টের অর্থ যোগাড় কিংবা পাণ্ডুলিপিতে সম্পাদনার দৃষ্টি বোলানোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমি যা জানি, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক সুখ্যাতি নির্মিত হয়েছে ছাত্র এবং সহকর্মীদের পরিশ্রমের দ্বারা! আমি জানি কিভাবে আমরা এই অসতোর সমাধান করতে পারি। হয়তো জার্নাল সম্পাদকরা কোনো একটি প্রবন্ধের প্রতিটি লেখকের কাছ থেকে সেখানে এককভাবে তাদের অংশগ্রহন কতটুকু সে বিষয়ে স্বাক্ষরিত হলফনামা দাবী করতে পারেন। কিন্তু এটি প্রসঙ্গক্রমে বলা, এই বিষয়টি এখানে উল্লেখ করার প্রধান কারণ হচ্ছে একটি পার্থক্যকে সুস্পষ্ট করা। হেলেনা ক্রোনিন (৫) অনেক কিছুই করেছেন প্রতিটি বাক্যকে উন্নত করার জন্য– প্রতিটি শব্দ– যেমনটি তার উচিৎ মনে হয়েছে, কিন্তু এই নতুন অংশের যৌথ লেখক হিসাবে খুব দৃঢ়ভাবে তিনি তার নিজের নাম সংযুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আমি গভীরভাবে তার প্রতি কৃতজ্ঞ, এবং দুঃখিত তার অবদানের প্রতি আমার এই স্বীকৃতি এখানে সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। আমি আরো ধন্যবাদ জানাই মার্ক রিডলী, মারিয়ান ডকিন্স এবং অ্যালান গ্রাফেনের প্রতি, বিশেষ কিছু অনুচ্ছেদে তাদের উপদেশ এবং গঠনমূলক সমালোচনার জন্য। থমাস ওয়েবস্টার, হিলারী ম্যাকগ্লিন এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের অন্যান্যদের প্রতি আমার ধন্যবাদ, যারা হাসিমুখে আমার খেয়ালী ইচ্ছা ও দীর্ঘসূত্রিতা সহ্য করেছেন।
রিচার্ড ডকিন্স (১৯৮৯)
পাদটীকা:
১. রোনাল্ড আইলমার ফিশার (১৮৯০-১৯৬২) আর এ ফিশার নামে তিনি পরিচিত, ইংরেজ পরিসংখ্যানবিদ ও জীববিজ্ঞানী, যিনি গণিত ব্যবহার করেছিলেন মেন্ডেলিয় জিনতত্ত্ব ও ডারউইনী প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণাটিকে সংশ্লেষণ করার জন্য, যা সাহায্য করেছিলেন বিবর্তনের নব্য ডারউইনীয় সংশ্লেষণের যা এখন পরিচিত মডার্ন ইভোশনারী সিনথেসিস হিসাবে।
২. উইলিয়াম ডোনাল্ড ‘বিল’ হ্যামিলটন (১৯৩৬-২০০০) বৃটিশ বিবর্তন জীববিজ্ঞানী, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা বিবর্তন তাত্ত্বিক হিসাবে তাঁকে চিহ্নিত করা হয়। হ্যামিলটনের সবচেয়ে বড় অবদান প্রকৃতিতে দৃশ্যমান কিন সিলেকশন ( একই জিন বহন কারীদের মধ্যে পারস্পরিক পরার্থবাদীতা) এবং অ্যালুটুইজিম বা পরার্থবাদেও জিনগত ভিত্তিটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা। এবং এই অসাধারণ অন্তর্দষ্টিটি পরবর্তীতে জিন-কেন্দ্রিক বিবর্তনীয় ধারণাটি সুসংগঠিত করেছিল। তাকে সোসিওবায়োজলজীর অগ্রদূত হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়, যে ধারণাটি পরে ই ও উইলসন জনপ্রিয় করেছিলেন। হ্যামিলটন সেক্স-রেশিও এবং বিবর্তন নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯৮৪ থেকে তার মৃত্যু অবধি তিনি অক্সফার্ডের রয়্যাল সোসাইটি রিসার্চ অধ্যাপক ছিলেন।
৩. জর্জ ক্রিস্টোফার উইলিয়ামস (১৯২৬-২০১০) আমেরিকার বিবর্তন জীববিজ্ঞানী, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক অ্যাট স্টোনি ব্রুকের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সুপরিচিত ছিলেন গ্রুপ সিলেকশন ধারণাটির ঘোরতর বিরোধী হিসাবে। তার গবেষণা ৬০ এর দশকে জিন-কেন্দ্রিক বিবর্তনের ধারণাটিকে সংগঠিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
৪. রবার্ট মার্শাল আক্সেলরড (১৯৪৩) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি সুপরিচিত তার সহযোগিতার বিবর্তন নিয়ে আন্তঃশাখা গবেষণায়।
৫. হেলেনা ক্রোনিন (১৯৪২): ডারউইনীয় দার্শনিক। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ডারউইন সেন্টার ও সেন্টার অব ফিলোসফি অব ন্যাচারাল অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্স এর সহ-পরিচালক। তার সুপরিচিত দুই বই: The Ant and the Peacock: Altruism 998 Sexual Selection from Darwin to Today (1991)
.
প্রথম সংস্করণের প্রাককথন
শিম্পাঞ্জি এবং মানুষ তাদের বিবর্তনীয় ইতিহাসের ৯৯.৫ শতাংশই ভাগাভাগি করে, তারপরও বেশীর ভাগ মানুষই শিম্পাঞ্জিদের বিকৃত এবং অপ্রয়োজনীয় একটি অদ্ভুত ব্যতিক্রম হিসাবে মনে করেন, আর সর্বশক্তিমানের কাছাকাছি পৌঁছাবার সিঁড়ির একটি ধাপ হিসাবে নিজেদেরকে দেখেন। কিন্তু বিবর্তন বিশেষজ্ঞের কাছে কখনোই বিষয়টি এমন হতে পারে না। নৈর্ব্যক্তিক মানদণ্ডের কোনো অস্তিত্বই নেই, যার উপর ভিত্তি করে অন্য কোনো একটি প্রজাতির উপর আমরা আরেকটি প্রজাতির শ্রেষ্ঠত দাবী করতে পারি। শিম্পাঞ্জি এবং মানুষ, টিকটিকি এবং ছত্রাক, আমরা সবাই প্রায় তিন হাজার কোটি বছর ধরে প্রাকৃতিক নির্বাচন নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছি। প্রতিটি প্রজাতির অভ্যন্তরে কিছু একক সদস্য অন্য সদস্যদের তুলনায় বেশী পরিমান সন্তান উৎপাদন করতে সক্ষম হয়, সুতরাং প্রজনন সফলদের বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্যাবলী (জিনগুলো) পরবর্তী প্রজন্মে সংখ্যায় আরো বৃদ্ধি লাভ করে। এটাই প্রাকৃতিক নির্বাচন: জিনদের নন-র্যানডোম (বা নির্বিকার বা এলোমেলো নয়) বৈষম্যমূলক বা পার্থক্যসূচক প্রজনন। প্রাকৃতিক নির্বাচনই আমাদের তৈরী করেছে, এবং এই প্রাকৃতিক নির্বাচনকেই আমাদের বুঝতে হবে যদি নিজেদের পরিচয়কে আমরা বুঝতে চাই।